বিশ্বজমিন
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে?
মানবজমিন ডেস্ক
(৩ ঘন্টা আগে) ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ২:২১ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক উপস্থিতি বাড়ালেও প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনো ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সরাসরি হস্তক্ষেপের ঘোষণা দেননি। কৌশলগত অস্পষ্টতা বজায় রেখেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নড়াচড়া ও বিমান চলাচলের তথ্য থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে, ইরানের মাটির গভীরে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার রাতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডে নতুন সামরিক সক্ষমতা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাদের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি জোরদার করবে। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জি-৭ সম্মেলন থেকে হঠাৎ ওয়াশিংটনে ফিরে আসেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি কোনো যুদ্ধবিরতির খোঁজে নই, আমরা যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভালো কিছু খুঁজছি। তিনি ‘সত্যিকার সমাপ্তি’ চান বলে জানিয়েছেন।
তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত এসেছে আকাশপথে সামরিক রিফুয়েলিং বিমানের গতিবিধি থেকে। অন্তত ৩১টি কেসি-১৩৫ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার ও কেসি-৪৬ পেগাসাস (মার্কিন জ্বালানি সরবরাহকারী বিমান) রোববার ইউরোপের দিকে রওনা হয়, যার মধ্যে কয়েকটি মঙ্গলবার আরও পূর্ব দিকে যায়। এই গতিবিধি দীর্ঘপাল্লার বিমান হামলার প্রস্তুতির সম্ভাবনা জোরালো করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র বিমান যা ফোরদোর মতো শক্তিশালী ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে, তা হলো বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান। এই বিমান ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের জিবিইউ-৫৭/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) বহন করতে সক্ষম। ৬০ মিটার পাথরের নিচ পর্যন্ত বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বিশেষভাবে তৈরি শক্তিশালী এই বোমা। বি-২ এই বোমা বহনে সক্ষম একমাত্র বিমান।
বি-২ সাধারণত মিসৌরির হোয়াইটম্যান ঘাঁটি, বৃটেনের ফেয়ারফোর্ড ও দিয়েগো গার্সিয়াতে অবস্থান করে। গত অক্টোবরেও হোয়াইটম্যান থেকে ৮ হাজার মাইল দূরের হুতিদের পাঁচটি ভূগর্ভস্থ অস্ত্রঘাঁটিতে হামলায় অংশ নেয় এই বি-২ বিমান। এই হিসেবে দিয়েগো গার্সিয়া থেকে ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রের দূরত্ব কিছুটা কম। এর দূরত্ব ৩,২০০ মাইল। যা অতিক্রম করে খুব সহজেই বিশেষ এই বোমারু বিমান পাঠানো সম্ভব। তবে ফেরার পথে রিফুয়েলিং (পুনরায় জ্বলানি সংগ্রহ) এর প্রয়োজন হবে।
২০১৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, এক দশক আগে ফোরদোর অনুরূপ একটি কৃত্রিম পারমাণবিক কেন্দ্র তৈরি করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। সেখানে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমার পরীক্ষা চালায় তারা। যার ভিডিও পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়ন প্যানেটা ইসরাইলি নেতা এহুদ বারাককে দেখান। প্যানেটা বলেছিলেন, ওই বোমাটি কৃত্রিমভাবে তৈরি ওই স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট থিংকট্যাঙ্কের বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, ফোরদোর মতো লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে হলে একাধিক আঘাতের প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয় বোমাটি প্রথম বোমার সৃষ্ট গর্তে ফেলে নির্ধারিত গভীরতায় বিস্ফোরিত হতে হবে। যদিও একটি বি-২ বিমান দুটির বেশি বোমা বহন করতে পারেনা। এক্ষেত্রে সফলভাবে ফোরদো ধ্বংস করতে একাধিক বিমানের সমন্বিত হামলা প্রয়োজন হতে পারে।

এখনও ফোরদো স্থাপনাটি অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (আইএইএ)। ইসরাইল হামলার প্রথম দিনে ফোরদোকে লক্ষ্য করলেও পরবর্তীতে সেখানে নতুন হামলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইরানের অন্য আরেক পারমাণবিক স্থাপনা নাতাঞ্জ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। বলেছে, তারা নাতাঞ্জের ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রেও সফল হামলা চালিয়েছে। তবে আইএইএ তা নিশ্চিত করেনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় একটি বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিটজ পূর্ব এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা দিয়েছে। এটি ইউএসএস কার্ল ভিশনের সঙ্গে যোগ দেবে। যেটি ইতিমধ্যেই আরব সাগরের আশেপাশে অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে অন্তত তিনটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ারও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানে সরাসরি হামলা চালাবে? নাকি বর্তমান চাপ শুধু একটি কৌশলগত অবস্থান নেয়ার অংশ? তবে সামরিক গতিবিধি, রণতরী ও বিমান মোতায়েনের বিষয়গুলোর বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে একটি সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন।
লেখক: ড্যান সাব্বাঘ। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক।