ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মুহিব-শামীমের ‘নতুন শুরু’

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১০ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার
mzamin

মোকাব্বির খান এমপি। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সিলেট-২ আসনের এমপি। বিগত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজ এলাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ তার বিরোধী। আবার বিএনপিও তার পক্ষে নেই। ফলে সজ্জন ব্যক্তি হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এলাকায় তেমন উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। তবে এমপি’র বরাদ্দ যথাযথভাবেই তিনি ব্যবহার করছেন। তৃণমূল পর্যন্ত এই বরাদ্দ পৌঁছে দিতে কাজ করেছেন। সিলেট-২ আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন
বিগত  দুই টার্ম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও দলীয় এমপি পায়নি এলাকার মানুষ। দলীয়ভাবে আসন ভাগ-বাটোয়ারায় কপাল পুড়ে এ আসনের মানুষের। তবে এবার আশার আলো দেখাতে পারেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মুহিবুর রহমান ও ওসমানীনগর উপজেলার  চেয়ারম্যান শামীম আহমদ। দু’জনই আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিক। তাদের হাত ধরেই হতে পারে এলাকার উন্নয়ন। সে আশায় বুক বেঁধে আছে দুই এলাকার মানুষ। 

গেলো সপ্তাহে নির্বাচিত দুই জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এখন করছেন ওয়ার্মআপ। বালাগঞ্জ উপজেলা ভেঙে প্রায় একযুগ আগে গঠিত হয়েছিল ওসমানীনগর উপজেলা। এরপর প্রথম নির্বাচনে এ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা ময়নুল হক চৌধুরী। বিএনপি নেতা হওয়ার কারণে তিনি উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। তবে সামাজিকভাবে তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। ফলে সামাজিক বন্ধন সূদৃঢ় করতে তিনি কাজ করেছেন। গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। আওয়ামী লীগ থেকে এ উপজেলায় প্রার্থী দেয়া হয় নতুন মুখ সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপিকে। ওসমানীনগরের সাদিপুর বাড়ি এ রাজনীতিক এখন সিলেটের রাজনীতিতে থিতু হয়েছেন। এলাকার সঙ্গে তার সংযুক্তি রয়েছে। এ কারণে ভোটের মাঠে তিনি অপর দুই প্রার্থীকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। তার স্ত্রী সুষমা সুলতানা রূহিও হচ্ছেন জেলা পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত সদস্য। নতুন উপজেলা ওসমানীনগর। এখনো উপজেলার কাঠামো সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি। এর বাইরে উন্নয়ন কাজও চোখে পড়ার মতো কিছুই হয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে শামীমের জন্য এলাকার উন্নয়ন ঘটানোই বড় চ্যালেঞ্জ। বন্যা এলে পানিতে ডুবে থাকে ওসমানীনগর। 

বিশাল শস্যভাণ্ডার শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি থাকে। প্রবাসী বিনিয়োগও শূন্যের কৌটায়। ওসমানীনগরের সামাজিকতায় চিড় ধরেছেন। প্রবীণদের শাসন কমছে। সব মিলিয়ে ওসমানীনগরের সামগ্রিক কাঠামো বিনির্মাণের মহাসুযোগ শামীমের সামনে। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন; ওসমানীনগরের উন্নয়নে কোনো টিমওয়ার্ক নেই। সরকারের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আসার মানুষও নেই। শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি থাকাকালে যে উন্নয়ন হয়েছিল সেটুকুই এখনো রয়েছে। সাবেক এমপি এহিয়াও কিছু উন্নয়ন করেছেন। ফলে কেন্দ্র থেকে উন্নয়ন প্রকল্প এনে তৃণমূল থেকে ওসমানীনগরের উন্নয়ন ঘটানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ভিপি। সিলেট নগরের রাজনীতি তার জন্য সহজ হলে ওসমানীনগরের রাজনীতি তার জন্য কঠিন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন তিনি। একারণে ওসমানীনগরের আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতি থেকে তিনি কিছুটা বাইরে। ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের সঙ্গেও শামীম আহমদের দূরত্ব রয়েছে। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে ওসমানীনগরের আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোও তার জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। এখন দেখার বিষয় আগামীতে শামীম কী করেন। প্রবাসী শহর বলা হয় বিশ্বনাথকে। 

অনেক আগেই বিশ্বনাথ পৌরসভা হওয়ার কথা ছিল। নানা জটিলতায় আর হয়নি। গত ৩-৪ বছর ধরে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। এবারই প্রথম নির্বাচিত পরিষদ পেলো বিশ্বনাথ শহরের মানুষ। কাউন্সিলররা প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। অনেকেরই আছে ইউনিয়ন পরিষদের অভিজ্ঞতাও। তবে প্রথম পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান এবার চমক দেখিয়েই বিশ্বনাথে নতুন করে অবস্থান সূদৃঢ় করেছেন। ভোটের মানুষ মুহিবুর রহমান। ভোট এলেই মুহিবুর রহমান আলোচনায়। ভোটকে করেন জয়ও। বিশ্বনাথ উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান তিনি। এবার হুট করেই প্রার্থী হয়ে প্রথম মেয়রও হয়ে গেলেন তিনি। বিশ্বনাথের মানুষের আস্থা আছে তার ওপর। আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান জাতীয় পার্টি ঘুরে ফের আওয়ামী লীগে। তবে এখন দলের অভ্যন্তরে তার অবস্থান সাইডলাইনে। এ কারণে স্বতন্ত্র হয়েই তিনি নির্বাচনে লড়াই করেন। আওয়ামী লীগ ছিল তার মূল প্রতিপক্ষ। আওয়ামী লীগকে হারিয়ে মুহিবের জয়; বিশ্বনাথের রাজনীতির নতুন মাত্রা। পৌরসভা হলেও বিশ্বনাথ এখনো গ্রামীণ শহর। 

সীমানা নির্ধারণে পরিপক্বতার অভাব ছিল। একারণে অনেক গ্রামীণ জনপদ ঢুকেছে পৌরসভায়। এখনো পৌরসভার কোনো সুবিধাই চালু হয়নি। কাঠামো তৈরি হয়নি  পৌরসভায়। নতুন একটি পরিষদ। নেতা মুহিবুর রহমান। ফলে অনেক চ্যালেঞ্জ মুহিবের কাঁধে। পৌরসভার অর্গানোগ্রাম গঠন করতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা হতে হবে। একইসঙ্গে চালাতে হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক বিশ্বনাথে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও শোচনীয়। পরিকল্পিত কোনো উন্নয়নই হয়নি। তবে প্রবাসী শহর হিসেবে প্রবাসীরাই অট্টালিকার পর অট্টালিকা নির্মাণ করে সাজিয়ে রেখেছেন বিশ্বনাথ। সেটিকে এখন পরিকল্পনায় নিয়ে আসতে হবে। গোটা শহরকে কাঠামোতে রূপ দেয়া। বিশ্বনাথের পরিবেশকে স্বাভাবিক করা। এসব কাজ এখন মুহিবের কাঁধে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর কিছুটা এলোমেলো ছিলেন। অগোছালো বিশ্বনাথ শহর দেখে অস্থির ছিলেন তিনি। এখন স্বাভাবিক হচ্ছেন। ইতিমধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নিজ পরিষদকে নিয়ে বৈঠক করেছেন নতুন করে সব শুরু করতে। আর এই শুরু বিশ্বনাথ শহরকে সত্যিকার অর্থে শহরে পরিণত করবে। তবে বিচলিত নয় মুহিব। সবার সহযোগিতা পেলে এগিয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা রয়েছে তার। নির্বাচিত হয়েই ঘোষণা দিয়েছেন পরিকল্পিত শহর গড়াই হবে তার অন্যতম কাজ। আছে চ্যালেঞ্জ। নিজে আওয়ামী লীগ নেতা হলেও আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে নেই; বরং প্রতিপক্ষ। ইতিমধ্যে আসনের এমপি মোকাব্বির খানের আনুকূল্য পেয়েছেন। উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার কথা দিয়েছেন এমপি। ফলে কিছুটা আশার আলো দেখছেন তিনি।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status