ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সরজমিন

শোকে স্তব্ধ রাজনগরের তুলাপুর গ্রাম

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার
mzamin

স্বজনদের গগনবিদারী ক্রন্দন আর আহাজারিতে ভারী রাজনগরের তুলাপুর গ্রামের পরিবেশ। জমি নিয়ে প্রতিবেশী  দুই ব্যক্তির বয়ে চলা বিরোধ ও সংঘর্ষ থামাতে এবং অন্যদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিজেরাই প্রাণ দিলেন। ওই প্রাণঘাতী সংঘর্ষ থামলো ঠিকই। কিন্তু তরতাজা আপন দুই ভাই ঘরে ফিরলেন লাশ হয়ে। মর্মান্তিক ওই ঘটনায় পুরো জেলার মানুষই হতবাক। গতকাল রাজনগরসহ জেলাজুড়ে আলোচনা ছিল আপন দুই ভাইয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে। সকালে তুলাপুর গ্রামে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দু’পক্ষের সালিশ বিচার করতে গিয়ে ও সংঘর্ষ থামাতে যেয়ে খুন হন তুলাপুর গ্রামের দুই যুবক যারা সম্পর্কে আপন ভাই হেলাল মিয়া (৩৮) ও কাজল মিয়া (২২)। আর আহত হয়েছেন ফতেহপুর ইউনিয়নের ৩ বারের ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমান (৫০) সহ অন্তত ১৫ জন। এরমধ্যে গুরুতর আহত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭ জন।  খুনের শিকার হেলাল মিয়া ও কাজল মিয়ার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে জড়ো হওয়া গ্রামবাসীরা জানান, শুক্রবার বিকাল আড়াইটার দিকে ঘটে ওই হামলার ঘটনা।

বিজ্ঞাপন
তারা জানান, তুলাপুর গ্রামের হোমিও ডাক্তার ধীরুদাশ প্রায় ২০ বছর আগে তুলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব দক্ষিণ পাশে ২২ শতক শাইল শ্রেণির জমি বিক্রি করেন পার্শ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলার শান্তি বাবুর কাছে। কিন্তু ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রির পরও জমি দখল ছিল ধীরুদাশের কাছে। তিনি শর্তসাপেক্ষে (ভাগি/বর্গা হিসেবে) শান্তি বাবুর কাছে বিক্রির পরও ওই জায়গা দেখভাল ও কৃষিকাজ করতেন।

 ওদিকে গেল কয়েক বছর আগে ওই জায়গা শান্তি বাবু বিক্রি করেন পার্শ্ববর্তী উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের রাজু দাশের কাছে। কিন্তু রাজু দাশ ওই জায়গার দখল নিতে পারছিলেন না। ওই জায়গায় দখলে গেলে বাধা দেন ধীরু দাশ। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ হলেও সমাধান হয়নি। শুক্রবার বাদ জুমা বিরোধপূর্ণ ওই জায়গার পাশেই ছিল মীমাংসার জন্য বৈঠক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ওই দিন বিকালে সদাপুর গ্রামের রঙ্গেশ দাশের বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাজু দাশ ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন লোক অস্ত্রসহ গাড়িযোগে ঘটনাস্থলে আসতে থাকে। ওই সময় রাজুর পক্ষে জায়গা বুঝিয়ে নিতে সালিশ বিচারে অংশ নিতে সঙ্গে ছিলেন জায়গা বিক্রেতা শান্তি বাবু (শান্তি চৌধুরী), খছরু মিয়া, রঙ্গেশ দাশ ও ইসলাহ মুহুরী। এ ছাড়াও রাজুর পক্ষে সিলেট থেকে আসেন আরও ১২-১৫ জন লোক। তারা সবাই বৈঠকের স্থানে জড়ো হয়ে বিরোধপূর্ণ ওই জায়গায় গাছ লাগাতে থাকেন। এতে ধীরু দাশের লোকজন বাধা দিয়ে গাছের চারা তুলে ফেলতে চাইলে হট্টগোলের শুরু হয়। এ সময় ওই ঘটনার সালিশ বিচারক ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমান এসে উভয়পক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন।

 বিষয়টি বৈঠকে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত না করে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজু দাশ ও সঙ্গে থাকা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত রাজু দাশের ভাইসহ অন্যরা ইউপি সদস্য লুৎফুর রহমানকে বেদড়ক মারধর করতে থাকে এবং গাছের চারা লাগাতে থাকে। লুৎফুর রহমানকে মারধর করা হচ্ছে এমন খবর তার বাড়িতে পৌঁছালে জুমার নামাজ শেষ করে বাড়ি না যেয়ে নিহত দুই ভাইসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে ছুটেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রাজু দাশ তার ভাইসহ অন্যরা চাইনিজ কুড়াল, রাম দাসহ অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।  হেলাল মিয়া তার ভাই কাজল মিয়াসহ ছুটে আসা অন্যরা সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি  কোপানো হয়। একতরফা আক্রমণে ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় লুৎফুর রহমানের ভাতিজা দুই ভাইয়ের। ওই সময় এলাকাবাসী ঘেরাও দিয়ে হামলাকারী ৫ জনকে আটকে রেখে রাজনগর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। নিহত দুই ভাই তুলাপুর গ্রামের মৃত নুর মিয়া ও  খয়রুন বিবি দম্পতির দুই ছেলে।

 ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে হেলাল মিয়া বড় ও কাজল মিয়া সবার ছোট। হেলাল মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া ১০ম শ্রেণি ও মেয়ে  সীমা বেগম ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ১২-১৩ শতকের বাড়িতে বসবাস ওই শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী পরোপকারী পরিবারটি আর্থিক অনটনের মধ্যেই দিনাতিপাত করছে। এই দু’জনের আয় রোজগার দিয়েই চলতো সংসার। নিহতদের বয়োবৃদ্ধ মা খয়রুন  বেগম (৬৫) বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুই ছেলে হত্যার বিচার চাইছেন। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করেছেন এলাকাবাসী। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশের অপেক্ষায় থাকা পরিবার ও স্বজনরা জানান লাশ বাড়িতে পৌঁছালে পারিবারিক কবরস্থানেই তাদের দাফন করা হবে। পরিবারের সদস্যরা জানান, এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status