ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

কেন বাড়ছে আটা ময়দা, চিনির দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৭ নভেম্বর ২০২২, রবিবার
mzamin

দেশের মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ কোথাও চালের ঘাটতি নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এরপরও বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। সরকারি হিসাবে খাদ্যশস্য  মজুত প্রায় ১৭ লাখ টন। আমনের ভরা মৌসুমের নতুন চালও বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া আরও ২০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য অনুমতি দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবুও নানা অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। ওদিকে নানা অজুহাতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে চিনির দাম।  ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংকটের খবরে হঠাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল ক্রয়, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বাজার থেকে চাল ক্রয় এবং উৎপাদন খরচ বেশি, এই তিন অজুহাতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে এই নিত্যপণ্যের দাম। এ ছাড়া আগামী বছর সংকট হতে পারে সেই খবরে মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল কিনছে।

বিজ্ঞাপন
ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।  সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতে, সুরু চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৮ টাকা, মাঝারি বা পাইজাম চাল ২ টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা এবং মোটা চালের কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, টিসিবি’র তথ্যের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্যাকেট আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, আর খোলা আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৭২ টাকার ময়দা এ সপ্তাহে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকা কেজি দরের প্যাকেট ময়দা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা করে। ওদিকে গত ১৭ই নভেম্বর থেকে চিনির দাম আরও বেড়েছে। প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১০৭ টাকায়। যদিও বাজারে নির্ধারিত দামের চিনি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরবরাহ সংকটের কারণে বাজারভেদে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সব দোকানেই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। টিসিবি অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে চিনি বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৯০-১০০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৮.৪২ শতাংশ। আর এক বছর আগে ছিল ৭৫-৮০ টাকা। 

এ সময়ের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪৫.১৬ শতাংশ। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, চিনি নেই এমনটা বলা যাবে না, অপরিশোধিত চিনি আছে। আমরা পরিশোধনের পর প্রয়োজনমতো চিনি সরবরাহের চেষ্টাও করে যাচ্ছি। তবে গ্যাস সংকটের কারণে চিনির কয়েকটি কারখানা পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এ জন্য বাজারে প্রভাব পড়েছে।  গত ৬ই জুন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে এবার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা যে বাজার মনিটরিং করছি, তাতে মূল্য নিম্নমুখী। তারপরেও যেহেতু স্থিতিশীল বা পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে, ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয় এবং কৃষকেরও যেন অস্বাভাবিকভাবে ধানের দাম কমে না যায় সেটাকে ব্যালেন্স করতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশে চালের সংকট নেই। চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৪ লাখ টন চাল বেশি আছে। এই চাল রয়েছে সরকারি গুদাম, বড় চালকল মালিক ও কৃষক, ফড়িয়া, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। এমন অবস্থার পরও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বর্তমানে দেশে মোটা চালের কেজি ৪৬ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি ৫৪ থেকে ৫৮, আর সরু ৬২ থেকে ৭২ টাকা। এদিকে দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি হচ্ছে। 

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ মাসে ভারত থেকে প্রায় ৯০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চালের দাম। আমদানি স্বাভাবিক ও দেশীয় চাল বাজারে আসলেও দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ছে। চালের দামে নাভিশ্বাস ভোক্তা নাসির উদ্দিন বলেন, দেশের বাজারে নতুন ধানের চাল এসে গেছে। তারপরও দাম কমছে না। সরকারের নজরদারির অভাবেই চালের দাম কমছে না। তিনি বলেন, সরকার শুধু বলে সংকট নেই। আবার চাল আমদানির অনুমোদনও দেয়। আসলে মূল বিষয়টা সবাইকে পরিষ্কার করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করলে চালের বাজারও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বাবুবাজারের হাজী রাইস এজেন্সির মালিক জিয়াউল হক বলেন, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে আগামী বছর সংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক হতে বলেছেন। এরপর থেকেই হঠাৎ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাল কেনার প্রবণতা বেড়ে গেছে। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় দাম একটু বেড়েছে। মোটা ও চিকন সব ধরনের চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

 তবে মোটা চালের দাম একটু বেশি বেড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের মোকাম মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে চালের কোনো সংকট বা ঘাটতি নেই। বাজারে বর্তমানে বিক্রি হওয়া চাল প্রায় ছয়-সাত মাস আগের। মজুতও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে আমন চালও বাজারে চলে আসছে। সরবরাহ আরও বাড়লে দাম খুব একটা কমবে বলে মনে করছেন না মোকাম মালিকরা। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের সংকট নেই। দেশেও আমন কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। নতুন ধান উঠছে, বাজারে নতুন চাল আসছে। তবে চালের সংকট না থাকলেও অসৎ ব্যবসায়ীর সংকট নেই। নাই নাই শব্দের কারণে দাম বাড়ছে। অনেকেই চাহিদার চেয়ে বেশি চাল কিনছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সারা বছরে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন। 

আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট চাল আমদানি হয় ১০ লাখ ৬৭ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৩শে নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে চাল মজুত রয়েছে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ টন। এ ছাড়া মোট খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৬ লাখ ২৭ হাজার টন।  কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ওএমএসে চাল না পাওয়ার ফলেই খুচরা বাজারে সেই চাপ পড়ছে। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যবসায়ীদের লোভাস্ফীতির ফলেই দিনদিন দাম বাড়ছে চালের।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status