দেশ বিদেশ
সিলেটে সন্ত্রাসী সাজাই পেটালো যুবদল নেতাকে
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
সিলেট বাস টার্মিনাল এলাকা কদমতলীর ‘নিয়ন্ত্রক’ সন্ত্রাসী মেহেদী হাসান সাজাই। একসময় সে জেলা যুবদলের কোষাধ্যক্ষ ছিল। কিন্তু চিনিকাণ্ডে সিলেটে ব্যাপক বিতর্কিত হয় সে। চিনিভর্তি ট্রাক ছিনতাই, বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি সহ তার নানা অপরাধে অতিষ্ঠ ছিলেন সবাই। প্রমাণ পাওয়ার পর প্রায় তিন মাস আগে সাজাইকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। কিন্তু বহিষ্কারের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। মঙ্গলবার দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে নগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। বেলালের বাম পা ভেঙে গেছে। দুই হাতে ৭-৮টি স্টেপিং। মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার সঙ্গে আহত হন ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ সভাপতি ফজলুল হক লখন সহ কয়েকজন। তিনিও হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনাকালীন সময় ও ঘটনার পর একাধিকবার ফেসবুকে লাইভ করেন যুবদল নেতা বেলাল। চান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। বেলাল জানিয়েছেন, যখন তার ওপর হামলা হয় তখন পার্শ্ববর্তী মসজিদে জোহরের নামাজ চলছিল। তিনি হামলা থেকে বাঁচতে মসজিদে অবস্থান নেন। এ সময় মসজিদে ঢুকে লোহার রড, কাঠের টুকরো দিয়ে তার বাম পা ভেঙে দেয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নগর বিএনপি নেতা লখন এগিয়ে গেলে তাকে একাধিক স্টেপিং করা হয়। ঘটনার সূত্রপাত জমি নিয়ে। যুবদল নেতা বেলালের নানা নগরের মদিনা মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজী মাহমুদ আলীর পুরাতন বাড়ি দক্ষিণ সুরমার কদমতলী পয়েন্টে দরিয়া শাহ মোকামের বাম পাশে। ওখানে বিভিন্ন দাগে মাহমুদ আলীর ৮৪ শতক ভূমি রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাহমুদ আলীর ভাগিনা টিপু সহ কয়েকজন ওই ভূমি দখলে নিয়ে ভাড়ার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি এই ভূমি। এসএ ও বিএস রেকর্ড রয়েছে মাহমুদ আলীর নামে। প্রায় ৪ মাস আগে টিপুর বিরুদ্ধে ভূমি জালিয়াতির একটি মামলা করেন মাহমুদ আলীর ছেলে মনির আহমদ সহ কয়েকজন। এ মামলার পর তাদের মধ্যে আপস হয়। আপসের মাধ্যমে মাহমুদ আলীর ভূমি ছেড়ে দেন টিপু ও তার স্বজনরা। পরে দায়ের করা মামলা আদালত থেকে তুলে নেয়া হয়। মাহমুদ আলীর ছেলে মনির আহমদ জানিয়েছেন, চার মাস ধরে ভূমি তাদের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে তারা কিছু সংস্কার কাজে হাত দেন। মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে যখন শ্রমিকরা কাজ করছিল তখন ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালান সাজাই। তাদের হামলায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, আমাদের ভূমিতে যখন সংস্কার কাজ চলছিল তখন হঠাৎ ওখানে আসে টিপু। এরপর দলবল নিয়ে আসে সাজাই। তারা অতর্কিত হামলা চালায়। উপস্থিত যারাই ছিলেন তাদের মারধর করে। একপর্যায়ে কয়েকটি দোকানে লুটপাট চালানো হয়। ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগে বেলাল ও লখন সহ কয়েকজন তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন। এদিকে, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সুলতান আহমদ নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমির হোসেন। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আসামি ধরতে পুলিশ অভিযানে রয়েছে। আসামিদের ধরতে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। মামলার এজাহারে তাজুল ইসলাম টিপু ছাড়া আসামি করা হয়েছে- মিনহাজ আহমদ, কাদির বখত, আব্দুল, রিপন, সুমন, দিয়ার, মাসুদ, শামীম, পাপ্পু, শওকত, সুলতান আহমদ, সামাদ, জুবের আহমদ জুবের সহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়া যুবদল নেতা বেলাল আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হামলাকারী সাজাই একাধিক সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিল। তার উপস্থিতিতে বৈঠকে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান হয়। কিন্তু ভূমি দখলে নিতে সে সশস্ত্র অবস্থায় ফের হামলা করে।