দেশ বিদেশ
ভোটের বাটন চেপেছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা
জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
দিনভর ভোট কেন্দ্রগুলোতে সক্রিয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকে বিএনপি’র পদত্যাগী সংসদ সদস্য, স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ‘কলার ছড়ির’ নির্বাচনী এজেন্টও হয়েছেন। ওই এজেন্টরা ইভিএম ভোটে ফিঙ্গারের পরই ভোটের বাটন ওকে করেছেন। আশুগঞ্জের শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের ৫নং বুথে ছাত্রলীগের কর্মী আতিকুল ইসলাম ফাহিমের এই তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রাফি উদ্দিন জানান- তারা বারবার চেষ্টা করেছেন তাকে নিবৃত্ত করতে। তিনি বলেন, বিষয়টি ইউএনওকে জানাবো। ৫নং বুথের পোলিং অফিসার মো. শাহ আলী বলেন, কতক্ষণ ঠেকানো সম্ভব। ফাহিম জানান- তিনি এক যুবলীগ নেতার লোক। কেন্দ্রটির মোট ভোট ২৪২৮। দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত কাস্ট হয় ১৪০টি।
বিজ্ঞাপন
মেঘলা আকাশের দোহায় ডিসি’র: ভোটার উপস্থিতি না থাকার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেছেন- আজকে দিনটা মেঘলা-গ্লোমি। সে কারণে ভোটার উপস্থিতি কম, আমরা আশা করছি দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি, যত ধরনের ব্রিফিং করেছি। সাড়ে ৮টায় ভোট শুরু হয়েছে, এখন পর্যন্ত আমরা কোথাও থেকে কোনো অভিযোগ পায়নি। যেহেতু ইভিএম-এ ভোটটা নতুন, ভোটার তার ভোট কোনো বুথে না বুঝে অন্য বুথে যাচ্ছে, এই একটা কমপ্লেইন ছাড়া আর কোনো কমপ্লেইন নেই। প্রার্থীদের এজেন্টও আছে। তিনি সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের একথা বলেন। আর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন- কয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে দেখলাম। সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। আশা করি ভোটাররা শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে ভোট উৎসবটা এনজয় করতে পারবে।
ভোটার দেখাতে তামাশা: ভোটের সারি ফাঁকা। হঠাৎই সারি পরিপূর্ণ করা হয় আশপাশ থেকে লোক ডেকে এনে। তাদের অনেকে ভোটার নন, আবার অনেকে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি দেখে কেন্দ্রে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটের সারি করার জন্যে ডেকে আনেন সবাইকে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে আশুগঞ্জের সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। সারিতে দাঁড়ানো ভোটারদের ২-১ জনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে মুহূর্তেই সারি ফাঁকা হয়ে যায়। কেন্দ্রটিতে ভোটার ৪০৪১। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সৈয়দ ইশরাফিল জানান- ১১টা পর্যন্ত ১৫০ ভোট পড়েছে।
অন্যের কাঁধে ভর করে কেন্দ্রে উকিল সাত্তার: সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কেন্দ্রে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। সিএনজি ছেড়ে তার ভাতিজা স্থানীয় মুকসুদ আলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন এবং অন্য আরেকজনের কাঁধে ভর করে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আসেন। সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৬ নম্বর পরমানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের তিন নম্বর বুথে ভোট দেন তিনি। তার ভোট নম্বর ৯০২। ভোটের পর উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলেন- ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। জয়ী হলে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। কলার ছড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি। ভোট দেয়ার সময় আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পুত্র নাজমুল হাসান তুষার, সাবেক উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রিফাত জিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা কুতুবুল আলম তার সঙ্গে ছিলেন। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৪১৫৭ জন।