প্রথম পাতা
সাক্ষাৎকার
এবার সাজানো নির্বাচন করা সহজ হবে না
তারিক চয়ন
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার
দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত এবং অস্থিতিশীল। সামনের দিনগুলোতে শঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দেশ চালাচ্ছে কর্তৃত্ববাদী সরকার। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। সরকারবিরোধী বক্তব্যকে রাষ্ট্রবিরোধী তকমা দেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে এদেশকে এখন আর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা যায় না। এ অবস্থায় সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো ব্যক্তি বা দলের পরিবর্তন নয়, গোটা শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরি। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমনটাই মনে করেন। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতি এবং অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, সরকার সব ঠিক আছে বলে মানুষকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আসলে দেশ ভালোভাবে চলছে না। টাকার মান কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি, অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুতের ঘাটতি ইত্যাদি দিয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে পড়া শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশেও সেসব দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের কথায় বুঝি শ্রীলঙ্কার ওই পর্যায়ে যাওয়ার পেছনে যে বড় কারণ সেটার সঙ্গে আমাদের মিল আছে। সেটা হলো কর্তৃত্ববাদী শাসন। সেখানে এক পরিবারের কথায় সব চলছিল। রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি বা অনিয়মের মাধ্যমে যেসব মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে খরচ যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি সেগুলো থেকে আশানুরূপ রিটার্ন আসেনি। আমাদের দেশেও মেগা প্রজেক্টের বেশিরভাগেরই সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত এগুলোর ‘রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট’ হয়তো সেভাবে হবে না। বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন- ‘প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও জনগণের কাছে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। টেন্ডার ছাড়া বেশি ক্যাপাসিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র অনভিজ্ঞ লোকদেরও দেওয়া হয়েছে। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রাখা হলেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বড় অংকের টাকা দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। শুনেছি, প্রতি মাসে ২০০০ কোটি টাকা করে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।
সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা বিশেষ করে মানুষে মানুষে বৈষম্যও দেশে মহাসংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। এমন সমাজে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে কোনো সময় অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন হয়েছিল উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ‘দেশটার নাম কিন্তু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। কথা ছিল, প্রজারা দেশ চালাবে, পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। কিন্তু, এখন প্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের কথা শোনে না। তারা যে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে সেটাও পারছে না। প্রজারা বাস্তবিক অর্থে প্রজাই হয়ে গেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সংসদের মাধ্যমে যে মানুষ প্রত্যাশা বা দুঃখ কষ্টের কথা জানাবে, সেটাও তারা শুনছেন না। প্রতিবাদ করার যে অধিকার তাও দেওয়া হচ্ছে না। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই সরকার রাষ্ট্রবিরোধী বলছে।
‘সংসদকে ঠুনকো’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সংসদে কথা বলার তেমন একটা সুযোগ দেওয়া হয় না। বেশির ভাগই অবান্তর কথা হয়। নির্বাচন ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত মনে করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, মানুষ নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা আর ভোট দিতে যেতে চায় না। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোও মানুষ পাচ্ছে না। দলগুলো আন্দোলনে গেলেও সেভাবে মানুষ পায় না। মানুষ ভাবে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেতো কোন কাজ হয় না, গিয়ে লাভ কি! ফলে, রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে মূল্য হারিয়ে ফেলছে। তারা দেখছে, নির্বাচনে গিয়েও কিছু করতে পারছি না। যদি এই প্রক্রিয়াই চলতে থাকে তাহলে সামনে বাংলাদেশ থেকে রাজনীতি-ই উঠে যাবে। সামনের নির্বাচনের পর প্র?্যাক্টিক্যালি কোনো ইফেক্টিভ রাজনৈতিক দল থাকবে না। আমরা সামনে বি-রাজনীতিকরণের দিকে চলে যাচ্ছি। এটা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। হয়তো সামনের নির্বাচনের পর পূর্ণতা পাবে। ফরমায়েশী কিছু রাজনৈতিক দলও হয়তো তৈরি হবে। কিছু লোক এনে তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে সরকারের ইচ্ছামতো চলবে? সুতরাং, সাজানো নির্বাচন যদি হয়ে যায় তাহলে আমাদের ‘গণপ্রজাতন্ত্রী্থ বাংলাদেশ-ই যে শুধু শেষ হয়ে যাবে তা নয়; জনগণও প্রজা হয়ে যাবে, ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে শোষিত হবে। সমস্যা আর সংকটের কথাতো বললেন, এ থেকে উত্তরণের উপায়? জিএম কাদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর এখনই এটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার। সচেতন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সচেতন নাগরিক সবারই এটা বুঝা উচিত যে, আমরা ওইরকম একটা বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারি। এজন্য একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। সেটা আমার পছন্দ হোক বা না হোক। আমি সেটাতে হারি কিংবা জিতি। নব্বইয়ের পর থেকে দেশে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছি যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মানে হলো শত্রু এবং সম্ভব হলে সে শত্রুকে নির্বংশ করতে হবে। শুধু তার রাজনীতি নয়, তাকেও শেষ করতে হবে। এই প্রতিহিংসার রাজনীতি এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে সরকারের পক্ষেই এখন আর কোনো বিকল্প নেই। তাদের কাজকর্ম দেখে মনে হয়, তারা আশঙ্কা করছে যদি আমরা ক্ষমতায় থাকি তাহলেই বাঁচবো। ক্ষমতা হারালে শুধু দল বা রাজনীতি শেষ নয়, এর চেয়ে বেশি কিছুও হতে পারে। সরকারের বিপক্ষে যারা আছেন তারাও একই কথা ভাবছেন। আমরা একটা হিংসাত্মক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পৌঁছেছি যেখানে কেউ পরাজয় স্বীকার করতে চান না। এই রাজনীতির পরিবর্তন দরকার। সব রাজনৈতিক দলগুলো, সবাই মিলে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যে আমরা পরস্পরের শত্রু হলে কেউই স্বাভাবিক রাজনীতি করতে পারবো না। আমাদেরকে তো একসঙ্গে বেঁচে থাকতে হবে। তবে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে এটা তারা মানতে চাইবেন না। সরকারই এখানে মেইন ফ্যাক্টর। সরকার না মানলে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। এখানে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তাকেই সবার সঙ্গে বসতে হবে। খোলামনে আলাপ করতে হবে।
আপনি বলেছেন, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি ধাক্কা খেয়েছিল। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনকে দেখিয়ে বলেছেন, ২০২৩ সালে এমন নির্বাচন আর হবে না। ১৪’তে ধাক্কা খেয়ে তাহলে কেন ১৮’র নির্বাচনে গেলেন? সামনেই বা কেমন নির্বাচন হবে? জিএম কাদের বলেন, আমি বিস্তারিত বলবো না। দেশবাসী সবাই এসব জানে। এটা আমাদের দলের মধ্যে একটা ‘সেনসিটিভ ইস্যু’। কাজেই এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবো না। ব্যক্তিগতভাবে আমার বিবেক যেটা বলেছে, আমি সেটাই করেছি। আমি বিবেকের বাইরে যাইনি। মনে হচ্ছে, এবার বিদেশিরা শুধু আমাদের জন্যই নয়, তাদের নিজেদের স্বার্থেই চাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হোক এবং সেটা তারা তাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী নিশ্চিত করবে। আমাদের দেশে তারা জোর করে কিছু করবে না। হয়তো তারা আমাদের কাছে কিছু চাইবে, বা কোনো কিছু দেওয়ার কথা সেটা তারা দেবে না অথবা তারা ব্যবসা যেভাবে করার কথা সেভাবে করবে না। এভাবে তারা চাপ প্রয়োগ করতে পারে।’ বিদেশি বলতে আপনি নির্দিষ্ট কোন দেশকে বোঝাচ্ছেন? জিএম কাদের, ‘না, পুরো আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলি, সবারই কথা হলো, তোমাদের দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন জবাবদিহিতা নেই। এ কারণেই সব অনিয়ম আর সমস্যা। মূল কারণ, তোমার দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে না। সেটা হলেই জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আর জবাবদিহিতা থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতি কিছু থাকবে না। ওদের ইন্টারেস্ট, ওরা এখানে ব্যবসা করতে চায়। কোনো কোনো দেশের এখানে সিকিউরিটি কনসার্ন আছে। তারা চায় না এদেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক। এখানে মিলিট্যান্সি রাইজ করুক। অন্যথায় একটা জাতি নিজেকে যেমন বিপন্ন করে, আশপাশে অন্যদেরও বিপন্ন করে। সবমিলিয়ে তারা চাইবেন, দেশে একটা স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হোক। সেজন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে তারা প্রাইম ফ্যাক্টর মনে করেন। তারা সরকার ছাড়াও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন, আমাদেরকেও জানাচ্ছেন যাতে সবাইকে নিয়েই নির্বাচনটা ইনক্লুসিভ এবং সঠিক হয়।’
নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে করেন না জিএম কাদের। তিনি বলেন, কমিশনের ওপর শুধু আমারই নয়, সারা দেশবাসীরই আস্থার অভাব রয়েছে। ইভিএম নিয়ে তারা কতগুলো বিতর্কিত কাজ করেছেন, তাদের একটি কথাও বাস্তবসম্মত নয়। কোন দলকে আনা, না আনার দায়িত্ব কমিশনের নয়; এটা ঠিক না। ইভিএম-এ কোনো কারচুপি করা যায় না বা প্রমাণ দেখাতে পারেনি কেউ; এটাও ঠিক নয়। প্রমাণ দেখানো হয়েছে। সাবমিটও করা হয়েছে। বদিউল আলম মজুমদার সাহেব আমাকে পরিষ্কার বলেছেন, পেপারও দিয়েছেন। এমনকি গ্রামের সাধারণ ভোটাররাও বলছেন- ইভিএম-এ ভোট হয় না, কারচুপি হয়। বসে বসে সব নিজেদের লোককে ভোট দিয়ে দেয়। কমিশন বলেছে, সবাই চাইলে তারা ব্যালটে ভোট করবেন। সবাইতো চাইবে না! সরকারতো বলেই দিয়েছে তারা ইভিএম চায়। কমিশনের বলা উচিত ছিল, সবাই চাইলে আমরা ইভিএম-এ করবো। একজন বাধা দিলেও সেটা করা উচিত হবে না। তারপরও তারা যখন এটা নিয়ে মাতামাতি করছেন, তখন আমার মনে হচ্ছে, সাজানো ছকে তারা নির্বাচন করবেন এবং সেক্ষেত্রে ইভিএম বড় ভূমিকা পালন করবে, যে কোন প্রকারেই সরকার নিজেকে জয়ী ঘোষণা করবে। হয়তো কিছু এদিক-ওদিক থাকবে। কিন্তু, অন্তত নিজেদের মেজরিটি তারা ঘোষণা করবেন। সেক্ষেত্রে সমস্যাটা হবে, বিভিন্ন দেশ যদি নির্বাচনকে গ্রহণ না করে, তখন অনেক দেশ থেকে চাপ আসতে পারে। তারা হয়তো ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে, কেউ হয়তো অন্যকিছু করবে। আর তাই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করতে হবে। সেজন্যই আমি বলছি, নির্বাচন সুষ্ঠু না করাটা সহজ হবে না। কারণ, পরিবেশ আর আগের মতো নেই। বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত। সরকার চাচ্ছে একটা সাজানো নির্বাচন করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করতে পারবে কিনা বা করে সেটাকে টেকাতে পারবে কিনা সেটা নিশ্চিত নই।’ ‘সাজানো’ নির্বাচন করে সরকার টিকতে পারবে কিনা সেটা দেখতে চাচ্ছেন, জিএম কাদের: ‘না, তা না। আমাদের কাছে বিকল্পই বা কি আছে? এখন তো দেশবাসীর হাতে কিছুই নেই। যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, আমরা কি করতে পারি? নিয়মের বাইরে গিয়েতো কিছু করতে পারবো না। বিরোধী রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো যে সরকার পতনের ডাক দিচ্ছে, আপনারা কি তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন? দিলে কোন পর্যায়ে? জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব একটা অস্তিত্ব আছে, নিজস্ব রাজনীতি আছে, নিজস্ব চিন্তাধারা আছে। নব্বইয়ের পর থেকে যে দু’টি দল দেশ চালিয়েছে মোটামুটিভাবে তারা উভয়ই কিন্তু স্বভাবচরিত্রে কাছাকাছি। আমরা চাচ্ছি, একটা পরিবর্তিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আমরা চাই না- আওয়ামী লীগ বিরাজনীতিকরণ, দুর্নীতি ইত্যাদি যেসব জায়গায় নিয়ে গেছে; অন্য কেউ এসে সেসবই আবার চালিয়ে যাবে। আমরা অপেক্ষা করছি। যথাসম্ভব আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। আমরা দলীয়ভাবে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো কী করলে ভালো হয়। কোনটা হলে ‘মন্দের ভালো হয়’ সেটাও হয়তো আমাদের বিবেচনা করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে নানা কানাঘুষা আছে। রওশন, বিদিশাকেন্দ্রিক নানা কথাও শোনা যায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে যেমন কর্তৃত্ব কারো হাতে, তেমনি জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব কার হাতে? জবাবে জিএম কাদের সাফ জানান, জাতীয় পার্টির গঠনগতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রিম পাওয়ার তার কাছেই। তিনি বলেন, ‘তাছাড়া, চেয়ারম্যানকে অতিরিক্ত ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশের সকল সংগঠন গণতান্ত্রিকভাবে চলবে এটা কোথাও সম্ভব নয়। তারপরও গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করে সেভাবে চলতে, সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিতে। সেনাবাহিনীতেও অনেক সময় একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরও যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতি বলে একটা কথা আছে। ‘ফাইনাল’ বক্তব্য তার মুখেই বের হয়। আমাদের এখানে এটা যেমন চেয়ারম্যানের হাতে। গণতান্ত্রিকভাবেই আমরা কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। কাউন্সিল করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করি। এটাও গণতান্ত্রিকভাবে করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, একবার চেয়ারম্যান হয়ে গেলে তাকে দল চালানোর জন্য কিছু কিছু জায়গায় বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। এটার দরকারও আছে। সব দলেই এটা আছে, আমাদের দলেও আছে। চেয়ারম্যান যেকোনো জায়গায় যে কাউকে বসাতে পারবেন, বরখাস্ত করতে পারবেন।
আপনার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে? জিএম কাদের, ‘হ্যাঁ, আছে। আমি কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে মেজরিটি সাপোর্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু, আমি উনাকে (রওশন) সম্মানজনক পদটা দিয়েছিলাম। কারণ, কয়েকজন আমার বিরোধিতা করেছিল। তাই, আমি বলেছিলাম, এমন কেন হবে? আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ, এরশাদ সাহেবের পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, আমরা মিলেমিশে একসাথে না থাকলে দলটা আর থাকবে না। তখন আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু, এখন যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে উনি অসুস্থ এবং সেটার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ ওই পদের অপব্যবহার করতে চাচ্ছে, তাই পার্লামেন্টারি পার্টির সকল সদস্য উনার জায়গায় আমাকে কাজ করতে বলেছেন, উনাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এই কথাটা আমাদের প্রেসিডিয়াম কমিটির মিটিং এ আলাপ করা হলে, সেখানেও কেউই এটার বিপক্ষে যাননি। সুতরাং, পার্লামেন্টারি পার্টির সকল সদস্য যদি একমত হন, প্রেসিডিয়াম কমিটির সকল সদস্য যদি একমত হন, তাহলে আমাদের দলে দ্বিমতটা কোথায়? বিভাজনটা কোথায়? আমি ভয়ের তো কোনো কারণ দেখি না। কিছু সমস্যা প্রতিপক্ষ করতে পারে, অনেক জায়গা থেকে আসতে পারে, তাদের উস্কানিতে হতে পারে। ক্ষমতা থাকলে ক্ষমতার অপব্যবহার অনেকেই করতে পারেন। আমরা সেজন্য প্রস্তুত আছি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে বা বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণে কোনো সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগের বিষয়ে জিএম কাদেরের মত- সরকার উদ্যোগ না নিলে বাকি কোনোকিছুই সফল হবে না। তিনি বলেন, উদ্যোগটা মিনিংফুল হতে হবে। সমাধানের জন্য সদিচ্ছা থাকতে হবে। না হয় লোক দেখানো আলাপ-আলোচনায় ফল আসবে না। পরিকল্পনামাফিক ‘ব্যর্থ হয়েছে’ এমন আলোচনা আয়োজনের কোনো মানে নেই। সত্যিকার অর্থে চাইলে নিশ্চয়ই সমস্যার সমাধান হবে।