দেশ বিদেশ
নারায়ণগঞ্জে রেস্তরাঁয় ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি, ম্যানেজারসহ গুলিবিদ্ধ ৩, বাবা-ছেলে গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবারনারায়ণগঞ্জে একটি ভবনের মালিক ভাড়াটিয়ার রেস্তরাঁয় ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করেছে। এতে রেস্তরাঁর ম্যানেজার শফিকুর রহমান কাজলসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় পিস্তুল ও শর্টগানের গুলি শেষ হওয়ার পর আশপাশের লোকজন ভবন মালিক ও তার ছেলেকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গুলিবর্ষণকারী আজাহার তালুকদার ও তার ছোট ভাই আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় রেস্তরাঁর মালিক শুক্কুর আলী বাদী হয়ে আজাহার তালুকদার ও তার ছেলে আরিফ তালুকদার মোহনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গতকাল বিকালে ৩ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজাহার তালুকদার ও ছেলে আরিফ তালুকদারকে আদালতে পাঠিয়েছে। আদালত আজ রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের চাষাঢ়ায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ নামে রেস্তরাঁয়। গ্রেপ্তারকৃত আজাহার তালুকদার আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক। শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় ভাড়ায় চলছে ওই রেস্তরাঁটি।
এদিকে গুলিবিদ্ধ কাজলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সুলতান ভাই কাচ্চি’র মালিক শুক্কুর আলী বলেন, ‘আজাহার তালুকদার ও তার ৪ ভাই আঙ্গুর কমপ্লেক্স নামে একটি ৬তালা বাড়ির মালিক। বাড়ির নিচতলায় থাকা বেশ কয়েকটি দোকান একেক ভাইয়ের নামে বরাদ্দ। রেস্তরাঁর মালিক শুক্কুর আলী আজাহারের ছোট ভাই আজিজুল তালুকদারের কাছ থেকে মাসিক ৭৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। রোববার রাতে ভবন মালিক আজহার তালুকদার এসে বলেন, পানির বিল বাবদ আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের ১০ লাখ টাকা ঋণ হয়ে গেছি। আমি বললাম ১০ টাকা কেনো দিবো? আমি তো আপনার কাছ থেকে দোকান ভাড়া নেই নাই। আর আমি তো পানির বিল প্রতিমাসে দিয়েই যাই। পানিসহ আমার ৮০ হাজার টাকা ভাড়া। পানির জন্য ৫ হাজার, আর ভাড়া ৭৫ হাজার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে পূর্ব কোনো শত্রুতা ছিল না। শত্রুতা ছিল তাদের ভাইয়ে ভাইয়ে।
শুক্কুর আরও জানান, পানির বিল নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আজাহার আমাকে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করে। পরে আমিও গালি দেই। এরপর সে বলে দাড়া আসতাছি। একথা বলে সে চলে যায়। একপর্যায়ে আজাহার ক্ষুব্ধ হয়ে বাসা থেকে পিস্তল ও শর্টগান নিয়ে আসে এবং রেস্তরাঁর ম্যানেজার শফিকুর রহমান কাজলের পেটে গুলি করে। শর্টগান দিয়ে আরও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। এতে রাসেল ও জনি নামে ২ পথচারী আহত হন। আজাহারকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে তার মেয়ে লাকিও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পিস্তুল ও শর্টগানের গুলি শেষ হওয়ার পর আশপাশের লোকজন আজাহার ও তার ছেলেকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে সে দৌড়ে ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেয়।’
আজিজুল হাওলাদারের স্ত্রী শারমিন আক্তার ডলি বলেন, ‘আজাহার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের বাড়ি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। কিন্তু সেগুলো মিটমাট হয়ে গেছে। তারা ৪তলায় থাকে আমরা ৬ তলায়। ঘটনা শুনে আজাহার ভাইকে বলেছিলাম একটু অপেক্ষা করতে। কিন্তু তা না শুনেই সে রেস্তোরায় ঢুকে গুলি চালিয়েছে। তাকে ফেরাতে গিয়ে তার মেয়েও আহত হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে একজন আহত হবার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। রাগের বশেই এই কা- ঘটিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। ২টি লাইসেন্স করা অস্ত্রসহ আজহার ও তার ছেলে মোহনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় রেস্তরাঁ মালিক ২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।