দেশ বিদেশ
নিউক্যাসলের ‘ফাইভ ডায়মন্ডস’
২৮ মে ২০২৩, রবিবার
মেয়েদের সঙ্গে মাহতাব মিয়া
পাঁচ বোন। সমৃদ্ধ পরিবার থেকে উঠে আসা ওরা আজ কেউ ডাক্তার, কেউ আইনজীবী, ডেন্টিস্ট এবং অ্যাকাউন্ট্যান্টদের অনুপ্রেরণা। নিউক্যাসলের এই মাহতাব বোনেরা ‘ফাইভ ডায়মন্ডস মেন্টরশিপ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী অসহায় তরুণদের সাহায্যার্থে সারা দেশে কর্মশালা চালাচ্ছে। ‘ফাইভ ডায়মন্ডস’ যার বাংলা অর্থ ‘পঞ্চরত্ন’ অর্থাৎ ‘পাঁচটি হীরা’। পাঁচ মেয়েকে বাবা আদর করে এই নামে ডাকতেন। শহরের গোসফোর্থ এলাকায় বেড়ে ওঠা এই বোনদের এখন গোটা যুক্তরাজ্যের মানুষ চেনে। তাদের বাবা একটি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতেন, সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই মেয়েদের প্রাইভেটে পড়াশোনা শেখানোর ব্যবস্থা করেন। বাবা চাননি মেয়েদের ক্যারিয়ারের পথে কোনো বাধা আসুক।

পাঁচ বোনের মধ্যে একজন আজ ম্যানচেস্টারের নামকরা ডেন্টাল সার্জন ডা. সুরিতা মাহতাব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা অনেক বিদ্যার্থীকে শিক্ষার জন্য সংগ্রাম করতে দেখি। আমরা চেষ্টা করি তাদের সাহায্য করার, যারা আমাদের মতো ভাগ্যবান নন।’ ব্যারিস্টার সুমিতা মাহতাব শেখ তাদের কর্মশালায় সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন ‘যে শিক্ষার্থীরা ছোট থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি তাদের ওপর আমরা বিশেষ মনোযোগ দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজে তাদের পাঠানো। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সেই সুযোগ দেয়া যা পেয়ে আমরা বড় হয়ে উঠেছি।’

পাঁচ বোনের আরেক বোন ম্যানচেস্টারের একজন ডেন্টাল সার্জন ডা. কবিতা মাহতাব শাহ। তিনিও বলেছেন- ‘কেবলমাত্র যাদের অর্থ আছে তাদের ছেলেমেয়েরাই উচ্চ পেশায় আসবে- এই ধারণাটাকে আমরা ভুল প্রমাণ করতে চাই।’ কবিতার মতে, ‘আমার মনে হয় যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম তখন অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মা ছিলেন যারা ডেন্টিস্ট। তাদের চলার পথ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি মনে করি আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপনার বাবা একজন দাঁতের ডাক্তার, মা একজন দাঁতের ডাক্তার কিনা সেদিকে কোনো মনোযোগ দেয় না। তারা আপনাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখে, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে না।’ নিউক্যাসলের ফ্রিম্যান হাসপাতালের একজন কনসালটেন্ট অনকোলজিস্ট ডা. নাজিবাহ মাহতাব আশা করেন যে, একদিন তার ছাত্ররা এই অঞ্চলের হাসপাতালে কাজ করবে। তিনি বলেন- ‘আমাদের কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা এসে বেশ উত্তেজিত এবং আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছেন। এমনকি অল্প বয়সেও। কর্মশালায় নানা কাজে তারা নিজেদের নিযুক্ত করেছেন ।

তারা যেখানে পড়তে চায় আজ সেখানেই যেতে পারে, যা আমাদের কাছেও বড় চ্যালেঞ্জ।’ ৫ বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট তানভীর মাহতাব আহমেদ, এসেক্সের একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তিনি বলেছেন- অন্যদের সাহায্য করার জন্য তাদের বোনদের এই অটুট বন্ধন ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তানভীর জানান, ‘আমরা শুধু ৫ বোন ছিলাম না, ছিলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা সবাই বিবাহিত এখন বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে এই বন্ধন আজও অবিচ্ছেদ্য।’ ৫ মেয়েকে নিয়ে আজ গর্বিত বাবা মাহতাব মিয়া। মেয়েদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাবা বলেন- ‘তারা হয়তো সৌভাগ্যবান ছিল, কিন্তু আজ তারা সর্বহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছে। আমি চাই তারা সারা জীবন এভাবেই মানুষের জন্য কাজ করে যাক।’ মানুষ সবার আগে নিজের জন্য ভাবে, কিন্তু পরের জন্য ক’জনের ভাবার সময় আছে? নিউক্যাসলের এই ‘ফাইভ ডায়মন্ডস’ সত্যিই হীরের থেকেও দামি। উল্লেখ্য যে, মাহতাব মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে। প্রায় ৬০ বছর আগে তিনি বিলেতে পাড়ি জমান।
সূত্র :itv.com