দেশ বিদেশ
ইরানের পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে না পারার দাবি প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের
মানবজমিন ডেস্ক
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবারযুক্তরাষ্ট্রেই দুই রকম তথ্য। ফাঁস হওয়া পেন্টাগনের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারেনি। ওই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে। ফাঁস হওয়া এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এটাকে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা মূল্যায়ন রিপোর্টকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন। এ খবর বিশ্ব মিডিয়ায় প্রধান সংবাদ শিরোনাম হিসেবে উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে নড়বড়ে এক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ফরদো, নাতানজ এবং ইস্ফাহানে ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করে হামলা চালিয়ে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে তুলে দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে দাবি করা হয়, এর মধ্যদিয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে গোয়েন্দা তথ্য দাবি করছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সেন্ট্রিফিউজগুলো বেশির ভাগই অক্ষত আছে। মার্কিন হামলায় ওইসব স্থাপনার মাটির উপরের অবকাঠামোতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওদিকে দু’টি স্থাপনায় প্রবেশ সিল করে দেয়া হয়েছে। কিছু স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে। সেগুলো অক্ষত আছে। অজ্ঞাত সূত্রগুলো মার্কিন মিডিয়াকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রবেশ করে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা মেরামত করতে যে সময় লাগে সেই সময় পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে কর্মসূচি। কিছু সূত্র সিবিএস’কে নিশ্চিত করেছেন যে, হামলার অনেক আগেই ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে এ রিপোর্টে বেজায় চটেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি ফাঁস হওয়া এ গোয়েন্দা রিপোর্টের তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজের ট্রুথ সোশ্যালে তিনি মার্কিন মিডিয়া এবং তাদের রিপোর্টিংকে একহাত নিয়েছেন। ট্রাম্প লিখেছেন- ‘ভুয়া খবর সিএনএন, ব্যর্থ নিউ ইয়র্ক টাইমস একত্রিত হয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সামরিক হামলাগুলোকে হেয় করার জন্য প্রচেষ্টায় এক হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্য টাইমস এবং সিএনএন’কে জনগণ নিন্দা জানাচ্ছে।’ মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও প্রায় একই ধারায় অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টের তথ্য প্রত্যাখ্যান করে তিনি ফক্স নিউজকে বলেছেন- ‘এ কাজ জঘন্য, বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ। এর তদন্ত হওয়া উচিত। এর জন্য যে দায়ী হোক না কেন, তাকে জবাবদিহি করতে হবে’। তিনি আরও বলেন- ধ্বংস হয়ে যাওয়া সম্পর্কে সব রিপোর্ট তিনি পড়েছেন। বলেছেন তার কোনো সন্দেহ নেই যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মার্কিন আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফক্স নিউজে উইটকফের সাক্ষাৎকারের ক্লিপ নিজের ট্রুথ সোশ্যালে যুক্ত করে ট্রাম্প বলেছেন, আমরা ফরদো’তে ১২টি বাংকার বাস্টার ফেলেছি। সেখানে তা ধ্বংস হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তা একেবারেই হাস্যকর। ওদিকে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইল এবং ইরান উভয়েই বিজয় দাবি করেছে। যুদ্ধবিরতির পর রাজধানী তেহরানে বিজয় উদ্যাপনে জনতার ঢল নামে। অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই বিজয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে বিদ্যমান থাকবে। এর আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে ইসরাইল এবং ইরান উভয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন ট্রাম্প। তিনি ইসরাইলকে নির্দেশ দেন বোমা হামলা বন্ধ করে তাদের যুদ্ধবিমানগুলোকে দেশে ফিরিয়ে নিতে। এই যুদ্ধে ইরানে কমপক্ষে ৬১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩টিই শিশু। আহত হয়েছেন ৩০৫৬ জন। অন্যদিকে ইরানের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২৮ জন।