প্রথম পাতা
বিএনপি থেকে শওকত মাহমুদ বহিষ্কার, সন্দেহের তালিকায় আছে আরও নাম
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার
দুই দফা শোকজের পর এবার দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হলেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গতকাল তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে সোমবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়েছে- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শওকত মাহমুদ বহিষ্কারের বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেছেন। মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, শিগগির এ বিষয়ে কথা বলবেন তিনি।
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় ২০১৯ ও ২০২২ সালে বিএনপি শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। নোটিশের জবাব দেয়ায় তার বিষয়ে তখন আর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বশেষ গত ১৬ই মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস্ জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে নৈশভোজের আয়োজন করেন। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয় ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে।
দলীয় সূত্র জানায়, সোমবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শওকত মাহমুদের বিষয়টি উপস্থাপন করেন বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা। পরে স্থায়ী কমিটি তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। সূত্র জানায়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্মকা-ে জড়িত, ‘ইনসাফ কায়েম কমিটি’তে অংশগ্রহণ ও চলমান আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় রয়েছে এমন আরও কয়েকজন বিএনপি নেতার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তাদের কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করছেন দলটির হাইকমান্ড।
বনানীর বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি গতকাল মানবজমিনকে বলেন, নৈশভোজ অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। সেখানে যেসব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে তার বিষয়ে আমি আগে অবগত ছিলাম না। জানলে সেখানে যেতাম না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। সেবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাকে এবং আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে ওই নোটিশ দেয়া হয়। তবে তারা শোকজের জবাব দেয়ার পর তা সুরাহা হয়ে গিয়েছিল। গত বছরের ২৭শে মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে ‘পেশাজীবী সমাজের’ ব্যানারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে শওকত মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে গত বছরের ৬ই এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পেশাজীবীদের ব্যানারে ওই সমাবেশ করায় শওকত মাহমুদের কাছে ব্যাখ্যা চায় বিএনপি। তখন ব্যাখ্যা দিয়ে পার পান তিনি।
শওকত মাহমুদ বিএনপি’র পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং পরে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হন। এ ছাড়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১৬ সাল থেকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শওকত মাহমুদ। বিএনপি’র বাইরে শওকত মাহমুদ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়কও ছিলেন।
পাঠকের মতামত
দলের মধ্যে ভিন্ন দলের কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগী থাকায় বিএনপি বার বার হুচুট খাচ্ছে।
Please take drastic action against him so that others like him will be careful.
পদ-পদবী আর যোগ্যতা না দেখে ষড়যন্ত্রকারীদের বহিষ্কার করে দলকে আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। কথায় আছে, " দুষ্টু গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো।"
শওকত মাহমুদকে লঘু পাপে গুরু দন্ড দেয়া হয়েছে বলে মনে করি। জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির অনুষ্ঠান করা এবং জাতীয় সরকারের প্রস্তাব রাখা তেমন দোষের কিছু নয়।
বিএনপি এখন অনেক বড় একটি সুসংগঠিত দল। এরকম একশত নেতা বেরিয়ে গেলেও দলের কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু দুষ্ট চরিত্রের বেইমান রাজনীতিবিদদের একজনও যদি দলে থাকে তাহলেও অনেক বড় ক্ষতি হয় এ কারণেই দলের এই সময়োচিত পদক্ষেপ কে সাধুবাদ জানাই।
বিএনপি রাজনীতির সবচেয়ে বড় এবং মারাত্মক ভুল হচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক, দলের জন্য ক্ষতিকর, সন্দেহভাজন লোকদের কথায় কথায় বহিষ্কার করে, আবার দলে টেনেও নেয়। শরীরে ক্যান্সার হলে বীজসহ আক্রান্ত অংশ সমূলে কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু বিএনপি এদের দুধ-কলা দিয়ে পুষে। মেজর অবঃ আক্তারুজ্জামান কিশোরগঞ্জের এমপি সে ছিল বিএনপির ক্যান্সার। কিন্তু তাকে দলদল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করে একবার বহিষ্কার আবার দলে ঢুকানোর নামে চোর-পুলিশ খেলা হয়েছে। যা পরবর্তীতে বিএনপির জন্য চরম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ।
বিএনপির নেতৃত্বের সংকটের কারণে নেতা কর্মীরা বিভ্রান্ত। বেগম জিয়া থেকেও নেই , আর তারেক রহমান না থেকেও আছে । একটি কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে বা তাকে সরাতে হলে এরকম নেতৃত্ব দিয়ে কখনো হবে না। তাই হতাশা থেকে একেকজন একেকভাবে চিন্তা ভাবনা করলে সেটা খুব দোষের কিছু নয়।
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের কষ্ট, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড, মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরণ, ভোটবিহীন নির্বাচন ইত্যাদি কারণে যে সময় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন করবে, সেখানে বিএনপির কোন কোন নেতা এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের সাথে লিপ্ত যা খুবই হতাশ ও দুঃখ লাগে। কোথায় যাবে সাধারণ জনগণ? আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই।
শওকত মাহমুদ সহ আরও কিছু নেতা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবসথা নেওয়া খুবই জরুরি, অন্যথা দল সমস্যায় পড়তে পারে। ধন্যবাদ।