বাংলারজমিন
অপরাধ করলেও বিচার হয় না দাপুটে ওয়ার্ড মাস্টার সুইটের
প্রতীক ওমর, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার
সহিদুল ইসলাম। সুইট নামেই পরিচিত। পেশায় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার। নানা ধরনের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার নামে। অভিযোগ রয়েছে নার্সকে যৌন হয়রানি করার। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালে অভিযোগ দিয়েও বিচার পায়নি এক নার্স। হাসপাতাল প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। উল্টো সুইটকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে খোদ হাসপাতাল প্রশাসন। লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে পাঁচ কর্মদিবস সময় বেঁধে দিলেও চার মাসে প্রতিবেদন দাখিলের খবর নেই। দাপুটে ওয়ার্ড মাস্টার সুইট অপরাধ করলেও বিচার হয় না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে সুইটের খুঁটির জোর কোথায়, এ নিয়ে। সুইট বগুড়ার ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার। গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর ওই হাসপাতালের নার্স রোজিনা বেগমকে ডিউটি চলাকালীন অবস্থায় আপত্তিকর কথা বলেন। ওই সময় উপস্থিত আরও অনেকেই ছিল। ভিকটিম নার্স রোজিনা বেগম মানবজমিনকে ওই দিনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে, ‘ হঠাৎ ওয়ার্ড মাস্টার সুইট আমাকে ডেকে বলেন সারাজীবন খারাপ কাজ করে এখন লোক দেখানো পর্দা করেন? হাজি সেজে আছেন? এখনি প্রস্তাব দিলে কাপড় খুলে খারাপ কাজ শুরু করবেন? বিয়েতো অনেক দিন আগে হয়েছে, এখনোতো বাচ্চা হলো না? স্বামী মনে হয় কাজ করতে পারে না। আমার কাছে আসলে এক ঠ্যালাতেই বাচ্চার মা বানিয়ে দিবো’। আমি এসব কথার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানাই। পরে বিষয়টি আমি আমার স্বামীকে অবহিত করি। আমার স্বামী মোবাইলে এমন কথা বলার কারণ জানতে চাইলে সুইট বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরদিন ৫ই ডিসেম্বর আমি অফিসে গেলে সবার সামনে অকথ্য গালিগালাজ করে সুইট।
বিষয়টি লিখিতভাবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নার্সিং মিডওয়াইফারির মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দিলেও চার মাসে কোনো বিচার করেননি কেউ। বরং সুইটের সঙ্গে গলায় গলায় সম্পর্ক হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজলের। সম্প্রতি তিনি সুইটের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণ করে আসলেন। ভিকটিম নার্সের অভিযোগ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিক আমিন কাজলের জোরেই সুইটের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিচার হয় না। কারণ হিসেবে তিনি বলেও ওয়ার্ড মাস্টার সুইটের সঙ্গে ডা. শফিক আমিন কাজলের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আছে। একটি বেসরকারি ক্লিনিকের যৌথ মালিক তারা। এ ছাড়াও নামে-বেনামে ডা. শফিক আমিন কাজলের সঙ্গে ওই ওয়ার্ড মাস্টারের বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। ফলে সুইট ছোট পোস্টে চাকরি করলেও সব চেয়ে বেশি দাপট দেখায় হাসপাতালে। তার ভয়ে সবাই জড়োসড়ো হয়ে থাকেন। এ ছাড়াও শোনা যায় বগুড়ায় দাপটের সঙ্গে দীর্ঘদিন অবস্থান করা স্বাস্থ্যখাতের কয়েকজন রাঘব বোয়ালের সঙ্গেও সুইটের বেশ সখ্যতা আছে। সুইটের মাধ্যমেই হাসপাতালের নানা দুর্নীতি হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই নার্স আরও বলেন, আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা চার মাস পার হয়েছে। একটি চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হলেও সেই কমিটি অজ্ঞাত কারণে এখনো কোনো রিপোর্ট দিতে পারেননি। উল্টো ওই নার্স সব সময় সুইটের হুমকির মধ্যেই ডিউটি করছেন। তিনি বলেন, আমি সুইটের কারণে মানসিকভাবে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বিচার না হলে সুইট নারী কর্মীদের আরও হয়রানি করবে।
তার হাতে কেউ নিরাপদ নয়। আমি দ্রুত সংশ্লিষ্টদের কাছে সুইটের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার প্রার্থনা করছি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সহিদুল ইসলাম সুইটের সঙ্গে একাধিবার ফোনে চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিলেও তার সাড়া মেলেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. এ টি এম নূরুজ্জামান গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন ডা. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। কিন্তু চার মাস পার হলেও ওই কমিটি এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। কথা হয় তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে জানান, ‘এখনো একজন সাক্ষীর স্বাক্ষর নেয়া বাকি আছে। অল্প সময়ে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া যায় না। আর সবাইকে একসঙ্গে পাওয়াও যায় না। ফলে দেড়ি হচ্ছে’। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, নার্স রোজিনার সঙ্গেও আমার ব্যবসা আছে। সুইট এবং ওই নার্সের ঘটনাটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ওই বিষয়ে মোবাইলে কোনো তথ্য দিতে পারবো না। এদিকে, চার মাসেও তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. এ টি এম নূরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন আমি অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় আছি। এখন কিছু বলতে পারবো না। বগুড়া ফিরলে দেখা করেন।