দেশ বিদেশ
সিলেটে ভোট নিরপেক্ষ চায় জাতীয় পার্টি
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
নির্বাচন কমিশন সিলেটে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনীত দু’প্রার্থীকে মঙ্গলবার শোকজ করেছে। নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করার কারণে তাদেরকে এ নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ পেয়েই নীরব জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। নোটিশের পর থেকে নগরে তাকে প্রচারণায় দেখা যায়নি। কিন্তু সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। গতকাল নগরের একাধিক স্থানে তাদের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এমনকি কমিউনিটি সেন্টারেও সভা করা হয়েছে। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিলেটের জাতীয় পার্টির নেতারা। ভোটের মাঠে দ্বৈতনীতি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও সব দেখে না দেখার ভান করছে। জাতীয় পার্টির নেতারা দাবি করেছেন- মঙ্গলবার দুপুরে তাদের হাতে নির্বাচন কমিশন থেকে আচরণবিধি ভাঙার নোটিশ এসেছে। ওই নোটিশপ্রাপ্তির পর থেকে তাদের দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল মাঠে নেই। অপর প্রার্থীদের দেখাদেখি তিনি মাঠে ছিলেন। বাবুল মাঠে না থাকলেও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান মাঠে নেমেছেন। তারা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নগরের বিভিন্ন এলাকায় সভা করেন। রাতে তিনি দক্ষিণ সুরমার কুশিয়ারা সেন্টারে মহানগরের আলেম-ওলামাদের নিয়ে সভা করেন।
এই সভায় নির্বাচন আচরণবিধি ভাঙার মতো আলোচিত ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দিনভর চালানো হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। এরমধ্যে ১৪ দলের বৈঠকে প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রাতেও একটি কমিউনিটি সেন্টারে সভা হয়েছে। এতে স্পষ্টত নির্বাচন আচরণবিধি না মানার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ থাকার পরও নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান নগরের ৩২ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে দিনভর গণসংযোগ চালিয়েছেন। হ্যান্ডমাইক দিয়ে তিনি বক্তৃতাও করেছেন। তার প্রচারণা রয়েছে অনেকটা প্রকাশ্যে। ফলে নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং মাঠ নিয়ে আশঙ্কা আছে জাতীয় পার্টির নেতাদের। দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচন আচরণবিধি মানছে। কিন্তু অন্যরা মানছে না। এটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এই অবস্থায় তারা সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে সার্বিক বিষয় অবগত করবেন।
তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিলেটে এখন ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর। দিন দিন তাদের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই অবস্থায় নিরপেক্ষ মাঠ না হলে ভোটের পরিবেশ থাকবে না। এতে সিলেটের মানুষ আশাহত হবে বলে জানান তিনি। এদিকে জাতীয় পার্টির বহুধাবিভক্ত নেতারা লাঙ্গলের পক্ষে সিলেটের ভোটের মাঠে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন নেতারা। সিলেটে ইতিমধ্যে রওশন এরশাদপন্থি নেতারা সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রওশন এরশাদপন্থি নেতারা জানিয়েছেন, তারা লাঙ্গলের পক্ষে মাঠে ঐক্যবদ্ধ। দলের প্রতীকের বিপক্ষে তাদের অবস্থান নেই। প্রার্থী কে সেটি তাদের দেখার বিষয় নয়। ধীরে ধীরে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতারাও ভোটে সরব হচ্ছেন। এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার। এদিন সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করবেন।
জাতীয় পার্টির সিলেটের নেতারা জানিয়েছেন, দু-এক দিনে মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় একটি সাংগঠনিক টিম সিলেটে আসবে। তারা সিলেটে অবস্থান করে প্রচার প্রচারণা পর্যবেক্ষণ করবেন। পাশাপাশি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিলেট-৩ আসনের একাধিকবারের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে দিয়ে দলের একটি সাংগঠনিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতারাও খুব শিগগিরই সিলেটে এসে প্রচারণায় নামবেন। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবার সিলেটের নির্বাচন সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন। নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি অতীতে সিটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জনসমর্থন পাচ্ছেন। এ কারণে সিলেটে নীরব ভোট বিপ্লবের আশা করছেন দলের নেতারা। ভোটাররা কেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ পেলে ভোট পড়বে লাঙ্গলে। এ কারণে সিলেট সিটিতে জয়ের সম্ভাবনাকেও তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। প্রতিকূল পরিবেশ থাকলেও জাতীয় পার্টি মাঠে সক্রিয় থাকবেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা।