শরীর ও মন
শ্রবণ সমস্যা ও সমাধানে করণীয়
ডা. ম. মঈনুল হাফিজ
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার
বধিরতা ও শ্রবণ সমস্যা একটি সামাজিক ব্যাধি। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করার জন্য সমস্যা জটিল হচ্ছে। তাই কানের শ্রবণ সমস্যায় শুরুতেই যত্ন নেয়া জরুরি।
শ্রবণ সমস্যার কারণসমূহ
* জন্মগত ত্রুটির কারণে শ্রবণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। * বংশ ও জিনগত কারণ। * প্রসবকালীন জটিলতা। * মায়ের গর্ভকালীন কিছু সংক্রমণ। * শিশুর মেনিনজাইটিস বা ব্রেনে কনফেশন এবং ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন মাম্পস, মিসেলস্। * উচ্চ শব্দ। হেডসেট বা হেডফোনের বেশি ভলিউম, উচ্চ শব্দের মিউজিক ও কনসার্ট, আতশবাজির শব্দ, রাস্তায় গাড়ির প্রচণ্ড হর্ন, কলকারখানার শব্দ এবং বজ্রপাতের শব্দ। * ওষুধের ব্যবহার বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ড্রপ ব্যবহার।
প্রতিরোধ
* বংশ ও জিনগত বধিরতা দূর করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জেনেটিক রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকলে বিশেষ করে কনসেনগুয়াল ম্যারেজ তথা রক্ত সম্পর্কিত বিবাহ (কাজিন-কাজিন) পরিহার করা। * জন্মগত ত্রুটি দূর করতে নিরাপদ গর্ভধারণ ও প্রসব নিশ্চিত করা। * জন্ম-পরবর্তী নবজাতকের সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। * জন্মের পরপরই কানের শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করা এবং সেটি স্বাভাবিক স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসা
* সুস্থ স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশু পেতে মা ও শিশুর টিকা নিশ্চিত করতে হবে। * শিশু বয়সে কোনো ভাইরাসজনিত রোগ বিশেষ করে জ্বর হলে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নেয়া এবং কানে শোনার সমস্যা আছে কিনা খেয়াল রাখা। * বাচ্চাদের টনসিলে ইনফেশন ও এডিনয়েডের (নাকের পেছনের টনসিল) সঠিক চিকিৎসা নেয়া এবং প্রয়োজনে সার্জারি করানো। * কান থেকে পানি, পুঁজ, রক্ত পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা নেয়া। * দীর্ঘদিন ধরে কানের প্রদাহ বা পর্দায় ছিদ্র থাকলে সঠিক চিকিৎসা নেয়া। * বয়স্কজনিত কারণে বা অন্য যেকোনো কারণে শোনার সমস্যা হলে কানের শ্রবণ পরীক্ষা-পরবর্তী রোগ নির্ণয় করে অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণযন্ত্রের সাহায্যে কানে শোনার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যায়। শব্দদূষণ পরিহার। * বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে কোনো ওষুধ, তেল ড্রপ ব্যবহার না করা। কানে ময়লা বা খৈল জমে কান বন্ধ হলে বা কানের মধ্যে বাইরের কোনো কিছু প্রবেশ করলে অপসারণ করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। * এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের শ্রবণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন।
লেখক: নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন চেম্বার: ঊঘঞ ঈধৎব ঈবহঃবৎ. গুলশান-২, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭২৭-০৪৬৭১৫