রকমারি
বিদেশিনী বৌকে দেখতে ভারত থেকে ইউরোপে সাইকেলে পাড়ি
মানবজমিন ডিজিটাল
(৩ মাস আগে) ২৬ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

প্রেম কোনো দেশ মানে না। কোনো সীমানা মানে না। সে কথাই আরো একবার প্রমাণ করলেন ডঃ প্রদ্যুম্না কুমার মহানন্দিয়া। চার মাস ধরে সাইকেল চালিয়ে সুইডেনে পৌঁছে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করলেন। গল্পটা শুরু ১৯৭৫ সালে, পেশায় চিত্রশিল্পী মহানন্দিয়া দিল্লির আর্ট কলেজ থেকে পড়াশোনা করছিলেন। সংসারে দারিদ্র থাকা সত্ত্বেও চিত্রশিল্পী হিসেবে একটু একটু করে নিজের পরিচিতি তৈরী করছিলেন মহানন্দিয়া। মহানন্দিয়ার হাতের সেই জাদুর কথা কোনোভাবে পৌঁছে গিয়েছিলো সুইডেনে। মহানন্দিয়ার কথা জানতে পেরে তাঁর কাছে একটি পোর্ট্রেট বানানোর জন্য ভারতে এসেছিলেন শার্লট ভন শেডভিন। সেখান থেকেই শুরু হয় এই প্রেমকাহিনী। মহানন্দিয়া এবং শার্লটের গল্প শুনে আপনিও নতুন করে প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন।
মহানন্দিয়া বিবিসিকে বলেন- ''আমরা প্রথম দর্শনেই একে ওপরের প্রেমে পড়েছিলাম। আমরা চুম্বকের মতো একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম।'' ততদিনে শার্লটের ফিরে যাবার সময় উপস্থিত। দুজনেই তখন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। মহানন্দিয়া বিবিসিকে বলেন, "আমার বাবার সাথে যখন সে প্রথম দেখা করতে এসেছিলো তখন সে শাড়ি পরেছিল। আমি এখনও জানি না কিভাবে সে সবটা সামলেছিল। আমার বাবা এবং পরিবারের আশীর্বাদে আমরা আদিবাসী ঐতিহ্য মেনে বিয়ে করি।''
মহানন্দিয়া সেই সময়ে শার্লটের সাথে যেতে পারেননি কারণ তাঁকে তার পড়াশোনা শেষ করতে হতো। দম্পতি চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন। অবশেষে, এক বছর পর, তিনি তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পকেটে তখন বিমানের টিকিট কেনার মতো টাকা ছিলো না নেই। তাই, মহানন্দিয়া একটি সাইকেল কেনার জন্য নিজের সব কিছু বিক্রি করে দেন। তিনি চার মাস সাইকেল চালিয়ে সুইডিশ শহর বোরাসে পৌঁছান। যাত্রাকালে তিনি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ক অতিক্রম করেন। পথে তার সাইকেল বেশ কয়েকবার ভেঙ্গেও যায় এবং তাকেও না খেয়েও থাকতে হয়েছে বেশ কয়েকদিন। মহানন্দিয়া ১৯৭৭ সালের ২২ শে জানুয়ারি যাত্রা শুরু করেন এবং২৮ মে ইউরোপে পৌঁছান। তিনি প্রতিদিন প্রায় ৭০ কিমি সাইকেল চালাতেন। কঠোর পরিশ্রমের পর অবশেষে আসে সুখের দিন। এই দম্পতি আনুষ্ঠানিকভাবে সুইডেনে বিয়ে করেছেন এবং এখন তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। পিকে মহানন্দিয়া এখন শিল্পী হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এতদূরে থাকলেও মহানন্দিয়া এবং শার্লটের প্রেমে কোনওদিন ভাঁটা পড়েনি।
যদিও মহানন্দিয়ার মতে, ''সাইকেল চালিয়ে ভারত থেকে সুইডেনে যাবার বিষয়টি শুনলে অনেকে আশ্চর্য হয়ে যান। তবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। আমার কাছে টাকা ছিলো না। কিন্তু আমাকে শার্লটের সঙ্গে দেখা করতেই হতো যেনে তেন প্রকারেন। তাই সাইকেলকেই আমি ভালোবাসার কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিই।''
সূত্র : টাইমস নাও