ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মেয়র আতিকের আফসোস

স্টাফ রিপোর্টার
১৫ মে ২০২২, রবিবার
mzamin

আফসোসে পুড়ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বার বার নির্দেশনার পরেও ফুটপাথ দখল, খাল দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, খেলার মাঠ ও পার্ক দখল অব্যাহত থাকায় তার এই আফসোস। এ অনুভূতি প্রকাশে কোনো রকম লুকোচুরি করেননি তিনি। খোলা মনে কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তবে আফসোস কাটাতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চান ঢাকা সিটি করপোরেশনের এই মেয়র। এজন্য নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে চান তিনি। গড়ে তুলতে চান সুস্থ ঢাকা, সচল ঢাকা ও আধুনিক ঢাকা। এরই মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দুই বছর অতিবাহিত করেছেন মো. আতিকুল ইসলাম। করোনাকালীন ২০২০ সালে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। রাজধানীকে ঢেলে সাজাতে অতঃপর একের পর এক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন
চষে  বেড়িয়েছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। রাস্তা সংস্কার, ফুটপাথ দখল মুক্ত, খাল উদ্ধার, মশক নিধনসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন তিনি। এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন মেয়র। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই গড়তে চান ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’। মেয়র বলেন, যারা ডেভেলপার আছেন, তারা প্ল্যান পাসের সময়ে খেলার মাঠ দেখায়। অথচ স্থাপনা নির্মাণ করার সময় সেই খেলার মাঠ রাখে না, যখন দেখি নগরবাসীর জন্য পার্ক নেই, বারবার বলার পরেও তাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা দেখি না, তখন সত্যিই আফসোস হয়। 
গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে  মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তিতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মানবজমিনের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে আর আফসোস নয়। নগরবাসীকে নিয়ে নগরের সৌন্দর্যে বিশৃঙ্খলাকারীদেরকে প্রতিহত করতে চাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বো। কি আছে জীবনে। কাজ করতে হবে। গত দুই বছরের ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের কার্যক্রমের সন্তুষ্টির বিষয়টি আমি জনগণের কাছে ছেড়ে দিয়েছে। সন্তুষ্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন আমার নগরবাসী।
মেয়র হিসেবে নির্বাচনকালীন দেয়া প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রশ্নে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। আমি মেয়র পদকে ক্ষমতা মনে করি না, এটা দায়িত্ব মনে করি। আমি জনগণকে নিয়ে কাজ করছি। মেয়র নির্বাচনের কিছুদিন পরপরই দেশে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম পাঁচ মাস লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু আমরা বসে থাকিনি। ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিতরণ করেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। যারা সহায়তার জন্য বার্তা কিংবা হেল্প লাইনে কল দিয়েছে সবার বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি। 
আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ইলেকটিক্যাল বাস চালু করতে চাই। এটি আমার স্বপ্ন। আমি ঢাকাকে আগামী ৫ বছরে ২০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে চাই। এ জন্য আমার সিটি করপোরেশনের বাসগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল বাস করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। নগরভবন সংশ্লিষ্টরা যাতায়াত করবেন এই বাসে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ঢাকার যানজট কমাতে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতে প্রাইভেট কারের বদলে বাস চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আতিক। তিনি বলেন, ঢাকার প্রাইভেট স্কুল-কলেজের জন্য বাস চালু করতে হবে। বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে আমরা লক্ষ্য করেছি, স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে প্রাইভেট কারের একটা প্রতিযোগিতা চলে। স্কুল, কলেজে পড়ুয়া ছোট ছোট বাচ্চারা বলাবলি করে, কার কী ‘কার’ আছে। আর বাচ্চাদের আবদার মেটাতে অভিভাবকরা নতুন নতুন গাড়ি কেনার প্রতিযোগিতা করে। এতে সড়কে দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। স্কুল বাস চালু হলে এই প্রতিযোগিতার অবসান হবে। যার ফলে যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে। তিনি বলেন, আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, স্কুল-কলেজের আশপাশের এলাকায় প্রাইভেট কারের জন্য যানজট লেগে থাকে। স্কুল বাস চালু করলে এই যানজটটুকু থাকবে না। আর স্কুল-কলেজ বাস চালু করলে আমি কথা বলে তাদের জন্য এই বাসগুলোর ট্যাক্স কমিয়ে দেবো। 
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ঝুঁকি বিগত বছরের চেয়ে পাঁচগুণ বেশির আশঙ্কা রয়েছে। এডিস নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে  মেয়র বলেন, ডেঙ্গু বা এডিস নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। এজন্য নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় জন্ম নেয়। নগরবাসীকে প্রতি শনিবার সকাল ১০টায় ১০ মিনিট নিজ আঙিনা পরিষ্কার করতে হবে। ডিএনসিসিও তার সাধ্যমতো কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, আমরা অ্যাপস করেছি, নগরবাসীকে আমি আহ্বান জানাবো আপনারা তথ্য দিন। আমরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম করেছি। তথ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিম চলে যাবে। আপনার বাসার আশেপাশে স্প্রে করবে, যাতে লার্ভা এবং মশা দুটিই ধ্বংস হয়।
মেয়র আরও বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকার থানাগুলোর সামনে পুরনো গাড়ি দীর্ঘ বছর যাবৎ পড়ে আছে। এসব গাড়ির বিভিন্নস্থানে পানি জমে আছে। ডেঙ্গুর জন্য এটাও দায়ী। আমি থানায় ফোন করলে তারা বলেন- এগুলো মামলার আলামত, সরানো যাবে না। আমি মহামান্য আদালতের কাছে দাবি জানাচ্ছি- এখন ডিজিটাল যুগ, ছবি তুলে ভিডিও করে আলামতগুলো রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। এই গাড়িগুলো থেকে এডিস মশার উৎপত্তি হয়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকে, পানি জমে আর উৎপত্তি হয় এডিস মশার। ১৭ই মে থেকে ২৬শে মে পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। করোনাভাইরাস কমেছে, আমরা ডেঙ্গু চাই না। 
খাল উদ্ধারে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়ার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, আমরা ঢাকা ওয়াসা থেকে ২৯টি খালের দায়িত্ব পেয়েছি। এসব খাল অনেক আগেই দখল হয়ে গেছে। উদ্ধারে গিয়ে দেখি খালের উপর বড় বড় স্থাপনা। কোথাও কোথাও খালের চিহ্ন নেই। এর মধ্যেও আমরা কাজ করেছি। এখন ড্রোনের মাধ্যমে খালের সীমানা নির্ধারণ চলছে। এখানে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সকল খাল ফিরিয়ে আনা হবে। ড্রোনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হলে পিলার বসানো হবে। সেই পিলার কারও ড্রয়িং রুমে পড়তে পারে, কারও বারান্দায়- এমনকি থাকার ঘরেও পড়তে পারে। 
তিনি বলেন, রূপনগরের খালের উপরে যারা দখল নিয়ে আছেন সরে যান। অবৈধ দখলদারদের আমি কোনো বৈধ নোটিশ দেব না। বিনা নোটিশে আমি খাল উদ্ধার করবো। আপনারা সরে যান প্লিজ। রূপনগর খাল উদ্ধার করতে তুরাগ নদীতে সংযোগ করবো, যাতে করে জলজট কমানো যায়। অনেক বড় বড় খাল উদ্ধার করেছি। যেভাবেই হোক রূপনগর খালও উদ্ধার করবো। কোনো প্রভাবশালীও ঠেকাতে পারবে না। 
হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আতিক বলেন, এখন থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স   দিতে গ্রাহকদের আর ভোগান্তি হবে না। আমরা নো ক্যাশ ট্রানজেকশন ব্যবস্থা চালু করেছি। এখানে কোনো গ্রাহককে সরাসরি হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে না। সরাসরি ট্যাক্স দিতে গেলে কর্মকর্তারা সুযোগ পেয়ে যায়। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা নানা ধারা বের করে। অবৈধ আয়ের জন্য তারা গ্রাহককে নানা ভাবে হয়রানি করে। তারা তখন নানা ধরনের ব্যবস্থা দেখায়, বিশেষ করে ফ্ল্যাটের মাপ, ড্রইং রুমের মাপ, বারান্দার মাপ। যার কারণে একজন গ্রাহক বিরক্ত হয়ে সরাসরি কন্ট্রাক্টে চলে যায়। এই ব্যবস্থাই আর রাখছি না। 
যানজট নিরসন নিয়ে ডিএনসিসি’র মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে যানজট নিরসনে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন নবনির্মিত সেতু ভবন ও বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) ভবন ভেঙে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এই শহরের পরিবেশ বা নাগরিকদের সুবিধার্থে কাওরান বাজারের বিজিএমইএ ভবন ভাঙা যেতে পারলে এই দুটি ভবন কেন ভাঙা যাবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। তিনি বলেন, মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবন ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুটি ভবনের কারণে সড়কটি চওড়া করা যাচ্ছে না। মহাখালী উড়াল সড়কে গাড়ি উঠতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দিনভর এ সড়কে যানজট লেগে থাকে। সেখানে ইউটার্ন নির্মাণ করেও তার সুফল মিলছে না। তাই ভবন দুটি ভেঙে ফেলতে হবে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে ডিএনসিসি’র  ইউলুপ নির্মাণ নিয়ে মেয়র বলেন, ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা বা প্রকল্পটি ডিএনসিসি’র প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ছিল। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু সড়ক পর্যাপ্ত চওড়া না হওয়ায় এই ইউলুপগুলো কাজে আসেনি। বিশেষ করে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন একটি ইউলুপ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকার ইউলুপটি সুফল মেলেনি।  চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন ইউলুপটি কাজে না আসার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ সড়কের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবন। এখন এই দুটি ভবনের জন্য সড়কটি চওড়া করা যাচ্ছে না। ফলে ইউলুপ করার পরও গাড়ি ঘুরতে পারছে না। মহাখালী উড়াল সড়কে গাড়ি উঠতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ উদ্যোগ ভবন দুটি ভেঙে ফেলার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, কাউন্সিলরবৃন্দ এবং ডিএনসিসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status