ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা শাকিব খানের

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

চলচ্চিত্র প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে নালিশি মামলা করেছেন চিত্র নায়ক শাকিব খান। গতকাল  ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে শাকিব খান এ নালিশি মামলাটি করেন। আদালত শাকিব খানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আদালত মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। আদালতে নায়ক শাকিবের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মো. খায়রুল হাসান। পরে তিনি মানবজমিনকে বলেন, আদালত শাকিব খানের জবানবন্দি নিয়েছে। বিবাদীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। আগামী ২৬শে এপ্রিল রহমত উল্লাহকে হাজির হতে বলেছে আদালত। 

যে দুই ধারায় মামলা
২০২৩ সালের ১৬ই মার্চ আনুমানিক রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ঘটনা মীমাংসার কথা বলে স্প্যারো নামক একটি রেস্টুরেন্টে শাকিব খানের কাছে রহমত উল্লাহ ১ লাখ ডলার পুনরায় দাবি করে। আসামি তাকে জানায় , যদি ১ লাখ ডলার না দিস তাহলে তোর মাথা আর ঘাড়ে থাকবে না। তোর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেবো বলে হুমকি প্রদান করেন।

বিজ্ঞাপন
ফলে বাদী এখন এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৫০৬ ধারায় নালিশী মামলা করেন। মামলায় ৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এরা হলেন- শাকিব খান নিজে, মনিরুজ্জামান ও মো. আশিফ রহমান ওয়াহিদ।   

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, দণ্ডবিধির ৩৮৫  ধারায় চাঁদাবাজির অপরাধ বা চাঁদা দাবির অপরাধ, বিচার প্রক্রিয়া এবং দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে। ৩৮৫ ধরায় বলপূর্বক গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে কোনো ক্ষতির ভীতি প্রদর্শন। এই ধারায় স্পষ্ট যে চাঁদা দাবি করলেই অপরাধ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। চাঁদা নেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।  এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং সর্বনিম্ন ৫ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এই অপরাধ জামিনযোগ্য নয়। আপসযোগ্যও নয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট জহির উদ্দিন লিমন বলেন,  ৫০৬  ধারায় বলা হয় যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শন করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে কিংবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে।

শাকিব খান যা বলেন
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে সাংবাদিকদের নায়ক শাকিব খান বলেন, আমি আশা করছি, মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবো। আমি মামলা করার জন্য গুলশান থানায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মহামান্য আদালতের কাছে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আমি আদালতে মামলাটা দায়ের করেছি। আদালত সমস্ত কিছু দেখেছেন এবং আমলে নিয়েছেন।

মামলার আরজিতে শাকিব খান যেসব অভিযোগ করেন 
২০১৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব। চুক্তি অনুযায়ী, ছবির নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়। শুটিং করতে ২০১৬ সালের ৩০শে আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় যান শাকিব। এরপর তিনি জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেননি। তার জায়গায় অ্যানি রেনেসা সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে নায়িকা হিসেবে তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ শাকিবকে অনুরোধ করলে তিনি তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে প্রস্তাব নাকচ করেন।

আরজিতে আরও বলা হয়, আসামি রহমত উল্লাহ শাকিবকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি বাদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বাদীকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য একটি নামিদামি ক্লাবে নেয়ার প্রস্তাব করলে শাকিব রাজি হয়ে একদিন শুটিং শেষে আসামির সঙ্গে ক্লাবে যান। ক্লাবে গিয়ে বাদী অ্যানি রেনেসা সাবরিনসহ আরও ২/৩ জন অপরিচিত লোককে দেখতে পান। ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন শাকিব খান। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করলে হোটেলে ফেরত আসার সময় আসামি এবং অন্য ২/৩ জন লোককে খুঁজে না পেয়ে অ্যানি রেনেসা সাবরিন থেকে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে গেলে অ্যানি শাকিবকে জানান, আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন তাহলে চলেন আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি। শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে ওই ভদ্র মহিলার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে শাকিব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান।

আরজিতে শাকিব খান বলেন, ঘটনার পরদিন সকালে মামলার আসামি রহমত তাকে ফোনে জানান, তুমি রাতে ওই মহিলার সঙ্গে কী করেছ সবকিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহলে আমি সব ভিডিও ক্লিপ ও অ্যানি রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করবো এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না। এ রকম বিভিন্ন ভয়ভীতির একপর্যায়ে আমি ভয় পেয়ে যাই। তখন  একটু চিন্তা করে দেখি, যেহেতু আমি অজ্ঞান ছিলাম, সেহেতু তার আমার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। ভয়ে তখন আসামিকে আমি বলি, আমার কাছে তো এত ডলার নেই। আমি তোমাকে এত টাকা দেবো কীভাবে? আসামি তখন প্রতি উত্তরে জানায়, তুমি অনেক বড় লোক, তোমার অনেক টাকা আছে, টাকা না থাকলে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাও, যদি আমার দাবি করা ডলার পরিশোধ না করো তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেবো এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করবো। তাতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন আমি ভয়ে এবং আমার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে ৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করি। এরপরেও আসামি আমাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখালে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় তাকে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে প্রদান করি। আসামি চাঁদা চাওয়া অব্যাহত রাখলে পরবর্তীতে চাঁদা দিতে না পারায় আমাকে জানানো হয়, আমার নামে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে। আনুমানিক ২০১৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পুনরায় ওই ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া গেলে  ওই অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে জানান, মিস্টার খান ইট ইজ এ হানি ট্রেপ, সো বি অ্যাওয়ার ইয়োর সেলফ ফ্রম দ্যাম। শাকিব বুঝতে পারেন আসামি মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তারপর থেকে আমি আসামিকে চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দিলে আসামি মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছে আমার নামে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন রহমত উল্লাহ। অভিযোগে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় এক নারী সহ-প্রযোজককে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। এরপর তিনি দেশে পালিয়ে আসেন।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status