শেষের পাতা
করতোয়া ট্র্যাজেডি
লাশের সংখ্যা বেড়ে ৬৮, স্বজনদের আহাজারিতে ভারী পঞ্চগড়ের বাতাস
পঞ্চগড় ও বোদা প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবারকরতোয়া ট্র্যাজেডিতে কান্না থামছে না স্বজনহারা পরিবারগুলোতে। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা। গতকাল উদ্ধার করা হয়েছে আরও ১৭ জনের লাশ। এ নিয়ে লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৮ জনে। সকাল থেকেই লোকজন নিখোঁজ স্বজনদের মরদেহের খোঁজে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট ও আশপাশের এলাকা এবং মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে খোলা তথ্যকেন্দ্রে ভিড় করতে থাকে। স্বজন হারানোরা বলছেন, তিন দিন ধরে লাশের জন্য হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। বোদা উপজেলার ধনিপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপক চন্দ্র রায়ের ছিল দু’জন মেয়ে। একজন ভূমিকা (১৫) ও অপর জন বৃষ্টি (৮)। ওই নৌকাডুবিতে তারা দু’জনই মারা গেছে। দু’দিনে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
দু’মেয়েকে হারিয়ে দীপক ও তার স্ত্রী ছন্দা রানী পাগলপ্রায়।
শুরু হয় শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কোনো পুুরুষ মানুষ নেই। এক নারী জানান, মরদেহ সৎকারের জন্য বাড়ির সব পুরুষ চলে গেছে পার্শ্ববর্তী শ্মশান ঘাটে। বাড়ির উঠোনে চেয়ারে নির্বাক বসে রয়েছেন জলেশ্বরী রানী। মাঝে মাঝে পাগলের মতো কী যেন বকছেন। তার মতোই নির্বাক আরেক বৌমা নিহত দীপংকরের মা সুনিতা রানী। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা সুনিতা রানী। বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। ছেলেকে হারিয়ে প্রলাপ বকছেন। এদিকে, উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিনে গতকাল কুয়াশাঘেরা সকাল থেকে উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে স্থানীয় উদ্ধারকারীরা।
দুর্ঘটনাস্থলের ভাটি অংশ থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে মরদেহ। দুর্ঘটনার নিহত স্বজনদের দাবি ধীরগতিতে উদ্ধারকাজ চলার কারণে এখনো অনেক মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয়দের মতে, মরদেহ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের কোনো অবদান নেই। স্থানীয়রাই নিজ উদ্যোগে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। হাত ধরে কয়েকজন দল বেঁধে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন স্থানীয় উদ্ধারকারীরা। তারা অভিযোগ করেছেন সকাল থেকে সারাদিন তারা উদ্ধারকাজ চালালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোনো ধরনের খাবার ও পানি সরবরাহ করছে না। বোদার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী এলাকার জয় বলেন, রোববার বোদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য আমার ৭ জন আত্মীয় নৌকায় উঠেছিল।
শুরুতেই একটি শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সুস্থ হওয়ার পর তাকে বাড়িতে এনেছি। স্থানীয় উদ্ধারকারীরা ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। ফায়ার সার্ভিস কোনো কাজ করেনি। তারা আমাদের কোনো উপকার করছে না। এখনো একজন শিশু নিখোঁজ রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর কুমার রায় বলেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ জন ও সোমবার ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে তিন দিনে উদ্ধার করা লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৮ জনে। আমাদের উদ্ধারকর্মীরা সার্বক্ষণিক এলাকায় অবস্থান করে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।