ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

বাবাকে ঠিকমতো চেনাও হয়নি শাওনের ছেলেটির

ফাহিমা আক্তার সুমি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার
mzamin

সন্তানকে হারিয়ে স্তব্ধ বাবা-মা। চলছে শোকের মাতম। তাদের কান্না যেন থামছে না। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী আকাশ-বাতাস। দুই বছর আগে শহিদুল ইসলাম শাওন ঘর   বাঁধেন সাদিয়ার সঙ্গে। তাদের কোলজুড়ে আসে একটি ছেলে সন্তান। এক বছরের শিশু আবরার সাহাদ চেনার আগেই তার বাবাকে হারিয়েছে। শাওনের বাবা সওয়াব আলী ভূঁইয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ চালান। অল্প বয়স থেকেই সংসারের হাল ধরতে বাবার পাশাপাশি শাওন নিজেও অটোরিকশা চালাতেন। তিনি মিরকাদীম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী ছিলেন। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। গত বুধবার মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র কর্মসূচি ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাওনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এরপর থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শাওনের মেজো ভাই সোহানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমার ভাইটিকে ওরা গুলি করে মেরে ফেললো। ভাইয়ের লাশের অপেক্ষায় ঢামেকের মর্গের সামনে বসে আছি আমি আর বাবা। আমার ভাই কি আর কখনো ফিরে আসবে না। আমরা কি জবাব দেবো আমার ছোট ভাতিজা আবরার সাহাদকে। 

বাচ্চাটা বাবা হারা হয়ে এতিম হয়ে গেল। ওর মাকেই বা কি বলে সান্ত্বনা দিবো। ভাইয়ের সাজানো সংসারটা ভেঙে গেল। ঘটনার দিন দুপুরে ভাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে বলেছিল, আমি ঘুরতে যাচ্ছি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবো। ভাবিনি এভাবে ভাইয়ের নিথর দেহ বাড়ি ফিরে যাবে। তার স্ত্রী-সন্তানের কি হবে? আমাদের কেমন লাগছে তা আমরা জানি। বাচ্চাটা এখন তার বাবাকে ভালো করে চিনতেও পারলো না। লাইফ সাপোর্টে ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মারা যান। তিনি আরও বলেন, একজন গুলিবিদ্ধ মানুষকে আধা ঘণ্টা আটকে রেখেছিলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একটা গুলিবিদ্ধ মানুষকে আধা ঘণ্টা আটকে রাখলে কতটুকু রক্তক্ষরণ হয়? আরও কিছুক্ষণ আগে নিয়ে আসতে পারলে হয়তো আমার ভাই বেঁচে যেতো। ভাইয়ের মাথা থেকে এত পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়েছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত রক্তে ভেজা ছিল। লুঙ্গি, গেঞ্জি সব রক্তে ভেজা। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। বিচারই বা কার কাছে চাইবো। আমার ভাতিজাকে কীভাবে মানুষ করবো? আমি অল্প বেতনের একটা চাকরি করি। কীভাবে চলবে আমাদের পরিবার। ভাইয়া আবরার সাহাদকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। 

তার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ভালো করে পড়াশোনা করাবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন কে পূরণ করবে। বড় ভাই পরিবারে অনেক সাপোর্ট দিতো। এখন আমি একা হয়ে গেলাম। কীভাবে পরিবারকে সামলাবো। বাবার তো বয়স হয়েছে। শাওনের মৃত্যুর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের অন স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারের সামনের মেঝেতে বসে কাঁদছিলেন শাওনের বাবা সওয়াব আলী ভূঁইয়া। তখন শাওন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাতে থাকা মুঠোফোনে বারবার ছেলের রক্তমাখা ছবি দেখছিলেন। তিনি বলেন, আমি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। আমার ছেলেও অটোরিকশা চালাতো। গত বুধবার শাওন বাড়ি থেকে বের হয়ে বিএনপি’র মিটিংয়ে যায়। সেখানে মারামারি শুরু হয়। এরপর পুলিশ গুলি ছুড়লে শাওনের মাথার পেছনে লেগে কপালের সামনে দিয়ে বের হয়। সে বিএনপি’র একজন কর্মী ছিল। মাঝে মাঝে মিটিং-মিছিলে অংশ নিতো। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে ওইখানের লোকজন তাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার জন্য বলেন চিকিৎসকরা। শাওনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তখন আমরা খবর পাই।

 এরপর যখন সদর হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে আসার জন্য এম্বুলেন্সে রওনা দিবে তখন ছাত্রলীগের লোকজন বাধা দেয়। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা এম্বুলেন্স আটকে রাখে। গ্রামের লোকজন এম্বুলেন্স আটকানোর বিষয়টি আমাদের জানায়।  তিনি আরও বলেন, মুন্সীগঞ্জ থানার মিরকাদীমে আমাদের বাড়ি। আমার চার ছেলে ও এক মেয়ে। শাওন সবার বড়। দুই বছর হলো বিয়ে করেছে। তার এক বছরের একটি ছেলে রয়েছে। শাওন আমার পাশাপাশি পরিবারের অনেক সাহায্য করতো। আমি গরিব মানুষ তাদের কীভাবে চালাবো। মেজো ছেলেটা অল্প বেতনে ঢাকায় চাকরি করে। আর দুই ছেলে ছোট। শাওনের মা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সারাদিন শুধু ছেলের জন্য কাঁদছে। উল্লেখ্য, গত বুধবার মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র কর্মসূচি ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন।              

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status