দেশ বিদেশ
গণঅধিকারের আলোচনায় বক্তারা
ভোট চুরির প্রকল্প ভাঙতেই এই ভিসা নীতি
স্টাফ রিপোর্টার
১ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, সরকারের ভোট চুরির প্রকল্প ভাঙতেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ও বাংলাদেশের সংকট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে আর কেউ নির্বাচনে যাবে না। শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে ওয়াদা করেছিলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। কিন্তু সেবার দিনেও ভোট চুরি হয়েছে, রাতেও চুরি হয়েছে। আবারো একই সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা গোপনে কাজ সারতে পারদর্শী।
অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে। কিন্তু এটা খুবই লজ্জার। যারা হাসিঠাট্টা করছে তাদের দুই কান কাটা গেছে। যে সমস্ত দেশে নির্বাচন নিয়ে ভিসা নীতি প্রণয়ন হয়, সেগুলো নির্বাচনের পরে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনের ৭ মাস আগেই এসেছে। এতে বুঝতে হবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। এ জন্য তারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। নির্বাচনের সাত মাস আগেই তারা একটা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুইবার ভোট চুরি হয়েছে। ভোট চুরির প্রমাণ আর দরকার নেই। আমীর খসরু বলেন, কিছু লোক লোভ সামলাতে পারছেন না। আবার অনেকেই ভয়ে সরকারের পক্ষে কাজ করছেন। বিচারবিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য মাধ্যমের যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যেভাবেই যুক্ত থাকেন আটকে যাবেন। এসময় গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, দেশের বিরোধী দলগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাইলেও সরকার তা চায় না।
এ কারণেই বিরোধীদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে। কোরআন শপথ করে বললেও প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করি না। সভায় নুরুল হক নুর বলেন, আমরা একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। কিন্তু সরকার তা দিতে চাচ্ছে না। এই দাবিতে যখন আন্দোলন হচ্ছে তখন পুলিশ গুলি করছে, মামলা-হামলা করছে। অনেককে জেলে নিয়ে ইলেকট্রিক শক দেয়া হচ্ছে। এখানে যদি একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকে তাহলে দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। কিন্তু সরকার তা চাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যদি কোরআন শপথ করেও বলেন সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন, তাও বিশ্বাস করি না। সরকার দেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে খাদের কিনারায় নিয়ে এসেছে দাবি করে নুর আরও বলেন, আমেরিকার ৬ জন কংগ্রেসম্যান বাইডেনের কাছে বাংলাদেশিদের জন্য পিস কিপিং বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছেন। আজকে শেখ হাসিনার অবৈধ শাসনের কারণে কেন পিস কিপিং বন্ধ হবে? নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা হয় না।
দেশ সংকটে পড়লে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমাদের এখন নাইজেরিয়া, নিকারাগুয়ার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সভায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে আজ দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। ভিসা নীতিতে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এ দেশে কী ধরনের নির্বাচন হয়। সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়া ছিল সতর্কবার্তা। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা একটি বলিষ্ঠ অস্ত্র হতে পারে। গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকারিয়া পলাশের সঞ্চালনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মহসিন রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন, মানবজমিনের সিনিয়র রিপোর্টার তারেক চয়ন প্রমুখ।