প্রথম পাতা
রাজস্ব সংগ্রহ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৪ জুন ২০২৩, রবিবার
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বিশাল আকারের এই রাজস্ব সংগ্রহ করা সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া বিশ্বে বিভিন্ন সংকটের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া। গতকাল ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি জসিম উদ্দিন এসব কথা বলেন। এ সময় ঢাকা চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার, এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, হাবিবুল্লাহ ডন, পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন, ২০৩১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছাতে দেশের অর্থনীতির আকার স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। এজন্য দেশের বাজেটের আকারও বাড়ছে। বাজেটের আকার ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৭৯ হাজার ৬১৪ কোটির তুলনায় সাড়ে নয় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রস্তাবিত ২০২৩-২০১৪ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ‘অবাস্তব নয়’ বলেও জানান জসিম উদ্দিন।
তবে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ করা সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে অত্যন্ত চাপের মুখে। এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা।
আর এবারের বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানান জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ এবং জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ডলার সংকট ও বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ সবকিছুর গতি নিম্নমুখী। অথচ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী।
বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরামর্শ দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়ানো। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যকর করে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করা জরুরি। এ উদ্দেশ্যে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইটি ও সফ্টওয়্যার খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানান জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই খাতে মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগ আয়করমুক্ত এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূর্ণ পরোক্ষ করমুক্ত করা অত্যাবশ্যক।
আর যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন। এজন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সুসমন্বয় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই করমুক্ত সীমা ৪ লাখ টাকা করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জসিম উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইল্স, লিফ্ট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, কিচেনওয়্যারসহ ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে নির্মাণখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জমির রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর আগের অবস্থায় রাখার জন্য প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, যথাযথ বিনিয়ােগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহতে রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সঙ্গে বাবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন। এজন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সুসমন্বয় রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করি। বাজেটের আকার বিবেচনায় নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরিবর্তে বাজেট বক্তৃতায় অনুচ্ছেদ ২২০-এ উল্লিখিত দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করা সমীচীন।
জসিম উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ২৪৮, ২৪৯ এবং ২৫০ নং অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কয়েকটি পণ্যে ১৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ, ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হয়েছে, যা মূসক আইনের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পণ্য এবং সেবা খাতে মূল্য সংযোজন ভিত্তিক একক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হলে খাত নির্বিশেষে সব পণ্য এবং সেবা খাত বিভিন্ন এস আর ও ভিত্তিক অসম করহার এবং জটিলতা থেকে রেহাই পাবে এবং কর ব্যবস্থা সহজ ও সরল হবে।