ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

টিপু হত্যা

আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাসহ ৩৩ জন আসামি

স্টাফ রিপোর্টার
৬ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার
mzamin

মতিঝিল এলাকায় ভর্তি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে তাকে খুন করা হয়। গত বছর যখন টিপুকে শাহজাহানপুর এলাকার যানজটে খুন করা হয় তখন শুটারের এলোপাতাড়ি গুলিতে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডটি দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে। টিপুর স্ত্রী এই ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন। ১৪ মাস মামলার তদন্ত করে গতকাল ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট জমা দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩) ও মাসুম মোহাম্মদ আকাশ ওরফে শুটার আকাশ। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা, দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর, মতিঝিল এলাকার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, জাতীয় পার্টিসহ একাধিক নেতার নাম এসেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তদন্তে বের হয়েছে টিপু হত্যার মোট আসামির সংখ্যা ৩৪। তবে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তার নাম বাদ দিয়ে ৩৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তার নামও সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করা হবে চার্জশিটে।

ডিবি’র তদন্তে চার্জশিটে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ‘ঘাতক’ সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, ‘কিলার’ নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা। আসামিদের মধ্যে ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত বছরের ২৪শে মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পরে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৪), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯), ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২), রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব (৩১), সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (৪৪), সোহেল শাহরিয়ার (৪১), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬)।

চার্জশিটে ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এই হত্যকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন জিসান আহমেদ মন্টি, ফ্রিডম মানিক, আশরাফ তালুকদার, কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর, সুমন সিকদার ওরফে মুসা, মারুফ রেজা সাগর, সোহেল শাহরিয়ার, আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল। হত্যাকাণ্ডে সহায়তাকারীরা হলেন- মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু, আমিনুল, কামরুজ্জামান বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার, রিফাত, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে খাইরুল, জুবের আলম খান, এক্সসেল সোহেল, শামীম হোসাইন, ওরফে মোল্লা শামীম,  রানা মোল্লা,  মো. তৌফিক হাসান ওরফে বাবা ওরফে বিডি বাবু। টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন, মো. আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল, মারুফ রেজা সাগর, সোহেল শাহরিয়ার, মাহবুবুর রহমান, হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ, কামরুজ্জামান বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার, মোহাম্মদ মারুফ খান। অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করেছেন, সুমন সিকদার ওরফে মুসা, ইশতিয়াক আহম্মেদ জিতু, ইমরান হোসেন জিতু, রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব, ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ, মারুফ রেজা সাগর। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে শুটার আকাশ ও শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীমের নাম এসেছে। 

গতকাল ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। ১৪ মাস আগে তিনি খুন হন। আধিপত্য ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি খুন হয়েছেন। তবে টিপু হত্যায় যারাই জড়িত ছিলেন তাদের কারও রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যারাই সম্পৃক্ত বা টিপু খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকের নাম মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্ত কাজ শুরু করে। 

প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। টিপু একা খুন হননি। তাকে মার্ডার করতে আসা শুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিও। আমরা প্রায় ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। ৩৩ জন আসামির নামে চার্জশিট দাখিল করেছি। পলাতক রয়েছেন ৯ আসামি। হারুন বলেন, ঘটনার পরপরই শুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ভারত পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্য-প্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেছেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। সেজন্য কোনো ধরনের ভুল বা ত্রুটি না হয় সেজন্য তদন্তে সময় নেয়া হয়। 

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, আসামি মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম, সুমন সিকদার ওরফে মুসা, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল। আসামি সুমন সিকদার ওরফে মুসার জবানবন্দিতে নাম এসেছে, জিসান আহম্মেদ মন্টি, ফ্রিডম মানিক, আশরাফ তালুকদার, মারুফ আহমেদ মনসুর, কামরুজ্জামান বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার, সোহেল শাহরিয়ার, মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর, শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম, আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল, আমিনুল, মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু, রিফাত, খাইরুল ইসলাম ওরফে খাইরুল,  জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন, রানা মোল্লা, এক্সেসেল সোহেল, মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, উজ্জ্বল ও রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব। আসামি নাসির উদ্দিনের ওরফে মানিকের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা, সুমন সিকদার ওরফে মুসা, আবুল হোসেন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়েছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status