প্রথম পাতা
ক্রেন চালাচ্ছিলেন সহকারী, ছিল না ফিটনেস
স্টাফ রিপোর্টার
১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবাররাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ার ঘটনার সময় ক্রেন চালাচ্ছিলেন সহকারী আল আমিন হোসেন ওরফে হৃদয়। ক্রেনটির ছিল না ফিটনেস। ক্রেনটি ছিল অনেক পুরাতন। এর ধারণক্ষমতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টন। আর গার্ডারের ওজন ছিল প্রায় ৭০ টন। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজন বহন করায় ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গার্ডার তোলার সময় ব্যাকআপ হিসেবে দুটি ক্রেন থাকার কথা থাকলেও ছিল একটি। যে ক্রেনটি ছিল সেটিও ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল। সম্প্রতি গার্ডার দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে রাজধানী এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে গ্রেপ্তার শেষে গতকাল দুপুরে কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গত বুধবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১, ৩, ৪, ৬ ও র্যাব-১২ এর যৌথ অভিযানে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ এবং বাগেরহাট থেকে ক্রেন চালক মো. আল আমিন হোসেন ওরফে হৃদয়, রাকিব হোসেন, দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান মো. রুবেল, মো. আফরোজ মিয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ, হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইফতেখার হোসেন, হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু, ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তুষার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা এবং মো. মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ক্রেনটি সরবরাহ করে।
দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই রাতেই রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় বিআরটির অবহেলাজনিত কারণে একটি মামলা করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গজুবা গ্রুপ কোম্পানির (সিজিজিসি) তত্ত্বাবধানে ক্রেন দিয়ে প্রকল্পের গার্ডার উত্তোলনের কাজ চলাকালীন এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি থেকে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামক একটি প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্বাধিকারী গ্রেপ্তার হওয়া ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন আজহারুল ইসলাম মিঠু। ভারী যন্ত্রপাতি ওঠানামার জন্য ইফসকনের কাছে বড় ক্রেন না থাকায় তারা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছ থেকে ক্রেনটি ভাড়া নেয়। এ ছাড়াও প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান আফরোজ ও রুবেল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলীকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সিজিজিসির প্রকিউরমেন্ট কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলামকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়। ক্রেনের মূল অপারেটর আল আমিন ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ নেয়ার পর দু-তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করে। ২০২২ সালের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করে।
গ্রেপ্তার হওয়া রাকিব তিন মাস আগে এ প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। তার ক্রেন চালনার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার দিন আল আমিন ও রাকিব দুপুর ২টা থেকে ক্রেন চালনা শুরু করে। একটি গার্ডার স্থাপন শেষে দ্বিতীয় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলনের কারণে ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে গার্ডারটি প্রাইভেটকারের উপর ছিটকে পড়লে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় হেলপার রাকিব ক্রেন চালনা করছিল এবং ক্রেন অপারেটর আল আমিন ক্রেনের বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর অপারেটর আল আমিন ও হেলপার রাকিব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃত রুবেল তিন মাস আগে ও আফরোজ গত মাসে ফোর ব্রাদার্স গার্ডস সার্ভিস ট্রাফিকম্যান হিসেবে এ প্রকল্পে যোগ দেন। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণও ছিল না। দুর্ঘটনার সময় তারা সেখানে প্রকল্পের ট্রাফিকম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এই দুর্ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন এই র্যাব কর্মকর্তা।