বিশ্বজমিন
মিয়ানমারে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মানবজমিন ডেস্ক
(১ মাস আগে) ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ৫:০৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা অনুমোদিত নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়েছে, এই নির্বাচন কমিশন গভীর ত্রুটিপূর্ণ একটি নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া সামরিক অস্ত্র বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া নতুন করে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছর অতিবাহিত হলো বুধবার। এ উপলক্ষে এদিন দেশজুড়ে গণতন্ত্রপন্থিরা ‘নীরব ধর্মঘটে’র মাধ্যমে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদ আয়োজনকারীরা জনগণকে ঘরের ভিতর অবস্থান করার আহ্বান জানান। অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে তাদেরকে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানান। ফলে ইয়াঙ্গুনসহ বড় বড় শহরের রাজপথ দেখা গেছে ফাঁকা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
অন্যদিকে দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, দেশ এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। ফলে এ বছর প্রতিশ্রুত নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী নির্বাচিত বেসামরিক সরকার প্রধান অং সান সুচিকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। গণতন্ত্রপন্থিরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। ভিন্নমত দমন করতে সেনাবাহিনী কঠোর ও নৃশংসতা শুরু করে। এতে কমপক্ষে ২৯০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে বলছে মনিটরিং গ্রুপ অ্যাসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স। তখন থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কমপক্ষে ৪০,০০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৮০ লাখ শিশু আর স্কুলে যায় না। কমপক্ষে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য সংকটে আছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির বেশির ভাগ অংশে চলছে নৃশংস গৃহযুদ্ধ। বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতা এখনও প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে সামরিক জান্তা। অভ্যুত্থানের পর প্রতিবেশী দেশগুলো এবং আসিয়ানের কাছে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার।
পক্ষান্তরে সামরিক জান্তা এমন একটি নির্বাচন পরিকল্পনা করছে যা থেকে অং সান সুচিকে বাইরে রাখা হবে। অথচ গত নির্বাচনে তিনি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ভূমিধস জয় পেয়েছিল। সুচির প্রতি অনুগতরা নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে নির্বাচন বর্জন করতে, যে নির্বাচন আয়োজন করবে সামরিক জান্তা। তারা বলছেন, সামরিক জান্তার নির্বাচন হবে অবৈধ। জাতিসংঘও সম্ভাব্য নির্বাচনকে লজ্জার নির্বাচন বলে অভিহিত করেছে।
সামরিক জান্তা এ সপ্তাহে স্বীকার করেছে তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত করা হতে পারে। আসলে এই নির্বাচন হওয়ার কথা এ বছর আগস্টে। এক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধি করে তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে পারে। আর তার ফাঁদে আটকে পড়তে পারে মিয়ানমার। এ অবস্থায় দেশটির সামরিক জান্তা, সেনাবাহিনী এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন করে সমন্বয়ের মাধ্যমে বুধবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে জ্বালানি সরবরাহ দেয় এমন কোম্পানি সহ অন্যদের টার্গেট করেছে বৃটেন। এতে বলা হয়েছে, এই জ্বালানি ব্যবহার করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নিমানযোগে তাদের বর্বর হামলা চালানোর সুযোগ পাবে।
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, সেনাবাহিনীর অর্থ, জ্বালানি, অস্ত্র ও সরঞ্জাম কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিরোধীকণ্ঠকে দমিত করা, আকাশপথে সন্ত্রাসী অভিযান চালানো এবং ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লংঘনের মতো নৃশংস দমননীতির কারণে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে সামরিক জান্তাকে। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সুনির্দিষ্ট ১৬ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া। বলা হয়েছে, ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনের কারণে দায়ীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।