বাংলারজমিন
উত্তরণ স্কুলে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন পলাতক এমপি রিপন
প্রতীক ওমর, গাইবান্ধা থেকে ফিরে
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং গাইবান্ধার সাঘাটা-ফুলছড়ি আসনের সাবেক এমপি মাহমুদ হাসান রিপন নিয়মিত ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন নিজ এলাকার নেতা- কর্মীদের সঙ্গে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ফলিয়া দিগড় পলাতক এমপি রিপনের বাড়ি। তার বাড়ির পাশেই একটি কেজি স্কুল তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দখল করে নিয়েছে রিপনের চাচাতো ভাই আকমল হোসেন। দখল করার পর নাম পরিবর্তন করে স্কুলটির নাম দিয়েছে ফলিয়া দিগড় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়টির মধ্যেই রাতে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক বসে স্থানীয় নেতাকর্মীদের। এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সম্পদের খোঁজ-খবর এবং নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। স্কুলটিতে বর্তমানে তেমন শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ঢিলেঢালাভাবে চলছে। তবে শিক্ষা কার্যক্রমের আড়ালে ওখানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বৈঠক নিয়মিতভাবে হচ্ছে বলে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
দিনে স্কুল আর রাতে এখানে আকমল হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উপজেলা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গোপনে জড়ো হয়। তারপর গোপন স্থান থেকেই ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন রিপন। এতে এলাকার লোকজন বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা করছেন। ওদিকে স্কুলটি মূল মালিক রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি ২০১১ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আকমল হোসেনের জায়গা ভাড়া নিয়ে ‘ফলিয়া দিগড় মাল্টিমিডিয়া একাডেমিক কেজি স্কুল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। স্কুলটি তিন বছর চলার পর হঠাৎ আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ হাসান রিপনের প্রভাব খাটিয়ে তার চাচাতো ভাই আকমল জোর করে প্রতিষ্ঠানটি দখল করেন। এরপর প্রতিষ্ঠাতা রায়হানকে ভয়-ভীতি এবং রাজনৈতিক মামলার হুমকি দিয়ে তাকে আর প্রতিষ্ঠানে আসতে দেয়নি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন রায়হান। ফলে ওই সময় আওয়ামী দাপটের কাছে অসহায় হয়ে রায়নার বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে ব্রুনাই চলে যান। জীবননাশের হুমকি, রাজনৈতিক মামলার ভয়ে এলাকায় টেকা সম্ভব হয়নি তার। পরে ২০২৪ সালে ব্রুনাই থেকে ফিরে আসেন রায়হান। দেশে আসার পর আবারো তিনি তার দখল হয়ে যাওয়া স্কুলটি উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাকে মারপিট এবং নানা ধরনের হয়রানি করে আকমল।
জুলাই বিপ্লবের পর সাবেক এমপি মাহমুদ হাসান রিপন পালিয়ে যাওয়ার পর আকমলও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে আবারো আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসতে থাকেন আকমলরা। এখন তারা ওই স্কুলটিতে নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
রায়হান আরও জানান, আকমলদের প্রকাশ্য কার্যক্রম এবং সাবেক এমপি রিপনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের কথা এখন প্রায় সবাই জানেন। গ্রামের লোকজন অনেকটা তাদের এসব নিষিদ্ধ কার্যক্রমে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তারা বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আকমলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলম মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখবো। ফ্যাসিস্টদের কোনো কার্যক্রম আমাদের নজরে আসা মাত্রই অভিযান চালাবো।