ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

পাথর লুটপাটে কোম্পানীগঞ্জে হুমকিতে বসতি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

কালীবাড়ীর নুরুল ইসলাম। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কোয়ারির তীরে কালীবাড়ী-দয়ারবাজার সড়কের পাশেই তার তিন কিয়ার জমি। ওখানে পরিবার নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে তিনি ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। গ্রামের আজিদ, হেকিম, গিয়াস, বাহার, নাজিম, দুলালসহ পাথরখেকোদের একটি চক্র কালীবাড়ী টু দয়ারবাজার সড়ক নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ৫ বছর ধরে তাদের চোখ পড়েছে নুরুল ইসলামের বাড়ির দিকে। প্রতি রাতেই নিরীহ নুরুল ইসলামের বাধা ডিঙিয়ে পাথর উত্তোলন করে চলেছে ওরা। এরই মধ্যে কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এ নিয়ে গেল কয়েক বছর মামলা করা হলেও সালিশের নামে এসব মামলা তুলে নেয়া হয়। কিন্তু বিচার পাননি নুরুল ইসলাম। অবশেষে তিনি গত ২২শে ডিসেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

বিজ্ঞাপন
আদালত কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে সরজমিন তদন্ত করার নির্দেশ দিলেও এখনো পুলিশি তদারকি তার বাড়ির পাথর লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নুরুল ইসলাম। সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধ। সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং সহ অন্তত ৭টি কোয়ারি লোকালয় ভেঙে পাথর লুটের আশঙ্কায় প্রশাসন থেকে ইজারা দেয়া হয়নি। কিন্তু থেমে নেই পাথরখেকোদের লুটপাট। খোদ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি ও আশপাশ এলাকায় প্রতিদিন লোকালয় ভেঙে পাথর লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে  খেকোরা। কালীবাড়ী গ্রামের নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন- ‘আমি বাড়ি রক্ষায় আদালতে মামলা দায়ের করায় পাথরখেকোরা এবং পুলিশ ক্ষেপে গেছে। তারা এখন অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করে পাথর লুটপাট করছে। রাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা পাথর উত্তোলন করে। আর অদূরে দাঁড়িয়ে পুলিশ পাহারা দেয়। পাথরখেকোদের তাণ্ডবের ভয়ে ভোলাগঞ্জ কোয়ারির তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবাদ করেন না।’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন-  কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের শেল্টারেই এখন পাথর লুটের মহোৎসব চালানো হচ্ছে। কয়েক বছরে কালীবাড়ী-দয়ারবাজার রাস্তা খুঁড়ে পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। এতে অর্ধশতাধিক বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন ধরে ১০ নম্বর এলাকায় চলছে পাথর লুট। অথচ এই দশ নম্বর এলাকা হচ্ছে পর্যটন এলাকা সাদা পাথরের প্রবেশ পথ। ওখানে প্রতিদিন শত শত গাড়ি পার্কিং করা হয়। প্রতি রাতেই ১০ নম্বর এলাকা থেকে ১৫-২০ লাখ টাকার পাথর লুট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন- ১০ নং এলাকায় ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ডাম্পিং করা হয়। পাথর লুটপাটের ফলে ডাম্পিং এলাকাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। বরং পুলিশের শেল্টারে অবাধে পাথর লুট করা হচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় কলাবাড়ি গ্রামের চিহ্নিত পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা। তারা আগেও রেলওয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের মামলার আসামি ছিল। 

সম্প্রতি ভোলাগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে সংখ্য গড়ে তারা পাথর লুটপাটে নেমেছে। শুধু ১০ নম্বরই নয়, পর্যটন এলাকা সাদা পাথরও এখন পাথরখেকোদের কাছে নিরাপদ নয়। ইঞ্জিনচালিত ছোট অর্ধশতাধিক নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর লুটপাট করা হয়। আর প্রতি নৌকা থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে লাইনম্যান বলে পরিচিত এরশাদ, নুরই সহ তিনজন ১ হাজার করে উত্তোলন করে। ১০ নম্বর থেকে উত্তোলিত পাথরের নৌকা কিংবা ট্রাক্টর থেকে ৫০০ টাকা হারে তোলা হয়। আর এসব টাকা যায় ফাঁড়ি পুলিশের কাছে। রাতের বেলা অবাধে পাথর লুটপাটের ফলে সাদা পাথরে পাথর কমে আসছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তারা জানান- কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথরকে ‘সাদা সোনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ চুরির নামে প্রশাসনের শেল্টারে পাথর লুটপাট করে গোটা সাদা পাথরের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। সাদাপাথরের পাশেই রেলওয়ে বাংকার। কয়েক মাস আগে পাথর উত্তোলনে বাধা দেওয়ার কারণে বাংকারের ভেতরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে কুপিয়েছিল পাথরখেকোরা। 

এ ঘটনায় কিছুদিন পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফের পাথর লুটপাট শুরু হয়েছে। বাংকার খুঁড়ে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকার পাথর লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। আর এতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি করেন কলাবাড়ি সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন- রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও পুলিশের ভোলাগঞ্জ ফাঁড়ি ইনচার্জ শাহাব উদ্দিনের শেল্টার থাকায় সম্প্রতি পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে মানুষের বসতবাড়ি, সরকারি স্থাপনা কোনো কিছুই লুটপাট থেকে বাদ যাচ্ছে না। প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। তবে- কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- নুরুল ইসলামের বাড়ির মামলার তদন্ত আদালতের নির্দেশে দিয়েছেন। যে অভিযোগ করা হয়েছে সে ব্যাপারে সত্যতা মিলেনি। আর দশ নম্বর, সাদাপাথর, বাংকার এলাকা থেকে পাথর চুরি হচ্ছে, লুটপাট নয়। পাথর চুরি রোধ করতে প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুলিশের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। বলেন- চুরি রোধে শুধু পুলিশের নয়, বিজিবি, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীও রয়েছে। সবাই সক্রিয় হলে চুরি রোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status