ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

ওয়েবিনারে বক্তারা

মার্কিন ভিসা নীতি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৩, সোমবার
mzamin

সম্প্রতি ঘোষিত বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে  প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা এখন বলছেন এই ভিসা নীতি সমস্যা না তারা আসলে না বুঝে বলছেন। আর সমস্যা না হলেই বরং জাতি উপকৃত হবে। কারণ সামনে জাতীয় নির্বাচনে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে ভিসা নীতি কোনো প্রভাব ফেলবে না। আর এর অর্থ হলো ভিসা নীতির প্রভাবেই ভোটটা সুষ্ঠুু হতে পারে। 

গতকাল ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশ প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, আমার মনে হয় মার্কিন ভিসা নীতি ওয়ার্নিং হিসেবে নেয়া হয়েছে। আমার অনুমান নির্বাচনের আগে আরও পদক্ষেপ আসবে। তিনি বলেন, এখন যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসতে চায়, কিন্তু যারা সরকার বা সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠনে যুক্ত তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। গত বছরগুলোতে ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এমন এক জায়গায় যেখানে বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এটা হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে মূলত কোনো ম্যান্ডেট ছাড়া একটা সরকার ক্ষমতায় আছে।

বিজ্ঞাপন
সেহেতু তারা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে দেশকে এই পরিস্থিতিতে ফেলেছে। 

তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে ভিসা পলিসি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে তাহলে আপনাদের সঙ্গে আমি একমত না। একটা ভিসা পলিসি না সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে, না গণতন্ত্র আনতে পারে। এটা ম্যাসেজ হতে পারে, এটা সতর্ক বার্তা হতে পারে।

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের কাছে আমদানির চেয়ে রপ্তানির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেশটি থেকে কতোই বা জিনিস কিনি বা কেনার সামর্থ্য রাখি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  রেমিট্যান্স এর একটা বড় সোর্স এই দেশটি। এ ছাড়া আমাদের রপ্তানির জন্য বড় একটি জায়গা। তিনি বলেন, সবাই বলছে কোনো সমস্যা না। সমস্যা না হলে তো সমস্যা না। যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, তাহলে তো আসলেই কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। মূল জিনিসটা হলো মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং যাকে ভোট দিবে তাকেই বিজয়ী হিসেবে দেখা যাবে। তবে এটা ঘটার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্ভব নয় একথা বলে তো লাভ নেই। এক সময় তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না, তারপর প্রয়োজনে এই সরকার ব্যবস্থা এসেছে। যদি আবারো প্রয়োজন হয় তাহলে আবারো আসতে কোনো সমস্যা নাই। আইন তো মানুষই তৈরি করে। তিনি বলেন, ভিসা নীতি সর্বক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। আজ থেকে ২০ বছর আগে হলে এই নীতি তেমন প্রভাব ফেলতো না। কারণ তখন মানুষের আমেরিকায় যাওয়ার সামর্থ কম ছিল। এখন আমরা দেখতে পায় যথেষ্ট নিচ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ছোট রাজনৈতিক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। তাদের ২০ বছর আগে তেমন স্বার্থ না থাকলেও এখন আছে। কাজেই তিনি যে এখন যেয়ে নির্বাচনে যেয়ে অনিয়ম করার চেষ্টা করবে তখন তাদের মাথায় আসবে যে আমি তো সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে এসেছি সম্পদ রয়েছে এগুলোর কি উপায় হবে। এই ভিসা নীতি একেবারেই কাজে আসবে না এটি কিন্তু বলা যাবে না। 

তিনি বলেন,  নির্বাচনের এখনো ৭ মাস বাকি। দেখার বিষয় সরকার কীভাবে এটা সমধান করে। ভারতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অনেক ঘনিষ্ঠ।  ভারত তার স্বার্থে চাইবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক। ভারত তার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে এখানে যা কিছু পরিবর্তন হোক না কেনো। ভারতের সেই সামর্থ্য আছে। বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও ভারতের প্রয়োজন আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান বলেন, পশ্চিমাদের কাছে এই সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী আর্গুমেন্ট ছিল মৌলবাদের বিরুদ্ধে তারাই হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সরকার। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের যে সকল অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটেছে সেগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিহত করতে পেরেছে। কিন্তু এই সরকারের একমাত্র ব্যবস্থা যারা মৌলবাদকে ঠেকাবে। সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আর গ্রহণ করছে না। 

তিনি বলেন, এখন শোনা যাচ্ছে আমলা সাহেব তার পাশের রুমের আরেক আমলার কাছে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আলোচনায় লেগে গেছে যে এটা কি হলো। এখন আমার কি হবে, আমার পরিবারের কি হবে। স্ত্রী তো আমার এই পথে যেতে দিবে না। 
তিনি বলেন, ভারত চায় এই সরকার টিকে থাকবে। ভারতের নীতিতে পরিবর্তন আসবে না। যদি পরিবর্তন হতো তাহলে সম্প্রতি ওদের ফরেন মিনিস্টার সফরে আসতেন না। 

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক ডা. জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, ভিসা নীতির সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকা প্রশাসন যেই ধরনের পলিসিগুলো নেয়ার চেষ্টা করছে তারই একটা এক্সটেন্ডেড অবস্থা এখানে আমরা বলতে পারি।  মূল কারণ হলো, চীনের প্রভাব বিস্তার রোধ করা। চীনের বৈশ্বিক প্রভাব কমাতে হলে সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ছড়িয়ে দিতে হবে সেটি যুক্তরাষ্ট্র করছে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন তা করেনি। ‘নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন ফ্রাই ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলসের ফেলো সাইমুম পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খানও আলোচনায় অংশ নেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status