দেশ বিদেশ
শিশু হাসপাতালে পিটিয়ে হত্যা
বাবা হত্যার বিচার চাইতে ছয় বছরের মরিয়ম রাস্তায়
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবারমরিয়মের বয়স মাত্র ৬ বছর। সবেমাত্র স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করেছে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এসেছিল বাবা হত্যার বিচার চাইতে। তার বাবা মামুনকে ২৬শে মার্চ দুপুরে চোর সন্দেহে শ্যামলীর শিশু হাসপাতালে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে শেরেবাংলা নগর থানায়। পুলিশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু তার পরিবারের দাবি, পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। হীরা ও মাহবুব নামের দুই আনসার সদস্যের ফাঁসির দাবিতেই মরিয়মের সকল স্বজন ও প্রতিবেশীরা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। দু’দিন আগে বাবা হারানো মরিয়মের হয়তো ফাঁসি, বিচার বা মানববন্ধন বোঝার বয়স হয়নি এখনো। কিন্তু বাবার শূন্যতা সে ঠিকই বুঝতে পারছে। বাবা বলে ডাকতে পারছে না। তার মাঝে এখন নেই আগের মতো চঞ্চলতা। খাবার-দাবারও ঠিকমতো খায় না।
সন্তানের চিকিৎসার জন্য পল্লবীর আদর্শনগর এলাকার বাসিন্দা মো. মামুন শিশু হাসপাতালের কাউন্টারে টিকিট কাটতে গিয়ে আনসার সদস্য মাহবুব ও হিরার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হলে মামুনকে চোর সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করায় হতবাক ও বিস্মিত তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে গতকাল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন আদর্শনগর এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে মরিয়মের চাচা মাসুদ রানা বলেন, আমার ভাই মামুনের মেয়ে মরিয়ম ক’দিন ধরেই সর্দিকাশি, জ¦রে ভুগছিল। আমার ভাই তার চিকিৎসার জন্য শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন আমার মা ও ভাইয়ের স্ত্রী। সেখানে টিকিট কাটা ও সিরিয়াল নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ২ আনসার সদস্যের। তিনি ওই আনসার সদস্যদের চড়-থাপ্পড়ের শিকার হন। আনসার সদস্যরা তার কাছে সিরিয়ালের জন্য টাকা চেয়েছিল। তিনি তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে রাজি হননি। এসব নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তার গায়ে হাত তোলা হয়। মার খেয়ে তিনি সেখান থেকে চলে এসে মরিয়ম, তার মা ও আমার মাকে ওষুধ নিয়ে আসছেন বলে বাসায় পাঠিয়ে দেন। পরে তিনি ওই আনসার সদস্যদের কাছে গিয়ে কেন তাকে মারা হলো এই বিষয়ে জানতে চান। তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আনসার সদস্যরা আমার ভাইকে তখন আবার মারধর করেন। মারধর থেকে বাঁচতে তিনি দৌড় দিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে চান। আনসার সদস্যরা চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন আশপাশের অ্যাম্বুলেন্স চালক, সহকারী, আশপাশের আরও লোক এগিয়ে এসে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দিন বিকালে পুলিশ আমার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে রাতে সিল-স্বাক্ষর ছাড়া মামলার এজাহার আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। এজাহারের মূলকপি আমি এখনো পাইনি। এজাহারের বিবরণ পড়ে আমি জানতে পারি আমার ভাই নাকি মাদকাসক্তের চিকিৎসা নিতে গেছে। সে মাদকাসক্ত ও সাইকেল চুরি করেছে তাই তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব পুরোটাই মিথ্যা। পুলিশ এজাহারে নিজের মতো করে বিবরণ লিখেছে। তবে সিআইডি’র পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্তের আশ^াস দেয়া হয়েছে। মামুন হত্যার জন্য হিরা, মাহবুব, অ্যাম্বুলেন্স চালক ও হেলপারসহ যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।