দেশ বিদেশ
কোটি টাকা হাতিয়ে ইউরোপে পালাতে চেয়েছিল হাসান
স্টাফ রিপোর্টার
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবারযৌথ মালিকানায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতেন হাসান ছালাম (৪১)। ব্যবসায় ভালো মুনাফা পেয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এজন্য আত্মীয় ও পরিচিতদের শরণাপন্ন হন। তাদের থেকে মাসিক উচ্চ মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ নেন হাসান। প্রথম দিকে মাসিক কিস্তি দিলেও পরে আর তা পরিশোধ করেনি। পাওনাদাররা ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করলে ২০২২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে তিনি দুই বছর ধরে পলাতক ছিলেন। সোমবার রাজধানীর মতিঝিল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এই আসামিকে। র্যাব জানায়, তিনি ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামি যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্র্যাভেলস, কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেড, গুলিস্থানে জামিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মালিবাগ টুইন টাওয়ারে এশিয়ান স্কাই শপসহ বহু প্রতিষ্ঠান। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার পর কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে সেটি দেয়া বন্ধ করে দেন। টাকা ফেরত চাইলে পাওনাদারদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও ভয় দেখানো হতো। এজন্য পাওনাদাররা তার বিরুদ্ধে আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন।
র্যাব-৩ এর এই কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয়। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও সেগুলো পরিশোধ না করায় এ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হয়। এতেও কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপির দায়ে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত কর্তৃক তাকে বারবার টাকার বিষয়ে মীমাংসা আলোচনা করার সুযোগ প্রদান করা হলেও সে কখনই আদালতে হাজির হয়নি। পরে আসামিকে ২০২২ সালে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পান্থপথের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গা-ঢাকা দেন হাসান। পলাতক অবস্থায় তিনি ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যানেজ করে ঋণ নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি ৫-৬ কোটি টাকার তথ্য দিয়েছেন। এসব টাকা দিয়ে গুলশান, উত্তরাতে জায়গা ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। তার এসব কাজে সহযোগিতার জন্য ৩ থেকে ৪ জন সহযোগী ছিল। তার নামে নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে যেটি তার স্ত্রী করেছিলেন।