প্রথম পাতা
ভেনিসে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব
ডাবলু চৌধুরীর খোঁজে কুষ্টিয়ায়, যা জানা গেল
দেলোয়ার মানিক, কুষ্টিয়া থেকে
২৪ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারসম্প্রতি ইতালির ভেনিসে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশি ডাবলু চৌধুরী। তার এ বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে যেমন তৈরি হয়েছে রহস্য, তেমনি তাকে নিয়েও রহস্য কম নয়। মানবজমিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডাবলু চৌধুরীর জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা কুষ্টিয়ায়, বছর দু’য়েক ঝিনাইদহে একটি প্রতিষ্ঠানে পড়ার পর সেখান থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে রংপুর জেলার একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন।
আলোচিত ডাবলু চৌধুরীর পারিবারিক/বংশীয় পদবি চৌধুরী নয়। তার বাবার নাম আমিনুল ইসলাম এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। তার বাবা কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করতেন। ২০১৩ সালে মায়ের মৃত্যুর পর ডাবলু চৌধুরী কুষ্টিয়ায় এসে ৪/৫ দিন থেকে গেছেন বলে তার পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন।
কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ডাঁসা গ্রামের আব্দুল লতিফ জোয়ার্দার বাড়ি। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ডাবলুর কথা। এটি তার নানা বাড়ি।
ডাবলুর কাছের আত্মীয় স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। তিনিও ডাবলুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। ডাবলুর মা ফাতেমা বেগমের দূরসম্পর্কীয় এক ভাই বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের আদি নিবাস পাবনা জেলার বেড়া থানা এলাকায়। যদুবয়রায় চাকরি করতে এসে তাদের বোনের সঙ্গে আমিনুল ইঞ্জিনিয়ারের বিয়ে হয়। এই ডাঁসা গ্রাম থেকেই জানা গেছে ডাবলু ওরফে ডাবলু চৌধুরীর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।
কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা এলাকার জাহের আলী মিয়া সড়কে ঢুকেই বামদিকের দু’বাড়ি পর ৫তলা বিশিষ্ট বড় একটি বাড়ি। বাড়িটির প্রধান গেটের দু’পাশে বাংলা ও ইংরেজিতে শ্বেতপাথরের নামফলক। নামফলকের লেখার উপরের বেশির ভাগ কালো কালি উঠে গেছে। একটিতে বাংলায় লেখা “কিছুক্ষণ ফাতেমা নীড়” আলহাজ্ব মো. আমিনুল ইসলাম ইঞ্জিনিয়ার, ২২/৫৫ জাহের আলী মিয়া সড়ক, পেয়ারাতলা, কুষ্টিয়া। এটিই আলোচিত ডাবলু চৌধুরীর বাড়ি।
বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে কলিংবেল টেপার পর দোতলার বারান্দা থেকে একজন উঁকি দিয়ে জানতে চাইলেন কী চাই? ডাবলুর ব্যাপারে কথা বলতে চাই, বলতেই বললেন, তাদের সঙ্গে ডাবলুর কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি কিছু বলতে পারবেন না। অনেক অনুরোধের পর নিচে নেমে পরিচয় দিলেন তিনি ডাবলুর ছোট বোনের স্বামী আনারুল ইসলাম। বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে বলেন, ডাবলু ছোটবেলা থেকেই কুষ্টিয়ার বাইরে থেকেছেন, উনি লেখাপড়া করেছেন ঝিনাইদহে, তারপর ঢাকায়। সেখানে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করেছেন। এরপর বিদেশ গেছেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে মায়ের মৃত্যুর পর বাড়িতে (কুষ্টিয়ায়) এসেছিলেন। ৪/৫ বছর আগে বাবা আমিনুল ইঞ্জিনিয়ার মারা গেলেও বাড়িতে আসেননি ডাবলু। ডাবলু চৌধুরী সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। শ্বশুর অমিনুল ইসলামের পারিবারিক/বংশীয় পদবি চৌধুরী নয় বলেও জানান তিনি। পরিবারের (বোনদের) সঙ্গে ডাবলুর কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি আরও জানান, ডাবলুর বড় ভগ্নিপতি মারা গেছেন। বর্তমানে বাড়িটিতে পরিবারসহ আনারুল এবং তার স্ত্রীর বড় বোন ও তার সন্তানেরা থাকেন।
পেয়ারাতলা এলাকার আদি বাসিন্দাদের একজন ইয়ান আলী (বয়স আনুমানিক ৬০ বছর) জানান, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের তিন সন্তান। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ডাবলু মেজো। ছোটবেলা থেকেই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে ডাবলু বা তার পরিবারের তেমন মেলামেশা ছিল না।
ডাবলুদের বাড়িতে এখন তার দুই বোন থাকেন। ৫তলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়িটির দুই পাশে দু’টি ফ্ল্যাট বাদে বেশির ভাগ ফ্ল্যাটে ছাত্র-ছাত্রীদের মেস ও অন্য ভাড়াটিয়ারা বাস করেন। এদিকে, কুষ্টিয়া শহরের দু’জন সিনিয়র সাংবাদিক ডাবলু চৌধুরীকে চিনতে পেরেছেন। তারা বলেন, ডাবলু চৌধুরীকে চিনতাম। তিনি ঢাকায় বিভিন্ন মিডিয়ায় কাজ করেছেন এমনটাই জানতাম। সার্বিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ডাবলু চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ঠিক। তবে এই বিনিয়োগ হবে ভেঞ্চার ক্যাপিটালে। তার কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।