বাংলারজমিন
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক বেহাল
দুই দপ্তরের ঠেলাঠেলি ভোগান্তিতে লাখো মানুষ
সোহেল রানা, আশুলিয়া থেকে
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
উত্তরবঙ্গ ও দেশের পোশাক শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনকারী নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক। এই মহাসড়কের বাইপাইল অংশটি পোশাকখাতসহ উত্তরবঙ্গ ও স্থানীয়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে লাখো মানুষের নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অংশটুকু। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ) এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথের প্রায় ২০০ মিটার অংশ এখন যেন ‘গলার কাঁটা’। বড় বড় গর্ত, পিচ ঢালাই সরে গিয়ে উঁচু-নিচু অবস্থা এবং লাগামহীন যানজট এই এলাকার নিত্যদিনের চিত্র।
নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কটি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ বিভাগের অধীনে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকলেও গত বছর থেকে এই অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুটি ভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এই জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। সওজ যেখানে মহাসড়কের সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে, সেখানে সেতু কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সময়মতো সমাধান হচ্ছে না।
সরজমিন দেখা যায়, বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা অভিমুখী লেনের প্রায় দুশ মিটার সড়ক এতটাই বেহাল যে সাধারণ সময়ে যেখানে দুই মিনিটেই পথ পাড়ি দেয়া যায়, সেখানে ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। এই সামান্য অংশের কারণে পুরো মহাসড়কের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে, যা যাত্রীদের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনেও মারাত্মক বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে। এক কিলোমিটার সড়কে যানজট এখন যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শত শত যানবাহন আটকে থাকে এই অংশে। সেই সাথে সময় ব্যাহত হচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহন ও শিল্পাঞ্চল খাতের পণ্য সরবরাহে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
শফিকুল ইসলাম একজন পোশাক কারখানার শ্রমিক, প্রতিদিন নবীনগর থেকে বাইপাইল হয়ে কারখানায় কাজে যান, তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘এইটুকু রাস্তা পার হতে যদি এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়, তাহলে আমরা সময়মতো কাজে যাবো কীভাবে? প্রতিদিন দেরি হচ্ছে আর কর্তৃপক্ষ শুধু দেখছে।”
উত্তরবঙ্গগামী বাসের চালক জয়নাল আবেদীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সারা রাস্তা ভালো থাকলেও এই বাইপাইলে এসে আটকে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে যাত্রীরা বিরক্ত হয়, আমাদেরও সময় নষ্ট হয়। কার কাছে অভিযোগ করবো বুঝতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ বিভাগের নয়ারহাট সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা মানবজমিনকে বলেন, মহাসড়কের এই অংশটুকু সেতু কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। তাদের কাজ চলার কারণে মাঝে মাঝে সড়কের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আমরা তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি যেন দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালককে ইতিমধ্যে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাও প্রকল্প ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার জন্য চিঠি দিয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। তবে আশেপাশে আমাদের সড়ক থাকায় সার্বক্ষণিক একটি দল সংস্কারের জন্য রাখা হয়েছে। যেন বৃষ্টি ও সংস্কারের অস্থায়ী মালামালে সড়ক আবার খারাপ না হয়। এখানে দরকার বড় কাজ। ছোট কাজে সমাধান হবে না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের কাজ কিন্তু উপরে, নিচে না। তবু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রিকুয়েস্ট করে সংস্কার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত তারা ব্যবস্থা নিবে। তবে ভারি যানবাহন চলাচল এবং বৃষ্টির কারণে অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
২০১৭ সালে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। পরে আরও চার বছর অতিরিক্ত সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালের ১২ই নভেম্বরে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩৭ ভাগ এবং সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ ভাগ।