বিশ্বজমিন
ইসরাইলি হামলার পর ‘রক্তস্নানে’ ভাসছে ইরানের একাধিক হাসপাতাল
মানবজমিন ডেস্ক
(৬ ঘন্টা আগে) ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:২৮ অপরাহ্ন

ইসরাইলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে আহতদের ঢল নেমেছে। এর মধ্যে একটি হলো, ইমাম খোমেনি হাসপাতাল। শুক্রবার থেকে ওই হাসপাতালে আহতদের আনাগোনা স্থিতিশীল থাকলেও রোববার পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হয়। তেহরানে ইসরাইলি হামলায় হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইউনিটে রোগীদের চাপ এতই বেড়ে গেছে যে, একজন চিকিৎসক একে ‘রক্তস্নান’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, আহতদের পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে আমরা বাকরুদ্ধ। হাসপাতালে কয়েক ডজন ছোটখাটো ক্ষত থেকে শুরু করে প্রাণঘাতি হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত এমনকি মৃতদেহও আনা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে।
ইসরাইলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে আহতদের ঢল নেমেছে। ইমারজেন্সি ইউনিটের এক চিকিৎসক বলেছেন, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই ওই ভুক্তভোগী। আমি দেখেছি, কয়েকজন মা আঘাতপ্রাপ্ত সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসছেন। কিছু কিছু পিতা-মাতা সন্তানদের নিয়ে এতই চিন্তিত যে, তারা বুঝতেই পারেনি, তারা নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত। শুক্রবার ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর মাধ্যমে যুদ্ধের সূত্রপাত। জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। সোমবার সকালে ইরানের কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, ১ হাজার ২৭৭ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২২৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। নতুন করে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর এক কমান্ডার রয়েছেন। মোট মৃত্যু পৌঁছেছে ২২৮ জনে।
ইমাম খোমেনি হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। নিবিড় পরিচর্যা বিভাগে আরও বিছানা সংযুক্ত করা হয়েছে। ছোটখাটো আঘাত পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তেহরান ভিত্তিক এক সাংবাদিক বলেছেন, অসুস্থ ও প্রকৃত মৃতের সংখ্যা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিবিড় পরিচর্যা বিভাগের কর্মীদের বলা হয়েছে, তারা যেন আহত বা মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার না করে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র হোসেন কেরমানপোর বলেছেন, আহতদের ৯০ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক।
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। বলেছেন, আমরা ইরান সরকারের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি। উল্লেখ্য, ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায় আঘাত হেনেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৭ ইসরাইলি। এর মধ্যে তিনজন শিশু। এদিকে ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইল কেরমানশাহের একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সোমবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। কারাজের এক চিকিৎসক বলেছেন, অনেকে নিহত হয়েছেন। তবে আমরা জানিনা আসল সংখ্যা কত। আমরা শুধু চেষ্টা করছি যত বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচানো যায়। আরও বলেছেন, আমাদের খাবার খাওয়ারও সময় নেই। প্রতিদিন মনে হয়, এই বোধ হয় আরও মৃতদেহ হাসপাতালে এলো। সোমবার যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আবেদন করার জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইরান। তবে বাস্তবে সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।