দেশ বিদেশ
খরচ বাঁচাতে ইফতারিতে হিসেবি ঢাবি’র শিক্ষার্থীরা
হাসনাত মাহমুদ
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার
নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেভাগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরের সবুজ ঘাসে ইফতারি নিয়ে গোল হয়ে বসেছিলেন নূর ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থাকলেও রমজান মাসে তারা একত্রে ইফতারি করেন। সামনের বড় থালিতে একসঙ্গে ছোলা-মুড়ি মাখা। সঙ্গে বাড়তি উপকরণ হিসেবে আছে খেজুর, পিয়াজু আর শরবত। সারা দিন রোজা থাকার পর এত অল্প ইফতারিতে ক্লান্ত শরীরে কি সতেজতা ফিরবে? এমন প্রশ্নে অনেকটা অসহায় ভঙ্গিতে চতুর্থ বর্ষে পড়ুয়া সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নূর জানালেন, আপাতত কিছু করার নেই। আগে এসবের সঙ্গে ফলমূল, চিড়া ও কলা থাকতো। সব মিলিয়ে ৫০-৬০ টাকায় হয়ে যেতো। এবার এসব তালিকায় রাখতে হলে বাজেট রাখতে হবে ১০০ টাকা। কিন্তু টিউশনির বেতন তো এক পয়সাও বাড়েনি। নূরের মতো একই অবস্থা ঢাবি’র অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষার্থীর। রমজান উপলক্ষে গত বছরের তুলনায় খাবারপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। যদিও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাড়তি দামের বিবেচনায় এটি স্বাভাবিক বলছেন দোকানিরা। সরজমিন বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, ছোলা ও পিয়াজুসহ অন্যান্য ভাজাপোড়া আইটেম বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। অনেকে আবার দাম না বাড়ালেও কমিয়ে দিচ্ছেন খাবারের পরিমাণ। লেবু, পেঁপে, বেল ট্যাংকের শরবতের দাম বেড়েছে অন্তত ৫ টাকা করে। লেবু ও শসা প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। মুড়ির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০-২০ টাকা। ছোলা কেজি ১২০ টাকা হওয়ায় মূল্য আগেরটা রেখে পরিমাণটা হালকা কমানো হয়েছে বলে জানান শাহাদাত নামে সূর্যসেন হলের এক দোকানি। জিলাপির কেজি ২০০ টাকা করে। তবে একটু কমও রাখা হয়। জিলাপি তৈরিতে বাইর থেকে কারিগর আনতে হয়, গ্যাস খরচ, চিনির দামও বেশি, ময়দার দাম ও তেলের দাম সবমিলিয়ে সামান্য না বাড়িয়ে পারা যাচ্ছে না বলে জানান নাছির নামে আরেক ব্যবসায়ী। নাছির বলেন, মুড়ির ক্রয়মূল্য পড়ে ৯০ টাকা করে। তাই কেজি অন্তত ১২০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। ইফতারিতে শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ থাকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। তবে সেখানেও এবার মিলছে না স্বস্তি। কলার দাম আগের বছরের তুলনায় জোড়াপ্রতি বেড়েছে ৩-৫ টাকা। ছোট আনারসের আগে যেখানে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হতো, সেটি এবার বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। বেড়েছে পেঁপে ও পেয়ারার দামও। সব মিলিয়ে বাড়ি থেকে এনে কিংবা টিউশনির সীমিত আয়ে খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে ছোলা-পিয়াজু, খেজুর পানি খেয়ে সারছেন ইফতারি। আবার অনেকে ইফতারিতে ছোলার বদলে খিচুরি, তেহারি কিংবা ভারী কিছু খেয়ে সেরে নিচ্ছেন রাতের খাবারও। আরিফ নামে মুহসিন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ইফতারির পর আবার রাতে কিছু খাওয়া লাগে। এরপর আবার ভালোমানের সেহেরি। সব মিলিয়ে খরচ অনেক বেড়ে যায়। তাই ইফতারিতে খিচুড়ি খেয়ে রাতের খাওয়াটাও করে ফেলি। এরপর একেবারে সেহেরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন বলছেন, ইফতারি মেন্যুতে ভারী খাওয়া-দাওয়া কিংবা ছোলা-মুড়ির চেয়ে ফলমূল রাখার অনেক বেশি দরকার। দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর এ ধরনের সহজ পাচ্য খাবার শিক্ষার্থীদের শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়। এসব জানার পরেও বাড়তি মূল্যের কারণে হয়তো শিক্ষার্থীরা চাইলেও ইফতারির মেন্যুতে পছন্দের ফলমূল রাখতে পারছে না। শুধু ইফতার নয়, ঢাবি’র প্রতিটি হলের ক্যান্টিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে সেহেরির খাবারের দামও। খাবারের মান ‘ভালো’ করার অজুহাতে মেন্যুপ্রতি দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। যদিও খাবারের মানে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানান এসব ক্যান্টিনে দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে আসা শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে খরচ বাঁচাতে খাবারের বেলায় হিসেবি হওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকেছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর সামনে।