প্রথম পাতা
মার্কিন ঘোষণার প্রভাব, না অন্য হিসাব?
রাজনৈতিক ভাষ্যকার
২৭ মে ২০২৩, শনিবার
ভোটের গাজীপুর মডেল। কেউ বলছেন, মিশ্র। কারও মতে জনআকাঙ্ক্ষার জয়। বিক্ষুব্ধ, হতাশ ভোটাররা তাদের জবাব দিয়েছেন। বহুদিন হয় তারা কেন্দ্রে যান না। অবাধ এবং নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। গাজীপুরেও যে পুরোটা পেরেছেন তা নয়। সব ভোটার কেন্দ্রে ফেরেনওনি। বাধা ছিল ভোটের আগেই। ছিল ভয়-ভীতি।
ভোটের গাজীপুর মডেলের কিছু বৈশিষ্ট্য এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে।
১. শুরুতে ঋণখেলাপির অভিযোগে ভোটের লড়াই থেকে ছিটকে যান জাহাঙ্গীর আলম। এমনটা হবে হয়তো আগেই আঁচ করেছিলেন তিনি। যে কারণে নিজের মা জায়েদা খাতুনকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রেখেছিলেন।
২. নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের প্রতিপক্ষ অনুসরণ করে পুরনো মডেল। তার প্রচারণায় হামলা হয়। তার কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ভোটের রাতেও তিনি এজেন্টদের আটকের অভিযোগ করেন। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় ভোটের দিন বেশির ভাগ কেন্দ্রেই তার মায়ের কোনো এজেন্ট নেই।
৩. ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ। কোথাও তেমন কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। ভোটের দিন কাউকে বাধা বা হামলার ঘটনাও ঘটেনি। যদিও ভোটের আগে কয়েকদিনে বাধার ঘটনা দেখা যায়।
৪. ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন অনেকটাই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।
৫. ইভিএম-এ ভোট গণনায় দীর্ঘ সময় লাগা নিয়ে এবারও নানা গুঞ্জন ও প্রশ্ন দেখা যায়।
৬. ভোটের আগের রাতে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা ভোটারদের কিছুটা হলেও কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
৭. শাসক দল বিরোধী বা শাসক দলের প্রতি ক্ষুদ্ধ ভোট পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের প্রতীকে।
৮. ভোটের লড়াইটি আসলে হয়েছে আজমত উল্লা বনাম জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে।
৯. দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ নির্বাচন সম্ভব অন্তত ভোটের দিন গাজীপুরে সেটি দেখানোর চেষ্টা ছিল।
ভোটের পর জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা জায়েদা খাতুনের প্রতিক্রিয়াও নজর কেড়েছে। তবে সে আলোচনা পরে। এর আগে পুরনো দিনে কিছুটা চোখ রাখা যায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর আলমের উত্থান অতিদ্রুত এবং বিস্ময়কর। গত সিটি নির্বাচনে পুরো দলের সমর্থন ছিল তার প্রতি। মেয়র হওয়ার পর গাজীপুরে তিনি তার একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করে বিপাকে পড়েন তিনি। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নেমে আসে বিপর্যয়। বহিষ্কার হন দল থেকে। হারান মেয়র পদ। তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। একপর্যায়ে ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার সুযোগ পান। তবে মেয়র পদে আর ফেরা হয়নি। এবার আশা করেছিলেন দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তবে তার মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল বিভক্ত। অন্তত দুইজন প্রভাবশালী নেতার সমর্থন ছিল তার প্রতি। তবে আরেকটি অংশ তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আর মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পান আজমত উল্লা। যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ত্যাগী এবং পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।
মনোনয়ন না পেলেও সুতার ওপর হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন জাহাঙ্গীর আলম। একদিকে মেয়র পদ অন্যদিকে নিজের আরও বড় ভাগ্য বিপর্যয়। ডাক পান দুর্নীতি দমন কমিশনেও। তবে পুরো সময় তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন দক্ষতার সঙ্গে। গেল কয়েক বছরে গড়ে ওঠা প্রতিপত্তি কাজে লাগান। আওয়ামী লীগ কর্মীদের একটি অংশকে নিজের দিকে টানেন। আওয়ামী লীগের সহানুভূতি পাওয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যান। পুরো পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আনার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, আজমত উল্লার পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ সবসময় তৎপর থাকলেও স্থানীয় কর্মীদের তিনি টানতে পারেননি। সর্বশেষ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে মার্কিন ভিসা বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের এমন ঘোষণার পর গাজীপুরে নির্বাচনী পরিবেশ কিছুটা হলেও বদলে যায়। গত কিছু নির্বাচনের তুলনায় এ নির্বাচনে ভোটের হার বেশ বেশি। প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, মার্কিন ঘোষণার পরপরই অনেকে ভোট দিতে উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন।
ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা জায়েদা খাতুন। জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, নৌকা জিতেছে, ব্যক্তি হেরেছেন। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জায়েদা খাতুন। জয়ের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি নগরের বাসিন্দাদেরও শুভেচ্ছা জানান। জায়েদা খাতুন বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। আমি আমার ভোটের হিসাব পেয়েছি। এই জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে।’ তিনি আরও বলেন- এই বিজয় আমি গাজীপুরবাসীকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেবো।’
গাজীপুরের ভোটের বার্তা পরিষ্কার আবার পরিষ্কার নয়। এখানে সক্রিয় ছিল অনেক হিসাব। এমনিতে আন্দোলনের রাজনীতিতে ঢাকার প্রবেশ মুখ হিসেবে গাজীপুরের গুরুত্ব অনেক। সেই গুরুত্ব বিবেচনাতেই আলোচিত হবে জাহাঙ্গীর আলমের ঘরে ফেরার বিষয়টি। তবে জাতীয় রাজনীতিতে এটি মুখ্য কোনো ইস্যু নয়। বরং নির্বাচন নিয়ে মার্কিন ঘোষণার প্রভাব কতদূর যায় সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে পর্যবেক্ষকদের।
পাঠকের মতামত
সিটি কর্পোরেশনের দিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনা করা ভুল হবে। জাহাঙ্গীর সাহেব আওয়ামী লীগেরই একজন, নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের মা জিতে নাই বরং জাহাঙ্গীর সাহেবই জিতেছেন। ভোটের আগের দিন আমিরিকার ঘোষনা আসার কারণে প্রশাসনের আওয়ামীরা যারা নৌকাকে জিতিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর ছিল তারা গনভবন থেকে পাওয়া আগেকার সিগন্যাল কার্যকর করতে ভয় পেয়েছে বৈকি। গনভবনও জানতনা যে আমিরিকার ৩রা মে, ২০২৩ দেয়া ঘোষণাটি গাজীপুর নির্বাচনের আগের রাতেই জন সম্মুখে প্রকাশ করে দিবে ফলে ভোট ডাকাত প্রশাসন বিবেচনা করেছে যে, এই নির্বাচনে নৌকা + ঘড়ি = আওয়ামী লীগ এর প্রতিপক্ষ হচ্ছে হাতপাখা সুতরাং নির্বাচনে নৌকা+ঘড়ি= আওয়ামী লীগ জিতেছে। আমিরিকার ঘোষণা কিছুটা কাজ করলেও গাজীপুরে আওয়ামী লীগ জিতেছে।
গাজীপুর নির্বাচন হলো আঃলীগের অভ্যন্তরিন খেলা বলে আমার মনে হলো, কারণ নির্বাচন হলো বিরোধীদল ছাড়া। মার্কিন ভিসা নিতির মুখে আঃলীগ কিছু তো বলতেই হবে এই জন্য জনাব আজমত উল্যা কে করবানি দিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেয়া পুরনো কৌশল নিয়েছে। তবে জনগণ কে এত বোকা ভাবা ঠিক নয়।
দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এটাই আওয়ামী লীগ এখন প্রমান করার চেষ্টা করবে । আর সেটা করতে গিয়ে যদি আরো দু-একটি সিটি মেয়রের পদ হারতে হয় সেটাও তারা করতে পারে । আর তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করবে তাদের ঔষধ কাজে লেগেছে।
আমার মনে হয় মার্কিন ঘোষণার প্রভাব ছিলো। আওয়ামী লীগ এই ঘোষনাকে পাত্তা না দিলেও নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা এখন থেকে সাবধান হয়ে যাবে । কারন মার্কিন ঘোষনা তাদের বেলায়ও প্রযোজ্য। প্রশাসন ও পুলিশ যদি নিরপেক্ষ থাকে এ সরকারের পক্ষে কারচুপি করে জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
জায়েদা খাতুন এবং জাহাঙ্গীর আলম যেভাবে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেন আমরা ঠিক বুঝলাম না এটা কি? তার মানে আওয়ামীলীগ নিজেরাই প্রতিপক্ষ সেজে নির্বাচন করলেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল দেখানোর চেষ্টা করলেন। দারুণ আপনাদের স্ট্রাটেজি কে বুঝবে।
জেতার পর জাহাঙ্গীর ও তার মায়ের বক্তব্যে বোজা যায় এটা বিদেশিদের দেখাতে সরকারিভাবে মাস্টার প্ল্যানের অংশ যা সম্পূর্ণ সাজানো পাতানো নির্বাচন ছিলো!
সব আওয়ামী নাটক, কোন ছাড় নয়। সহিংসতা ছাড়া কঠোর নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
সরকারের ঘরেই সর্বনাশের বসবাস,বিএনপিবিহীন ভোটেও হার,
গাজীপুরের ভোটের বার্তা পরিষ্কার আবার পরিষ্কার নয়।
ভোটের আগের দিন মি: ব্লিন্কেন-এর টুইটা অনেক ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করেছে। দেশের সকল মানুষ (আ: লীগ, বিরোধী দল ও আমজনতা) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ হলে আ: লীগের রেজাল্ট ২০০৮-এর বিএনপির রেজাল্টের মতই হবে। এটাই বাস্তবতা।
আজমত উল্লাহর পরাজয়ে আওয়ামী লীগ বেজায় খুশি।
বিএনপির কেউ নির্বাচিত হলে মান্নানের জেল খাটার পরিনিতি ভোগ করতে হত।গাজীপুর হল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন। স্যাংশনের ভয়ে প্রশাসন নিরপেক্ষ হয়েছে কারণ বেশির ভাগ আমলা,পুলিশের ছেলেমেয়ে, টাকা বাবাদের দেশে রেখেছে। আওয়ামী লীগ তাদের পাচার করতে দিয়েছিল।ফাদে পড়বে সব লুটেরাদের লীগ।বাংলাদেশের নতুন দল হল আওয়ামী লুটেরা লীগ। এরা রাস্ট্রোদ্রোহী।
ভোটের আগের রাতে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা ভোটারদের কিছুটা হলেও কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কেন__ ওরা সব ভোটারা কি এমেরিকা যাবেনা কি -- কি সব আল ছনা করেন আর লিখেন বলেন -বাংলাদেশ টা কে কি এখনো অন্যের উপর নিরবর ভাবেন আপনারা ------_-----_----
যারা গোড়া আওয়ামী লীগার তারা কেহই জায়েদা খাতুনকে ভোট দেন নাই। বিএনপির কেন্ডিডেট না থাকায় তাদের সমর্থকগন ভোট দিয়েছে জায়েদা খাতুনকে। As a result Zayeda khatun win the race. তবে ভিসা নিতি যে খুবই কাজ করেছে সেটা বলতেই হবে।
ছায়া -নতুন মুখের বিজয় ! আগাম শুভেচ্ছা ! বাংলাদেশের জয় হবে।
সবই ভাঁওতাবাজি এটা দেখিয়ে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা - সবাই দেখো দলিও সরকারের অধিনে সুষ্ট নির্বাচন হয় যেন জিলাপি বিতরন চলছে দলে দলে যোগদান করো। আরে ভাই জিতার পরেই জাহাংগির বাদশা কইছে শেষ পর্যন্ত নৌকারই জয় হইছে এটাই আসল কথা।জাতিয় নির্বাচনে পরয়জনে নৌকারই চারজন চার মারকায় দাঁড়াবে এবং একজন জিতবে পরে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবে।ঘরের একটা পুলাপান দুষটামি করলে কি তারে ত্যাজ্যপুতরো করে দেয় ? না শাসন করে ফিরাইয়া নেয়? দেখবেন জাহাংগির বাদশাও দুইদিন পরে গাজিপুরের মাটি নৌকার ঘাঁটি স্লোগান দিয়ে আম্মার কাছে ক্ষমা চাইয়া জয়েন করছে তার থেকে বড় সমরাট বাহাদুররা জেল থেকে এখন আম্মার আঁচলের নিচে আশরয় নিছে না ?একটা বড় পরিবারে কত কিছু হয় সব কি ধরতে আছে? খেলা দেখতে থাকেন আমেরিকার বাপেরাও এইসব বুদ্ধির খেলা দেখে নাই সাদারা এইসব প্যাঁচ বুঝতে অনেক সাদা নারীর এই দেশে গর্ভবতি হইতে হবে তাইলে যদি আম্মার খেলা বুঝতে পারে।
এই নির্বাচন আওয়ামীলীগের খেলার অংশ
The new US visa policy makes a dent in the mindset of the election officials therefore they didn't directly involved in the election engineering. The inclusion of the judiciary in the new US visa policy makes the judicial tyrants at bay and it helps. However, people should have no illusion that the national election will be free and and fair under this government. A free, fair and acceptable election requires a comprehensive package and in today's Bangladesh context, a neutral government is the key requirement.
যে যতই হিসাব-নিকাশ করুন শেষকথা ঐ নৌকাই ভরসা। নৌকা ছাড়া উপায় নাই,শেখ হাসিনার বিকল্প নাই।