বাংলারজমিন
রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র
শিশুদের নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
গণমাধ্যমে প্রকাশিত রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে (বালিকা) শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি আমলে নিয়েছে আদালত। গত ২৯শে জুন রংপুর মেট্রো কোতোয়ালি সিআর আমলী আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ হোসাইন স্ব-প্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬শে জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পাঠ ও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে জীবন বাঁচাতে চার কিশোরী পালিয়ে যায়। কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা ভিকটিম কিশোরীর চুল কেটে দেয় এবং কেন্দ্রের অনিয়মের কথা গোপন রাখতে তাকে চাপ প্রয়োগ করে। ভিকটিম কিশোরীর মা তাকে দেখতে গেলে পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দুর্ব্যবহার করেন। এ ছাড়া গত ১২ই জুন চার কিশোরী নিখোঁজ হলেও এখনো দু’জন কিশোরীর সন্ধান মেলেনি। এমন অবস্থায় জনস্বার্থে ও ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চার কিশোরী পালানোর কারণসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া আবশ্যক মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার বিষয়ে তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। আগামী ২৯শে জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
এদিকে, নিখোঁজের ২১ দিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের (বালিকা) নিবাসী রিতু আদালত চত্ব্বরে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের শরণাপন্ন হয়েছেন। নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে আবার নির্যাতনের কবলে না পড়তে আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে তাকে রাখার আবেদন করেছেন। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। পিবিআই রিতুকে জিজ্ঞাসাবাদসহ নিরাপদ স্থানে রাখার কথা জানিয়েছে। এর আগে গণমাধ্যমকে রিতু আক্তার বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় ও রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা) কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতি সপ্তাহে বাহির থেকে বিভিন্ন পুরুষ কেন্দ্রে আসে। প্রতি সপ্তাহে তারা নতুন নতুন মেয়েদের ধর্ষণ করতো। গত ১৫ই জুন আমাকে ধর্ষণের তারিখ ছিল এবং পরবর্তী তারিখগুলোতে অন্য নিবাসীরা ধর্ষণের শিকার হতো। বিষয়টি জানতে পেরে সুযোগ বুঝে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে স্মৃতি, কৃতি ও আশাসহ আমি পালিয়ে যাই। প্রত্যেকে যে যার মতো জায়গায় থাকি। আমি আমার এক পরিচিত আন্টির বাসায় আশ্রয় নেই। যেহেতু পুলিশ আমায় খুঁজছে, তাই আমি আদালত চত্বরে এসে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছি। আমি সেন্টারের শিশুদের সঙ্গে অত্যাচারকারী এবং সেন্টারের সকল কর্মকর্তাদের বিচার চাই।
পিবিআই রংপুরের পুলিশ পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক বলেন, রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে চারজন ভিকটিম মিসিং হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, তাদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনজন উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার হওয়া নিবাসী রিতু মনিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতের কাছে জমা দেবো। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জোবাইদুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের রাখা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন হয়েছে। এ নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যে সমস্ত শিশুদের আত্মীয়স্বজন ছিল না, তারা নির্যাতনে মারা গেলে তাদের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। কারও ময়নাতদন্ত হয়নি।