প্রথম পাতা
লাশের সারি হাসপাতালে আর্তনাদ
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা
৪ জুন ২০২৩, রবিবার
ভারতে এতদিন পর্যন্ত ২৪ বছর আগে, ১৯৯৯ সালে উত্তরবঙ্গের গাইসালে আসাম অব মেইল এবং ব্রহ্মপুত্র মেইলের মুখোমুখি সংঘর্ষটিকে সব থেকে বড় রেল দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হতো। ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল ওই দুর্ঘটনায়। শুক্রবার শালিমার, হাওড়া থেকে ছাড়া আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস, ডাউন। বেঙ্গালুরু- হাওড়া যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস ও একটি মালগাড়ির ত্রিস্পর্শযোগে ঘটা দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯৫ জন যাত্রী। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বালেশ্বর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে বাহানাগ বাজারের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় করমন্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে মালগাড়িটির। ছিটকে পড়ে বগিগুলো। করমন্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির ওপর। করমন্ডলের বেশ কিছু বগি আছড়ে পড়ে এর কয়েক সেকেন্ড আগে লাইনচ্যুত হয়ে পড়া যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসের কামরার ওপর। করমন্ডলের কামরাগুলো দেশলাই বাক্সের মতো দুমড়ে মুচড়ে যায়। যাত্রীদের কারও হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কারও পা। জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়াতে উদ্ধারকাজ দেরিতে শুরু হয়।
আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় বালেশ্বর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ও আরও দুটি হাসপাতালে। একের পর এক মৃতদেহ বের হতে থাকে করমন্ডল এক্সপ্রেসের কামরা থেকে। শনিবার সকালে মৃতের সংখ্যা ছিল দু’শ তেত্রিশ। দিন যত বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও ততো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন। চিকিৎসক ও শববাহী গাড়িও তিনি পাঠান। শনিবার তিনি নিজে হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। হাসপাতালে যান। আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। পাঁচ লাখ টাকা করে এককালীন দানের কথা ঘোষণা করেন মৃতদের পরিবারের জন্য। আগেই রেলমন্ত্রক ঘোষণা করেছিল মৃতদের পরিবারপিছু দশ লাখ টাকা অনুদানের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন দুই লাখ টাকা ও আহতদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিনভর পরিস্থিতি মনিটরিং করার পর বিকালে বালেশ্বর আসেন পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে। তিনিও দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে যান। এই করমন্ডল এক্সপ্রেসেই বাংলাদেশিরা চিকিৎসা করাতে ভেলোরে যান। আহতদের তালিকায় দুজন বাংলাদেশি আছেন বলে উপ-দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবারের দুর্ঘটনা ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এক কলঙ্ক রেখা হয়ে থেকে যাবে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ঘোষিত হয়েছে। দোষী কে বা কারা তা ধরা যাবে কী!