দেশ বিদেশ
আমাদের সন্তানরা আর ফিরবে না
মানবজমিন ডেস্ক
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
৭ই মে ভোরের আলো ফোটার আগেই মুহূর্তের মধ্যেই বদলে গেল মারিয়া খানের পরিবার। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার বাসিন্দা মারিয়া হারিয়েছেন তার ১২ বছর বয়সী ভাগ্নে ও ভাগ্নিকে। যমজ এই ভাইবোনের একজন জাইন আলি ও অন্যজন উরওয়া ফাতিমা। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সশস্ত্র উত্তেজনায় সীমান্তবর্তী জনপদে নেমে আসে মৃত্যুর ছায়া। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ৭ই মে সকালে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক স্থানে হামলা চালায় ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও পাল্টা হামলা শুরু করে। যা ওই দিন থেকে এ সপ্তাহের শনিবার পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে। এসময়ের মধ্যে উভয় পক্ষের মধ্যে চলতে থাকে গোলাগুলি, ড্রোন ও বিমান হামলা। বিশেষ করে সীমান্তে প্রচুর গোলাগুলি হয়। এতে ভারত-পাকিস্তানকে বিভক্ত করা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর অবস্থিত গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। পাকিস্তানের দাবি, ভারতের হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান। অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ১৬ জন ভারতীয় নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দিল্লি। পুঞ্চ শহরের কাছে নিয়ন্ত্রণরেখা ঘেঁষা গ্রামে বসবাস করেন খান পরিবার। সংঘাত শুরুর আগের দিন যাদের জীবন ছিল স্বাভাবিক। স্কুল থেকে ফিরে পড়াশোনা, খেলা আর রাতের খাবারের পর ঘুমিয়ে পড়েছিল নিহত ওই যমজ ভাইবোন। ভোরে যখন গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়, আতঙ্কে তারা বাড়ির ভেতরে লুকিয়ে পড়ে। পরে এক আত্মীয়ের সাহায্যে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মারিয়া বলেন, আমার বোন উরসা উরওয়ার হাত ধরে ছিল, আর দুলাভাই রামিজ জাইনকে ধরে ছিল। তারা বাসা ছেড়ে বের হওয়ার পরপরই তাদের কাছাকাছি একটি শেল বিস্ফোরিত হয়। যাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় উরওয়া। আর বিস্ফোরণের প্রবল ধাক্কায় ছিটকে পড়ে জাইন। পরে জাইনকে সিআরপি দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
রামিজ খান। যিনি একজন শিক্ষক। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে পুঞ্চ, তারপর রাজৌরি ও পরে জম্মু শহরের হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন তিনি। গুরুতর অবস্থায় কাতরাতে থাকা এই মানুষটি এখনো জানেন না ওই বিস্ফোরণে তার দুই সন্তানই প্রাণ হারিয়েছেন। রামিজ ও উরসার জীবন জুড়ে তাদের সন্তানরা ছিল আশার আলো। সন্তানদের ভালো শিক্ষার জন্য তারা তাদের বসবাসের স্থানও বদলে নিয়ে আসে। ৯ই মে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, একটি পাকিস্তানি শেল ক্রাইস্ট স্কুলের পেছনে পড়ে বিস্ফোরিত হয়।
৭ই মে’র ঘটনার পর শত শত মানুষ পুঞ্চ ও আশপাশের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। যুদ্ধবিরতির পর অনেকে ধীরে ধীরে ফিরছেন। তবে মারিয়ার হৃদয়ে রয়ে গেছে অপূরণীয় ক্ষত। যদি সরকার আগেই সীমান্তবর্তী লোকজনকে সতর্ক করতো, তাহলে আমরা সরে যেতে পারতাম। হয়তো আমাদের বাচ্চারা আজ বেঁচে থাকতো, বলেন মারিয়া। তার কণ্ঠে ভেসে আসে ব্যথা ও ক্ষোভ। তিনি বলেন, যদি দেশের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ দরকার হয়, আমরা তা মেনে নিই। আমরাও পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের জীবন কি জীবন নয়?