ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে ক্ষমতায় চায় না

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ মে ২০২৩, বুধবার
mzamin

যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমার কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না, আমি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছি, সেটা তারা হয়তো গ্রহণ করতে পারছে না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সফররত অবস্থায় বিবিসি’র ইয়ালদা হাকিমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন সরকারপ্রধান। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচার বহির্ভূত হত্যা, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র এবং রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। জানান, বাংলাদেশে গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। নাকচ করেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অটোক্রেসি বা একনায়কতন্ত্রের ব্যবস্থা গড়ে ওঠার অভিযোগও।  র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাহিনীর ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা তাদের পরামর্শেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

তাদের সকল প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল। যেভাবে তারা বাহিনীটাকে তৈরি করেছে, তারা তো সেভাবেই কাজ করছে বলে আমার বিশ্বাস। তাহলে কেন তারা এই নিষেধাজ্ঞা দিলো? এটা আমার কাছেও বিরাট এক প্রশ্ন। তিনি বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের যেসব নম্বর তারা উল্লেখ করেছে, সেগুলো তারা প্রমাণ করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেনি। কারণ আমরা প্রমাণ চেয়েছিলাম, সেগুলো তারা পাঠিয়ে দিক, আমরা তদন্ত করে দেখবো। এ সময় ডয়েচে ভেলের তথ্যচিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে সরকারপ্রধান বলেন, আমি জানি না তারা কীভাবে এটা করেছে, কিন্তু আমেরিকায় কী ঘটছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া। তারা যেসব অভিযোগ করেছে, আমরা তাদের কাছে প্রমাণ চেয়েছিলাম। তারা দেয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা একটা খেলার মতো।

এটা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়, কেন তারা আমাদের দেশের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিলো? এ সময় প্রশ্ন রাখেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার সময় কেন মার্কিনীরা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে পারে মর্মে সংসদে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে একটা বড় প্রশ্ন হলো, কেন তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করলো? যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তখন তারা লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়।  এ সময় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২টি প্রতিষ্ঠান মিলে এসব বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি জানি না কী আন্তর্জাতিক খেলা চলছে। তাকে কেন সরকার থেকে সরাইতে চাইছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমার পিতাকে হত্যা করেছে। যারা আমার পরিবারকে হত্যা করেছে, এমনকি ১০ বছরের ভাইকে হত্যা করেছে, সেই ষড়যন্ত্রকারীরা চায় না এই পরিবারের কেউ ক্ষমতায় আসুক। এ সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সংবাদ মাধ্যমের ওপর চাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেসব অভিযোগ করছে, সেগুলো খুব বেশি প্রমাণ করতে পারেনি। 

কিছু গ্রুপ বড় বড় সংখ্যায় অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমরা যখন তদন্ত করেছি, তখন আমরা পাঁচ-ছয়জনের (হত্যা বা গুম) ব্যাপার দেখতে পেয়েছি। আসলে কিছু মানুষ বিভিন্ন কারণে নিজেরাই লুকিয়ে ছিল। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরাও সমর্থন করি না। আমাদের দেশে আইন আছে, আমাদের আইন প্রয়োগকারীরা কোনো অন্যায় করলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হয়। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কী করেছিল? তারা মানুষ হত্যা করেছে, তারা মলোটভ ককটেল ছুড়েছে, তারা পাবলিক বাসে আগুন দিয়েছে। ৩ হাজার ৮০০ পাবলিক বাসের ভেতরে যাত্রীদের রেখেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে, ট্রেন, লঞ্চ, প্রাইভেটকারে আগুন দিয়েছে। আপনি হলে কী করতেন? আপনারা কী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতেন না? এটা সাধারণ দলীয় সমর্থকদের ক্ষেত্রে করা হয়নি। যারা হত্যা করেছে, মানুষকে নির্যাতন করেছে, দুর্নীতি করেছে- এই জন্য তারা শাস্তি পেয়েছে। আমি বুঝতে পারি না, তারা যেসব অপরাধ করেছে, কেন এইসব (মানবাধিকার) সংগঠন সেটা দেখতে পাচ্ছে না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো কখনো আমার মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেনি। যখন আমার পুরো পরিবারকে হারিয়েছি, তখনো তারা আমার পক্ষে কথা বলেনি। কেন? শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব সময়েই মানবাধিকার রক্ষা করে আসছে। মানবাধিকার মানেই শুধু শরীরের নিরাপত্তা নয়।

আমার কাছে মানবাধিকার মানে হলো তাদের নিরাপত্তা, খাদ্য, শিক্ষা, ভোট, সুস্থ থাকার অধিকার। সবকিছু আমরা রক্ষা করছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন এবং ভোটাধিকারের জন্য আমি সারাজীবন সংগ্রাম করেছি, সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই আইন করেছি। আমরা সব সময়েই চেয়েছি যেন মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়। এখন আমাদের ভোটার লিস্ট ছবিসহ তৈরি করেছি, আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্সের ব্যবস্থা করেছি। এ সময় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৯৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে সেটিকে ভ্লাদিমির পুতিনের ভোটের মতো উল্লেখ করে বিবিসি জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাজের জন্যই মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। জনগণ রাজনৈতিক অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্য কমেছে, খাদ্য নিরাপত্তা বেড়েছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহায়ন- সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। তাহলে মানুষ কেন (আমাদের) ভোট দেবে না? এ সময় ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কী সেটা প্রমাণ করতে পেরেছে? কোথায় সেই প্রমাণ? আমি নথিপত্র দেখতে চাই। কারণ আমি বলছি, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ অভিযোগ করেনি।

 ২১ দলীয় জোট, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী সবমিলিয়ে কতোগুলো আসন পেয়েছিল? তিনশ’ আসনের মধ্যে মাত্র ২১টি। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা আমাদের জোটকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন অবশ্যই স্বচ্ছ এবং অবাধ হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা (বিএনপি জোট) শুরুতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কী হলো? আমাদের ৩০০ আসন আছে। আপনাকে তিনশ প্রার্থী দিতে হবে। তারা মনোনয়ন দিয়েছে প্রায় ৭০০ জনকে। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে যায়। তাহলে তারা কীভাবে দাবি করতে পারে যে, নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ হয়নি।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status