রকমারি
কোভিড কেড়ে নিয়েছিলো স্ত্রীকে, তারপর কি করলেন কলকাতার ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি?
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ বছর আগে) ৩ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:৩৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

স্ত্রীকে সর্বক্ষণ কাছে রাখতে তাঁর একটি সিলিকনের প্রতিমূর্তি তৈরী করিয়েছেন এই প্রৌঢ়
প্যারিসে মাদাম তুসোয় শোভা পায় মহাত্মা গান্ধী, অমিতাভ বচ্চন এবং শচীন টেন্ডুলকারের মোমের মূর্তি। কলকাতার মোমের মিউজিয়ামে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শাহরুখ খান, সালমান খান। কোভিড মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় কলকাতার কইখালী অঞ্চলের বাসিন্দা তাপস সান্দিল্য তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় স্ত্রী ইন্দ্রাণীকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু কথায় বলে ভালোবাসা মরেও মরে না, আর তাই স্ত্রীকে সর্বক্ষণ কাছে রাখতে তাঁর একটি সিলিকনের প্রতিমূর্তি তৈরী করিয়েছেন এই প্রৌঢ়। ভিআইপিতে ইন্দ্রাণীর প্রিয় স্থান তাঁদের বাসায় একটি সোফার ওপর মূর্তিটি বসানো হয়েছে। আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মূর্তিটি - আশ্চর্যজনকভাবে অত্যন্ত প্রাণবন্ত। প্রতিবেশী এবং বাইরে থেকে আসা অতিথিরা প্রায়শই ইন্দ্রানী দেবীর সিলিকনের মূর্তিটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। ৬৫ বছর বয়সী তাপস সান্দিল্য একজন অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। তিনি যেখানে থাকেন সেটি মূলত বাঙালি পাড়া। তাপস বাবু যদিও বলেছেন কোনোরকম মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বা মিডিয়ায় প্রচার পাবার জন্য তিনি এই কাজ করেননি। এটা তাঁর স্ত্রীর শেষ ইচ্ছে ছিলো। তিনি বলেন- “আমরা এক দশক আগে মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে গিয়েছিলাম এবং ভক্তিবেদান্ত স্বামীর প্রাণবন্ত মূর্তি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। তখন ইন্দ্রাণী আমাকে তার অনুরূপ মূর্তির ইচ্ছার কথা বলেছিল যদি সে আমার আগে মারা যায়। আমার স্ত্রী মারা যান ২০২১ সালের ৪ মে, আমি কেবল তার ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলাম। ''তাপস ইন্টারনেটে একজন ভাস্করের খোঁজ শুরু করেন। অবশেষে খোঁজা শেষ হয়, কয়েক মাস পর তিনি খুঁজে পান ভাস্কর সুবিমল দাসকে। বছর ৪৬ এর সুবিমল দাস জাদুঘরের জন্য সিলিকন প্রতিলিপি তৈরি করেন, তার কাছে এই কাজটি ছিলো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। সুবিমল বলছেন, এই ধরণের মূর্তির ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত ফেসিয়াল অভিব্যক্তি থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। তাই বিভিন্ন কোণ থেকে ইন্দ্রানীর মুখের ছবি প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। সেটি দেখে প্রথমে একটি মাটির মডেল তৈরী করেন, এরপর ফাইবারের ছাঁচ তৈরী করে সিলিকন ঢালাই করে তৈরী করে ফেলেন ইন্দ্রানী দেবীর মূর্তি। তাপসবাবু জানাচ্ছেন যেহেতু তিনি ইন্দ্রানী দেবীর সঙ্গে ৩৯ বছর ঘর করেছেন তাই ক্লে-মোল্ডিং পর্বের জন্য সুবিমলের সাথে তিনিও সমানভাবে কাজ করেছেন, কারণ তিনি খেয়াল রেখেছিলেন ইন্দ্রানীর আসল মুখের অভিব্যক্তির চেয়ে সিলিকন মূর্তির অভিব্যক্তি যেন কোনো অংশে কম না হয়। বারাসতের একজন দর্জির কাছে গিয়ে তিনি ইন্দ্রানীর জন্য স্পেশাল শাড়ির অর্ডার দিয়েছিলেন যেখান থেকে তাঁর স্ত্রী প্রায়শই শাড়ি কিনতেন। মূর্তিটির ওজন প্রায় ৩০ কেজি এবং সোনার গয়না পরিহিত। কারণ ইন্দ্রাণী জীবিত থাকাকালীন সোনার গয়না তাঁর প্রিয় ছিল। একটি মোমের তুলনায় একটি সিলিকন ভাস্কর্য তৈরী করা সহজ, যদিও সিলিকন মূর্তি অনেক বাস্তবসম্মত। তাপস সান্দিল্য জানাচ্ছেন -''আমার পরিবার এই ধারণার কঠোরভাবে বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু পাশে ছিলেন প্রতিবেশীরা।'' তাঁর পাল্টা প্রশ্ন - “যদি আমরা ঘরে ফ্রেমবন্দি ছবি রাখতে পারি, তাহলে কারো মৃত্যুর পর তার মূর্তি কেন নয় ?''
সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া