ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

পবিত্র রমজানে মুসলিম বিশ্বের নাভিশ্বাস

মানবজমিন ডেস্ক
২৩ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার

শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। কিন্তু বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম এই পবিত্র মাসে মুদ্রাস্ফীতির চাপে কাহিল হয়ে পড়ছেন। দীর্ঘস্থায়ী করোনা মহামারির প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সর্বোপরি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর চাপ সইতে হচ্ছে সবাইকে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকায় বসবাস করেন বিশ্ব মুসলিমের সবচেয়ে বড় অংশ। আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহে ঘাটতির ফলে এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই রমজানে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৭৯টি দেশে ৩৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ছিল চরম খাদ্য অনিরাপত্তায়। কমপক্ষে ১৪ কোটি মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন হয়। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা পরিবর্তন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, অপুষ্টিতে ভোগা সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস এশিয়া ও আফ্রিকায়। 

ওদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ মাসে পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বিস্কুট, পাউরুটি এবং তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা গত বছরের তুলনায় এবার রমজানে কমে যাবে শতকরা ২০ ভাগ।

বিজ্ঞাপন
এখানে মুদ্রাস্ফীতির হার শতকরা ৯ ভাগের সামান্য নিচে। এক দশকেও এই পরিস্থিতি দেখা যায়নি। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে বসবাস করা কমপক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীও সামনে কঠিন সময় মোকাবিলা করবেন। রমজানের সময় তাদের জন্য খাদ্য বিষয়ক বাজেট কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ডব্লিউএফপি। 
ডব্লিউএফপি’র অর্থনীতিবিদ ফ্রেডেরিক গ্রেব আলজাজিরাকে বলেছেন, খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পরিবারগুলো অন্য পণ্য ও সার্ভিসে খরচ কমিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আপনি যদি গরিব হন, তাহলে আপনাকে আপনার আয়ের শতকরা কমপক্ষে ৫০ ভাগের বেশি ব্যয় করতে হবে খাদ্যের জন্য। 

রমজানে খাদ্য ও পানীয়ের মূল্য চোকাতে পরিবারগুলোকে প্রচলিত খাবার যেমন খেজুর, কেক, বিস্কুট, বিভিন্ন রকম জুসের খরচ কমাতে হবে। অথবা তারা সস্তা বিকল্প খুঁজবে।  এর ফলে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্য স্থানের মতোই মধ্যপ্রাচ্যেও এর ধাক্কা লেগেছে। অনেকেই বলছেন, তাদের হাতে টাকা নেই। ১২ বছর আগে গৃহযুদ্ধ শুরু হলেও সিরিয়ার শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যের নিচে। তার উপর তাদেরকে আঘাত করেছে ৬ই ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্প। তুরস্ক ও সিরিয়া মিলে এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ। এর ফলে দেশ দু’টি কঠিন সময় পাড় করছে। তুরস্কে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়ায় শতকরা ৫৫ ভাগ। মিশরে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ফেব্রুয়ারিতে তা শতকরা ৩২ ভাগ স্পর্শ করে। তবে দরিদ্রদের জন্য সরকার হ্রাসকৃত মূল্যের রমজান বাজার খুলেছে। রমজান শুরুর ৩ মাস আগে জানুয়ারি থেকেই সেখানে আটা, মাংস এবং পাস্তার মতো খাদ্যপণ্য শতকরা ৩০ ভাগ কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে লেবাননের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যে সংকটের মুখে তা অন্য কোনো দেশে নেই। এই দৃশ্য রমজানে বিশেষ করে আরও দৃশ্যমান হবে। দেশটি এমনিতেই ৪ বছর ধরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটে ডুবে আছে। দেশটিতে কাজ করে প্রথম সারির একটি দাতব্য সংস্থা আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইড। তারা বলেছে, লেবাননে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের ইফতার যোগাড় করার সক্ষমতা থাকবে না। ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে লেবাননের পাউন্ডের পতন হয়েছে শতকরা ৯৮ ভাগ।  লেবাননে খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগবে ১৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ, লেবাননে আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কেয়ার লেবাননের মুখপাত্র প্যাট্রিসিয়া খোদের বলেন, জনগণ খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। তারা দিনশেষে মুদি দোকানে যান। যা পড়ে থাকে, তাই সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। যদি তাদের খাদ্য কেনার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাল ধার করেন।  

লেবাননে ইফতারে খুব জনপ্রিয় স্পাইসি লেবানিজ কোফতা। খেজুর, বাদাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এসব খাবার। এবার অনেক বাড়ির মানুষের সামর্থ্য থাকবে না তা কেনার। অনেকে শুধু রুটি দিয়ে ইফতার করার কথা চিন্তা করছেন। যদিও এক পিস রুটির দাম ২০১৮ সালে ছিল ১৫০০ লেবাননি পাউন্ড। কিন্তু তার দাম এখন ৩৯,০০০ লেবাননি পাউন্ড। এর সঙ্গে থাকতে পারে কলা। কারণ, সেখানে কলা হলো সবচেয়ে কম দামি ফল। 
পাকিস্তানেও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছেই। দেশটিতে জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ কোটি। সেখানে অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ। এর সঙ্গে গত বছর ছিল ভয়াবহ বন্যা। যে এলাকায় বন্যা হয়, তা চেক প্রজাতন্ত্রের চেয়েও বড়। এই বিশাল এলাকা ছিল পানির নিচে। ফলে সেখানে খাদ্য সংকট ভয়াবহ হয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদের বুরহান বলেছেন, যদি তার ৬ সন্তান দিনে একবারও খাবার পায় তবু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাবেন। কয়েক মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতি শুধু বাড়ছেই। এর ফলে তিনি বাসা ভাড়া অথবা ইউটিলিটি বিল দিতে পারছেন না। তার ভাষায়, এখন সংসার চালানোর মতো উপার্জন নেই আমার। পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে বুরহান বলেছেন, তিনি সরকারি ভর্তুকির আটার উপর নির্ভরশীল হবেন। তার ভাষায়, তাও অনেক দাম। ২০ কেজির আটার ব্যাগের দাম আগে ছিল ৬০০ রুপি। এর দাম এখন ১১০০ রুপি। এরপরও অর্থনীতিবিদরা ভালো খবর দিতে পারছেন না। তারা মনে করছেন রমজানে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এমনিতেই রমজানে মূল্যবৃদ্ধি পায়। ইসলামাবাদভিত্তিক অর্থনীতিবিদ শাকিব শেরানি বলেছেন, সরকারি হিসাব বলছে গত বছরে পাকিস্তানিদের গড় ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে শতকরা ৪০ ভাগের বেশি। বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হতে পারে। 

সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক সাজিদ আমিন বলেন, দেশে অব্যাহত রাজনৈতিক বিশৃংখলার ফলে সংকট সমাধানে সরকারের পদক্ষেপ দেয়ার ক্ষমতায় আঘাত লাগছে। তিনি বলেন, আগে আমাদের ছিল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আর এখন তা পরিণত হয়েছে বিশৃংখল। ফলে সরকার খাদ্যমূল্য চেক দেয়ার সক্ষমতা রাখছে না। 
এশিয়ার অন্য স্থানেও পরিস্থিতি ভালো নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়াতে মানুষ কৃচ্ছ্রতাসাধন করছেন। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় এবার রমজানে শতকরা মাত্র ৭০ ভাগ মানুষ খরচ কম করবেন এবং কেনাকাটা কম করবেন। জরিপে অংশ নেয়াদের এক তৃতীয়াংশের বেশি বলেছেন, রমজান মাসে তারা কোথাও ঘুরতে বের হবেন না। শতকরা ৪৩ ভাগ বলেছেন উপহার দেয়া কমিয়ে দেবেন।  দেশটিতে ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ছিল শতকরা ৫.৪৭ ভাগ, যা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক কম। তবে রমজানকে সামনে রেখে খাদ্য ও পানীয়ের দাম দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status