খেলা
‘লঙ্কার লর্ডস’-এ শান্তদের অনুপ্রেরণায় আশরাফুল
ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো থেকে
২৩ জুন ২০২৫, সোমবার
২০০১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) গ্রাউন্ডে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। যে স্টেডিয়াম লঙ্কার লর্ডস হিসেবে পরিচিত। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ ছিল সেটি। তিন দিনের মধ্যে হেরে গেলেও ক্রিকেট বিশ্বকে মোহাম্মদ আশরাফুল নামের এক বিস্ময় উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে বসেন ক্যারিয়ারে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা আশরাফুল। সেদিন তার বয়স ছিল ১৭ বছর ৬৩ দিন। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড হিসেবে এখনো টিকে আছে আশরাফুলের সেই কীর্তি। আশরাফুল ভেঙেছিলেন পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদের রেকর্ড (১৭ বছর ৮২ দিন)। ১৯৬১ সালে দিল্লি টেস্টে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে ১০১ রান করেছিলেন বিখ্যাত মোহাম্মদ ভাইদের চতুর্থজন। এরপর এই মাঠে আরো দুটি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সবগুলোতেই হার। সবশেষ ২০১৭ তে এখানে যখন টাইগাররা খেলে সেই দলে ছিলেন মুশফিকুর রহীম। যিনি এখনো খেলেন দেশের হয়ে। এবারও লঙ্কা সফরে দলের একমাত্র সদস্য যে কিনা লঙ্কার লর্ডসের রহস্য জানেন। আর এখানে ১৮ বছর পর টাইগারদের এই প্রজন্মের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তদের অনুপ্রেরণা হতে পারেন আশরাফুল। এদিকে এখানকার কন্ডিশন নিয়ে অভয় দিয়েছেন আশরাফুলের সেঞ্চুরির সাক্ষী সাবেক তারকা ব্যাটার হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বলেন, ‘এখানে কন্ডিশন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমাদের দেশের মতোই। প্রথম কয়েক ঘণ্টা একটু বোলাররা সুবিধা পান। তারপর ফ্ল্যাট উইকেট। আশরাফুলের সেঞ্চুরিটা আমাদের সামনেই করেছে।’
কলম্বো আসার আগে টাইগার অধিনায়ক শান্ত জানিয়েছেন কলম্বোর এসএসসি ক্রিকেট মাঠে তাদের খেলার অভিজ্ঞতা নেই শুধু মুশফিক ছাড়া। তারা জানেন না এখনকার উইকেট ও কন্ডিশনটা কেমন হবে। গতকাল গল থেকে যখন টাইগাররা কলম্বোতে এসেছেন হয়তো তখনো শান্ত নিজেদের রণপরিকল্পনার কথাই ভাবছিলেন। কিন্তু ১৮ বছর আগে তাদের একজন এখানে গড়ে গেছেন বিশ্ব রেকর্ড। ম্যাচ হেরেও তার ১১৪ রানের কীর্তির কারণে হন ম্যাচ সেরা। দেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পরাজিত দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরা পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান এবং মোহাম্মদ আশরাফুল। তারা দুইজনই দলকে জয়ের বন্দরে না পৌঁছালেও তিনবার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। এই তালিকায় তাদের সঙ্গী হিসাবে আছেন দুই কিংবদন্তি ভারতীয় ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকার এবং পাকিস্তানি পেসার ওয়াসিম আকরাম। তারাও তিনবার করে পরাজিত দলের হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। শান্তদের সামনে আশরাফুলই বড় অনুপ্রেরণার নাম হবেন এখানে। সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে দল গুটয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নেমে ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। পরের ইনিংসে ৮১ রানে বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট। সেই ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়ে আশরাফুল সেঞ্চুরি করে ইতিহাসে নাম লিখিয়ে নেন।
গল টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পালে আবারো হাওয়া লেগেছে। টেস্ট ম্যাচ ড্র হয়েছে ব্যাটারদের কৃতিত্বে। যদিও অনেকের দাবি দ্বিতীয় ইনিংসে সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছে শান্তরা। বিশেষ করে অধিনায়কের ধীর গতির সেঞ্চুরির কারণে বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরেছে বলেও কারো কারো দাবি। যদিও এমন ভাবনার কোনো মানে নেই মনে করেন হাবিবুল বাশার সুমন। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘আমি খুব অবাক হচ্ছি কারো করো দাবি শুনে যে গল টেস্ট জিততে পারতো বাংলাদেশ। শান্তর সেঞ্চুরি নিয়েও কেউ কেউ কথা বলছেন। আমার মনে হয় পঞ্চম দিন সকালে বাংলাদেশ যদি নেমে তাড়াহুড়া করতো বা মুশফিক ও শান্ত রান বাড়ানোর জন্য চড়াও হতো তাহলে উল্টো হেরে যেতে পারতো বাংলাদেশ। গলে শেষ দিন পর্যন্ত উইকেটে কিছু হয়নি। ২৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা হতো আত্মহত্যা। শ্রীলঙ্কার যে চার জন আউট হয়েছে তারা জানতো যে ম্যাচ হারবে না। তারা মেরে খেলে সুযোগ নিতে চেয়েছে। তারা জানেন যে আউট হলেও অন্যরা এসে কভার করে দিবে। এখানে বাংলাদেশ ঝুঁকি নিলে হার ছাড়া কিছু মিলতো না।’