বিশ্বজমিন
জিএমআরবি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএস-এর অর্থায়নে জড়িত: মালয়েশিয়ার আইজিপি
স্টাফ রিপোর্টার, কুয়ালালামপুর
(৭ ঘন্টা আগে) ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ৩:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:৫৮ অপরাহ্ন

সম্প্রতি রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশ (পিডিআরএম) কর্তৃক চিহ্নিত একটি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জিএমআরবি এর নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য বলছে, এই গোষ্ঠী সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং সদস্য নিয়োগে সক্রিয় ছিল।
দেশটির সরকারি নিউজ এজেন্সি বারনামা, পুলিশ মহাপরিদর্শক তান সেরি মোহ্দ খালিদ ইসমাইল এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই গোষ্ঠী প্রতি সদস্যের কাছ থেকে বার্ষিক ৫০০ রিঙ্গিত করে সদস্য ফি আদায় করত, পাশাপাশি সদস্যদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত চাঁদাও নিত। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১০০ থেকে ১৫০ জন, যাদের সবাই বাংলাদেশি এবং মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারখানা, নির্মাণস্থল ও পেট্রোল স্টেশনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সংগৃহীত অর্থ বিদেশে পাঠানো হতো ই-ওয়ালেট অ্যাপস এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে।
মালয়েশিয়ার আইজিপি বলেছেন, গোষ্ঠীটি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বার্তাবাহক অ্যাপ ব্যবহার করে নতুন সদস্য নিয়োগ করত। তারা আইএস-এর প্রচারণা ছড়ানো, ‘বাইআত’ (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সভার আয়োজন করত বলে তদন্তে জানা গেছে। যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ নিত, তাদেরকে ‘সেল লিডার’ বা উপদলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে পারে। সদস্য নিয়োগও ধাপে ধাপে করা হতো, প্রাথমিক যাচাই থেকে শুরু করে ‘এলিট গ্রুপ’ গঠন পর্যন্ত।
কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিক এই গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়ে এখনও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইজিপি মোহ্দ খালিদ। তবে গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় হামলার পরিকল্পনা না করলেও এখানেই তাদের অর্থ সংগ্রহ ও নিয়োগ কার্যক্রম চালাত। তদন্ত এখনো চলমান এবং এতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।
পুলিশ প্রথম এই গোষ্ঠীর কার্যক্রম শনাক্ত করেছে। কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ঘেটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ান আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে আইএস-এর মতাদর্শ ছড়াচ্ছিল জড়িতরা। বারনামা জানিয়েছে, তিন ধাপে পরিচালিত অভিযানে ধীরে ধীরে গোষ্ঠীর কেন্দ্রবিন্দু উন্মোচিত হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৮ এপ্রিল, সেলাঙ্গরে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৭ মে, জহরে আরও ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়, যাদের মধ্যে গোষ্ঠীর প্রধানও ছিল এবং তৃতীয় ধাপে ১৯ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত চালানো অভিযানে আরও ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, ফলে মালয়েশিয়ায় জিএমআরবি গোষ্ঠীর মূল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায়।
গ্রেপ্তারকৃতদের ২০১২ সালের নিরাপত্তা অপরাধ (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন- (এসওএসএমএ) এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে। বারনামা আরো বলছে আইজিপি জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তি গোষ্ঠীর সঙ্গে সামান্য মাত্রায় জড়িত ছিল, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। দেশটির আইজিপি আরও জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষাই পুলিশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, এবং যে কোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড পুলিশকে জানানোর জন্য জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।