ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

পিলখানা হত্যাকাণ্ড

গোয়েন্দা ব্যর্থতা-সামরিক কমান্ড নিষ্ক্রিয় ছিল

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

১৬ বছর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল। এ ছাড়া, ওই সময় সামরিক কমান্ড নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। ন্যক্কারজনক এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আটজন নেতা সাক্ষ্য দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে কমিশন। তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গতকাল রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির নতুন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কমিশন। সেখানেই এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি এবং অপরাধ সংগঠনের সময় তারা নিষ্ক্রিয় ছিল। হত্যাকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ ছাড়া, তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কমিশনের সভাপতি বলেন, রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানের নামে কালক্ষেপণ, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকার কারণেই সেদিন অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে। পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। এর আগে যে দু’টি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য জঙ্গিবাদকে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহ, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে ‘বিদেশি সংশ্লিষ্টতা’ নিয়ে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কমিশন মনে করে যে, সময়মতো সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যেতো। ফজলুর রহমান বলেন, কমিশন এ পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন রাজনীতিবিদ। এর মধ্যে তিনজনের সাক্ষাৎকার জেলে নেয়া হয়েছে। তিনজন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনলাইনে সাক্ষ্য দিয়েছেন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা দুই আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক। পিলখানা থেকে বেঁচে ফিরে আসা ১৫ জন সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া, ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারদের লিখিত জবানবন্দির জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে চিঠি দেয়া হয়েছে। দু’টি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয়া বাকি আছে। তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলে আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে।
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, ৫৫ জন সামরিক অফিসার যারা বিভিন্নভাবে পিলখানা ট্র্যাজেডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তাদের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক সাবেক সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন- ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, আমলা ও পূর্বতন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তিনি বলেন, তৎকালীন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। বেসরকারি ৯ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন- ব্যবসায়ী, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি যাদের কাছে ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জন বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তারা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য দিয়েছেন, যেগুলো এখন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আরও সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ২৯ জন কারামুক্ত বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সভাপতি বলেন, ছয়টি দেশের দূতাবাস ও ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 
আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি। বিদ্রোহের বিচার বিজিবি’র আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় প্রচলিত আদালতে। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। পরে হাইকোর্টে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরালো হয়। বিষয়টি আদালতেও গড়ায়। পরে গত বছর ডিসেম্বরে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন বিজিবি’র সাবেক মহাপরিচালক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমান।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status