ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পুলিশ শুনলে মানুষ আগে ভয় পেতো এখন ভরসা পায়

স্টাফ রিপোর্টার
৪ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার
mzamin

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগে মানুষ পুলিশকে ভয় পেতো। কিন্তু এখন কাছে আসে। মানুষকে পুলিশ সেবা দেয়, পাশে দাঁড়ায়। পুলিশ বাহিনী জনগণের পুলিশ হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের আস্থা অর্জন যেকোনো বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা সেই আস্থা অর্জন করেছেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা জনগণের সেবা করে যাবেন।  পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ প্যারেড মাঠে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পুলিশ সব সময় মানুষের পাশে আছে। যে কোনো দুর্যোগেই পুলিশ পাশে থাকে।

বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশ ভূমিকা রাখে। মানুষের জানমাল বাঁচাবার জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করে। যেকোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। এটাই হচ্ছে পুলিশের বড় কাজ যা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে পুলিশ আছে জনতার পাশে’- প্রতিপাদ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে গতকাল শুরু হয়েছে ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহের প্রথমদিন সকাল ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। 

তিনি পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল ও দৃষ্টিনন্দন বর্ণিল প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। এবারের বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন খুলনা রেঞ্জের পুলিশ সুপার কাজী মইন উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেন। পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ সপ্তাহ- ২০২৩ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং আইজিপি বাণী দিয়েছেন।  প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। অগ্নি সন্ত্রাসের কারণে ৫০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দগ্ধ হয়ে ২৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। আহত হয় আরও অনেকে।  বিএনপি, জামায়াত-শিবির যেভাবে হত্যা করেছে প্রকাশ্যে দিবালোকে, এভাবে পুলিশের গায়ে কখনো কেউ হাত দেয়!  তা কখনো দেখা যায় না। যদিও তা বাংলাদেশে ঘটেছে। এছাড়া সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ১১টি লঞ্চ পুড়িয়ে ধ্বংস করে। ৭০টি সরকারি ও ৬ ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়। সে সময় পুলিশের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে এই রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে রুখে দিয়ে জনগণের নিরাপত্তা দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য হলো, অনেক পুলিশ সদস্য আগুনে দগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন। কারো চেহারা এতো বিকৃত হয়েছে যে, তারা মানুষের সামনে যেতে পারেন না। 

 বাংলাদেশে এ ধরনের অগ্নি সন্ত্রাসের ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমি ধন্যবাদ জানাবো পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যারা সে সময় জনগণের সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাস বৈশ্বিক সমস্যা। হলি আর্টিজান ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরা যে যেই অবস্থায় ছিলেন ছুটে গিয়ে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। দু’জন জীবন দেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমরা জঙ্গির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান, শিশুসহ মানবপাচার মোকাবিলায় পুলিশ যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে চলেছে। এর পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আজ পুলিশ বাহিনী, বিশেষ করে নারী কন্টিনজেন্ট ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে। এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।  

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার পাহাড়ি এলাকায় কয়েকজন ছাত্র হারিয়ে গিয়েছিল। ৯৯৯-এ ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুলিশ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্সসহ পুলিশের সেবা পাওয়া যাচ্ছে এই ৯৯৯ ব্যবহার করে। নারী, শিশু ও বয়স্ক-প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা প্রদান সহজ হয়েছে। প্রতিটি থানায় নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। নারীবান্ধব বিভিন্ন অ্যাপ্‌স চালু করা হয়েছে, অনলাইন জিডিসহ বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এই স্মার্ট বাংলাদেশের পুলিশও হবে স্মার্ট ও আধুনিক। এরই মধ্যে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। সামনে সেবা আরও সহজ ও স্মার্ট হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখনই দেশ একটু ভালোর দিকে যায়, তখনই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হয়। এই বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এটি কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। এদিকে, গত বছরে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম-এ ভূষিত হয়েছেন ১১৫ পুলিশ কর্মকর্তা।

 গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাজ পরিয়ে দেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জানানো হয়, এবারের পুলিশ সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম পাচ্ছেন ১১৫ পুলিশ কর্মকর্তা। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২২ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২৫ জনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’ প্রদান করা হলো। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ৫০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ প্রদান করা হলো। পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ এর উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ প্যারেড, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, আইজি ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার পুরস্কার বিতরণ, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন। 

পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। পুলিশ সপ্তাহ শেষ হবে ৮ই জানুয়ারি। এছাড়া পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার হিসেবে আইজি ব্যাজ পাচ্ছেন ৪৫৮ জন পুলিশ সদস্য। আগামী বুধবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে তাদের এই ব্যাজ পরিয়ে দেবেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ব্যাজপ্রাপ্তদের হাতে সনদও তুলে দেয়া হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status