বাংলারজমিন
টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণে বাধা নেই, তবে যা করা যাবে না-
এমএ রাজ্জাক, সুনামগঞ্জ থেকে
২৫ জুন ২০২৫, বুধবারসুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণে কোনো বাধা নেই। তবে হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ১২টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং রোববার রাতে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউজবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ প্রতিবেশের ক্ষতি রোধকল্পে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউজবোটের যাতায়াত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে আগে জারি করা নির্দেশনা অবশ্যই মানতে হবে, অন্যথায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের র্নিদেশনা:
সম্প্রতি সংকটাপন্ন টাঙ্গুয়ার হাওরে জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে জেলা প্রশাসন থেকে ১২টি নির্দেশনা জারি করা হয়। তা হলো- হাওরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত নৌযানগুলোকে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার করতে হবে, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফজ্যাকেট ব্যবহার, স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ, প্লাস্টিক পণ্য বর্জন, দূর থেকে পাখি ও প্রাণীর পর্যবেক্ষণ করা, ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে হবে, হাওরে উচ্চশব্দে গান বাজনা করা বা শোনা যাবে না, হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ও বর্জ্য ফেলা যাবে না, মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ করা যাবে না, পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না, ডিটারজেন, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না, গাছকাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না, হাওরে সংরক্ষিত (কোর জোন) অংশে প্রবেশ করা যাবে না, মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না।
হাওরে পর্যটকদের কোন বাধা নেই:
টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য অনেকে মনে করছেন, হাওরে আর হাউজবোট বা পর্যটক যেতে পারবেন না। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণে কোনো বাধা নেই। তবে ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় হাউজবোট আপাতত যেতে পারবে না। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। এজন্য কঠোর নজরদারি রাখা হবে। এদিকে রোববার বিকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউজবোট, ট্রলার ও অন্যান্য ইঞ্জিনচালিত বোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় মাইকিং করানো হয়েছে। এ সময় তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসেম হাওরে উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে পর্যটকদের কোনো বাধা নেই। তবে ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় হাউজবোট আপাতত যেতে পারবে না। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। এজন্য আমরা কঠোর নজরদারি রাখবো হাওরে। তিনি বলেন- অনেকে মনে করছেন, হাওরে আর হাউজবোট যেতে পারবে না। এ বিষয়টি ঠিক না। টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণে কোনো বাধা নেই। তবে এড়িয়ে চলতে হবে কিছু এলাকা।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট খ্যাত। এ হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট-বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য খাল বিল। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে ওঠে। তখন হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর পাড়ে ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় এই গ্রামগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো দেখা দেয়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝর্ণা নেমে এসে মিশেছে এ হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওরটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, রূপে-গুণে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকরা ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। তবে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনসহ নানা কারণে এখন হাওরে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে।