শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা মার্কিনিদের অবিলম্বে রাশিয়া ত্যাগের সতর্কতা

এ এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। চারদিকে শুধুই আতঙ্ক। কি ঘটতে যাচ্ছে ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে এসে রাশিয়ার সঙ্গে চারটি অঞ্চল যুক্ত হওয়া নিয়ে! ওই অঞ্চলগুলোতে গণভোটের পরও রাশিয়ার বিরুদ্ধে অব্যাহত পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়   ঘোষণা করেছে ইউক্রেন। রাশিয়াও কঠোর অবস্থানে। একবার এই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলেই রাশিয়া তা রক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতেও কুণ্ঠিত হবে না। আগেই এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ অবস্থায় মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে রাশিয়া ত্যাগের সতর্কতা দিয়েছে মস্কোতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। সেখান থেকে নিরাপত্তা এলার্ট ইস্যু করা হয়েছে। দূতাবাসের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ান-মার্কিন দ্বৈত নাগরিকদের ডাকা হতে পারে। কারণ, ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়ান সরকার সেনা সমাবেশ করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী মার্কিনিদেরকে রাশিয়া স্বীকৃতি নাও দিতে পারে। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলার সহায়তা থেকে বঞ্চিত করতে পারে। তাদেরকে রাশিয়া ত্যাগ করতে বাধা দিতে পারে। দ্বৈত নাগরিকদেরকে সামরিক সার্ভিসে যুক্ত করা হতে পারে। যারা রাশিয়ার  ভেতরে বসবাস করছেন অথবা ওই দেশটি সফর করছেন অবিলম্বে তাদের দেশটি ছেড়ে যাওয়া উচিত। এখনো সফরের বাণিজ্যিক সুযোগ সীমিত রয়েছে। স্বল্প সময়ের নোটিশে এই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সতর্কতা জোরদার করেছে ইসরাইল।

  লুহানস্ক, দনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনের জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। একে কেন্দ্র করে ভয়াবহ এক পারমাণবিক যুদ্ধের আলামত দেখা দিয়েছে। ভয়ে রাশিয়া এবং ওইসব অঞ্চলের মানুষ জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে আড়াই লাখ মানুষ দেশ ছেড়েছে। ওদিকে গণভোট এবং ওই অঞ্চলগুলোকে দখল করে নেয়ার মনোভাবের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও অবরোধ দেয়ার দাবি উঠেছে। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ লাইন নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২ চিরদিনের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই গ্যাস পাইপলাইনে ভয়াবহ ‘লিক’ দেখা দিয়েছে। তা দিয়ে তীব্রবেগে গ্যাস বেরিয়ে আসছে। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এটাকে স্যাবোটাজ বলে অভিহিত করেছে। এর জবাব দিয়েছে ক্রেমলিন। তারা বলেছে- এমন অভিযোগ ‘স্টুপিড ও উদ্ভট’। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছে ইউক্রেনের চার অঞ্চলের জনগণ। দনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনের গণভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৭শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে এই ভোট।

 এতে সবক’টি অঞ্চলের ভোটারই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না বলে আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো।  অনলাইন আরটি জানিয়েছে, লুহানস্কের ৯৮ শতাংশ ভোটই পড়েছে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে। অপরদিকে দনেৎস্কের ৯৯ শতাংশ ভোটারই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। জাপোরিঝিয়াতে এই হার ৯৩ শতাংশ এবং খেরসনে ৮৭ শতাংশ। এরমধ্যে দনেৎস্ক ও লুহানস্ক ২০১৪ সালে নিজেদের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় এবং ২০২২ সালে রাশিয়া তাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। অপরদিকে জাপোরিঝিয়া ও খেরসন ইউক্রেন থেকে ভেঙে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। কবে নাগাদ এই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হবে তা এখনো অনিশ্চিত। কারণ, রাশিয়াকে এ নিয়ে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। লাগবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের স্বাক্ষরও। যদিও শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ জানান যে, এই প্রক্রিয়া যত দ্রুত হওয়া সম্ভব তত দ্রুতই শেষ করা হবে।  ইউক্রেন ও পশ্চিমারা বলেছে, ওই ৪টি অঞ্চল দখলে এটি রাশিয়ার একটি আইনি অজুহাত তৈরির অবৈধ, দমনমূলক প্রক্রিয়া। 

গত সপ্তাহে পুতিন বলেন, রাশিয়ার ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষায় তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবেন না। গণভোটের পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা ভোটের শাস্তি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে রাশিয়ার ওপর আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, রাশিয়ার এই উদ্যোগ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনবে না। কিয়েভ বারবার সতর্ক করে বলেছে, রাশিয়ার অতিরিক্ত অঞ্চল দখল করলে তা শান্তি আলোচনার যেকোনো সুযোগ নষ্ট করে দেবে। এতে বলা হয়েছে, যেসব ইউক্রেনীয়রা রাশিয়াকে ভোট আয়োজনে সহায়তা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হবে। পুতিন মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, জাতিগত রাশিয়ান ও রুশভাষীদের রক্ষা করতে এই ভোট। যা কিয়েভ অস্বীকার করেছে। তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে এই গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানকার মানুষকে বাঁচানো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। এর আগে মস্কো হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, এই গণভোটে যেসব অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে ভোট দেবে সেখানে কোনো হামলাকে রাশিয়া নিজের উপরে হামলা বলে গণ্য করবে। 

তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা মঙ্গলবার বলেন, নিজেদের ভূখণ্ড উদ্ধার করার সব অধিকার আমাদের আছে। রাশিয়া যাই বলুক না কেন ইউক্রেন এসব অঞ্চলকে উদ্ধারে যুদ্ধ করে যাবে। গ্যাস পাইপলাইনে লিক নিয়ে জার্মান পত্রিকা তাগেসস্পাইজেল রিপোর্টে বলেছে, নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২ চিরদিনের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামত না করা হলে লবণাক্ত পানি তাতে প্রবেশ করে এই পাইপলাইনের মারাত্মক ক্ষতি করবে। এ ঘটনা এতটাই জটিল যে, বিশেষজ্ঞরা এবং জার্মান সরকারের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ কাজ একমাত্র রাষ্ট্রীয় অ্যাক্টররাই করতে পারে। পত্রিকাটি বলেছে, একটি ঘটনা এমন ঘটতে পারে যে, ওই গ্যাস পাইপলাইনের টিউবে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরক বসানো হয়েছিল।

 নর্ড স্ট্রিম ১ গ্যাস পাইপলাইন রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে উত্তর-পূর্বদিকে বাল্টিক সাগর হয়ে জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার গিয়েছে। ২০১১ সালে এই পাইপলাইন চালু করা হয়। দিনে রাশিয়া থেকে এর মাধ্যমে গড়ে সর্বোচ্চ ১৭০ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয় জার্মানিকে। অন্যদিকে এর পাশাপাশি সমান্তরালে দ্বিতীয় আরেকটি পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ২ নির্মাণকাজ শেষ হয় গত বছর। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে এই প্রকল্প স্থগিত রাখা হয়েছে। এই লাইনে কখনোই গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়নি। এ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্যাবোটাজের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে গ্যাস পাইপলাইনে ‘সন্ত্রাসী হামলার’ জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে ইউক্রেন। জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এমন অভিযোগ বাজে কথা এবং উদ্ভট।