ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে সারদা হল নিয়ে কেন এই নাটকীয়তা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

সুরমার তীরঘেঁষা সিলেটের সারদা হল। সংস্কৃতির সূতিকাগার এই হল। প্রায় ৮৬ বছর ধরে সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণ এই হল। কিন্তু এটি এখন নিষ্প্রাণ। ওখানে যান না সংস্কৃতিকর্মীরা। যাওয়ার পরিবেশও নেই। সিটি করপোরেশন ডাম্পিং ইয়ার্ড সারদা হলের সামনে। ভেতরে আছে সিটির কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারও। 

এক যুগ আগে নিয়ে আসা পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারের বই স্তূপ করে রাখা হয়েছে সারদা হলের ভেতরে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। বার বার সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হলেও কাজ হয়নি।

বিজ্ঞাপন
এখন সংস্কৃতিকর্মীরা দিয়েছেন আন্দোলনের ডাক। সারদা হল যেন সাংস্কৃতিকর্মীদের জন্য অবারিত করা হয়- এই দাবিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে আন্দোলন। এতে ঐক্যবদ্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা। তাদের দাবি ‘এই নাটকীয়তার শেষ কোথায়। বিগত ১২ বছর ধরে বলা হচ্ছে, দাবি তোলা হচ্ছে। বার বার পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করছেন না।’ সিলেটের ক্বীন ব্রিজ। পাশেই নবাব আলী আজমের সেই ঐতিহাসিক ঘরি। তার পাশেই সারদা হল। সারদা স্মৃতি ভবন। 

৩৯ শতক জায়গার উপর সারদা হলের অবস্থান। এখন সেখানে আছে রেড ক্রিসেন্টের একটি ভবন। স্বদেশি আন্দোলনের নেতা, আইনজীবী, শিক্ষানুরাগী ও চা-ব্যবসায়ী সারদাচরণ শ্যামের স্মৃতি রক্ষার্থে ছোট ভাই বিমলাচরণ শ্যাম ১৯৩৬ সালের ২০শে জানুয়ারি মিলনায়তনটি স্থাপন করেন। মিলনায়তনের নাম ‘সারদা স্মৃতি ভবন’ হলেও এটি সারদা হল নামেই পরিচিত। সিলেটের প্রবীণ সংস্কৃতি কর্মীরা জানিয়েছেন, আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে মিলনায়তনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। 

২০০৫ সালের ২৮শে মে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নির্দেশনায় মিলনায়তনের মূল অবকাঠামো ও অবয়ব ঠিক রেখে সিলেট জেলা পরিষদ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সংস্কার শেষে ২০০৬ সালের ১লা এপ্রিল ভবনের উদ্বোধন হয়। এর কয়েক বছর পর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মিলনায়তনটি আবার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সিটি করপোরেশন এ মিলনায়তনের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে। 

সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার পুরনো নগরভবন ভেঙে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। ওই সময় সুরমা নদীর তীরের তোপখানা এলাকায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার’-এ সিসিকের অফিস অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। আর পাঠাগারের বই এনে স্তূপ আকারে রাখা হয় সারদা হলে। হলের মূল ভবনের পাশের ছোট ভবনগুলোতে সিসিক’র কয়েকটি দপ্তরের কার্যক্রম চালু করা হয়। সে সময় সিসিক’র কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, নতুন নগর ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পর পুনরায় পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার চালু হবে এবং সারদা হল সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। 

এরপর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিসিক’র নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর স্থায়ী ভবনে নিয়ে আসা হয় সিসিক’র কার্যক্রম। তবে স্থায়ী ভবনে আসার প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার। সারদা হলও সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়নি। উল্টো এ ভবন ভাগাড়ে পরিণত করেছে সিসিক। এখন সারদা হল সিটি করপোরেশনের পুরাতন গাড়ির ভাগার। সেখানে রাখা হয়েছে গাড়ি। অপরিচ্ছন্ন গোটা হল। ভেতরে আছে কর্মচারীদের বসবাসের স্থান। 

সংস্কৃতিকর্মীদের ওখানে বসার কোনো সুযোগও নেই। এই অবস্থায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। তাদের অনুরোধে সাবেক ওই মন্ত্রী সারদা হল পরিদর্শনে যান। তিনি সবকিছু দেখে সংস্কৃতিকেন্দ্র সারদা হলকে সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেটিও রহস্যময় কারণে আর আলোর মুখ দেখেনি। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আব্দুল মোমেনের দ্বারস্থ হন সংস্কৃতিকর্মীরা। বিষয়টি আমলে নেন মন্ত্রী। তিনি সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এ ব্যাপারে ডিও দেন। 

এদিকে, ঐতিহ্যবাহী সারদা স্মৃতি ভবন অবিলম্বে সংস্কৃতি চর্চার জন্য খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামছে সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বিকালে সারদা হলের সামনে তারা প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করেছে। আর এই আয়োজন করেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। সংগঠনের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সারদা হলকে সংস্কৃতি চর্চার জন্য খুলে দিতে আমরা তো কম দৌড়াইনি। মন্ত্রী, মেয়র সবার কাছে গিয়েছি। কেউ এটিকে উন্মুক্ত করে দেননি। 

এখনো পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারের বই সেখানে রয়েছে। গাড়ির ডাম্পিং রয়েছে। ময়লার ভাগারে পরিণত করা হয়েছে সারদা হলকে। কেউ ওদিকে আর ফিরেও তাকায় না। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিবাদে নেমেছি। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত জানিয়েছেন, সারদা হল তো দান করা সম্পত্তি। এটি হয়তো পরিচালনা করছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সংস্কৃতিচর্চার এই কেন্দ্রবিন্দু নিয়ে যে নাটকীয়তা করা হচ্ছে তা মেনে নেয়া যায় না। এটি রীতিমত সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কাজ। ১২ বছর ধরে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, কেউ কান দিচ্ছেন না। এদিকে, সারদা হলের বর্তমান এ পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ‘মেয়র মহোদয় এটি ভালো বলতে পারবেন।’ আর এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status