বিশ্বজমিন
২০ বছর পর দুই বোনের দেখা
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ৩১ মে ২০২৩, বুধবার, ৪:০১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

২০ বছর জেলবন্দি পাকিস্তানের বহুল আলোচিত স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকী। অবশেষে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পেলেন ছোটবোন ডক্টর ফৌজিয়া সিদ্দিকী। আড়াই ঘণ্টা সময় পেলেন তারা। ২০ বছর পর এক বোন আরেক বোনের সাক্ষাৎ পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন। আফিয়া সিদ্দিকী বোনের কাছে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব শেয়ার করেন। তাদের এই সাক্ষাৎ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত ফেডারেল মেডিকেল সেন্টার, কার্সওয়েলে। বুধবার টুইটারে এসব তথ্য শেয়ার করেছেন জামায়াতে ইসলামির সিনেটর মুশতাক আহমেদ খান। তিনি আরও জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার আবারও ডক্টর আফিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের শিডিউল আছে। এ সময় প্রথম সারির মানবাধিকারকর্মী ক্লাইভ স্ট্যাফোর্ড-স্মিথ ও তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, গুয়ানতামো বে কুখ্যাত কারাকারে আটক থাকা আবদুল রাব্বানি এবং আহমেদ রাব্বানিকে মুক্ত করতে সহায়তা করেছেন ক্লাইভ স্ট্যাফোর্ড-স্মিথ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও টিভি।
মুশতাক আহমেদ খান টুইটারে লিখেছেন, বৃহস্পতিবার ডক্টর ফৌজিয়া, ক্লাইভ স্ট্যাফোর্ড-স্মিথকে সাথে নিয়ে ড. আফিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি আমিও। টুইটে তিনি কারাবন্দি আফিয়ার দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছেন। এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করার জন্য আলোচনা ও সাক্ষাতের পথ বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা করেন। এ ছাড়া তিনি ড. আফিয়ার মুক্তির দাবিতে জনগণকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
মুশতাক আহমেদ খান লিখেছেন, ২০ বছর পরে ছোটবোনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারলেন ড. আফিয়া। তা স্থায়ী হয়েছিল আড়াই ঘন্টা। তবে দুই বোনকে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরতে দেয়া হয়নি। তারা করমর্দন করতে পেরেছেন। এ সময় ড. আফিয়ার বাচ্চাদের ছবি তাকে দেখাতে অনুমতি দেয়া হয়নি। দুই বোনের মধ্যে এই সাক্ষাৎ হয়েছে জেলখানার একটি রুমে। দু’জনের মাঝখানে ছিল মোটা কাচের বেষ্টনী। এ সময় একটি সাদা স্কার্ফ এবং জেলখানার খাকি পোশাক পরা ছিলেন আফিয়া। মুশতাক আহমেদ খান আরও লিখেছেন, সাক্ষাতের প্রথম এক ঘন্টা ড. আফিয়া জেলখানায় প্রতিদিন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, সব সময় তিনি নিজের মা ও সন্তানদের কথা ভাবেন। তবে তার মা মারা গেছেন এ খবর জানেন না ড. আফিয়া। জেলখানায় তার ওপর হামলা হওয়ায় সামনের দাঁত ভেঙে গেছে। মাথায় ইনজুরির কারণে তার শুনতে সমস্যা হয়।
ড. আফিয়া সিদ্দিকী পাকিস্তানি বিজ্ঞানী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে হত্যা চেষ্টা ও হামলার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। এ মামলায় ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল কোর্ট তাকে ৮৬ বছরের জেল দেয়। আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম নারী হিসেবে তাকে সন্দেহ করে। তবে কখনোই অভিযুক্ত করা হয়নি। ১৮ বছর বয়সে ড. আফিয়া সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান বোস্টনের অভিজাত এমআইটি’তে পড়াশোনা করতে। পরে তিনি ব্রানডিস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নায়ুবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জন করেন। কিন্তু ২০০১ সালের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামিক সংগঠনগুলোতে অর্থ দান করার কারণে এফবিআইয়ের রাডারে ধরা পড়েন। ১০ হাজার ডলার মূল্যে নাইট-ভিশন চশমা ও বই কেনার সঙ্গে যুক্ত তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই আল কায়েদায় যোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তান ফিরে তিনি খালিদ শেখ মোহাম্মদ পরিবারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদ। ২০০৩ সালে তিনি তিন সন্তানকেসহ করাচিতে নিখোঁজ হয়ে যান। এর ৫ বছর পরে পাকিস্তানের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিবেশী আফগানিস্তানে উদয় হন। দক্ষিণের গজনি প্রদেশে স্থানীয় বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে।