বিশ্বজমিন
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিমান হামলায় দুই সাংবাদিক নিহত, ‘যুদ্ধাপরাধ’
মানবজমিন ডেস্ক
(৫ ঘন্টা আগে) ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:৫০ অপরাহ্ন

সোমবার সরাসরি সম্প্রচারের সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি)-এর প্রধান কার্যালয়ে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে সেখানে কমপক্ষে দু’জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাদের একজন নিউজ এডিটর এবং অন্যজন ‘এমপ্লয়ি’।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এই হামলার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সহ শীর্ষ পর্যায় থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তারা দাবি করতে থাকেন ইরানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ‘প্রপাগান্ডা’ যন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছেন। হামলার আগে ইসরাইলি সেনাবাহিনী রাজধানী তেহরানের ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বলে। নিজের বাড়িতে অবস্থান করবেন, যেন সেই অধিকারটুকুও হারিয়েছেন তারা। ইসরাইল কোথায় কাকে থাকতে দেবে, কাকে দেবে না, এটা যেন তাদেরই কর্তৃত্ব।
বিবিসি তার খবরে বলছে, ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি)-এর একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালীন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং স্টুডিওর আলো নিভে গেলে সম্প্রচার মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে তারা ইরানি সরকারের ‘একটি যোগাযোগ কেন্দ্র’ লক্ষ্যবস্তু করেছে। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসরাইলের সতর্কতা এবং এই বোমা হামলার পর তেহরানজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বহু মানুষ শহর ছাড়ছে- এমন ছবি দেখা গেছে। উত্তরের একটি মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় সোমবার। রাতেও এ দৃশ্য অব্যাহত ছিল। এর আগে ইসরাইলি বাহিনী ঘোষণা করে, তারা তেহরানের আকাশসীমায় ‘পূর্ণ কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার রাতে ও ভোরে ইরান চারটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ফলে ইসরাইলের উত্তরের ও মধ্যাঞ্চলের এলাকাগুলোতে কমপক্ষে আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত ও ১২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। একই সময়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে অন্তত ২৪ জন নিহত এবং ৫৯২ জন আহত হয়েছে। সোমবার দুপুরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ফারসি ভাষার মুখপাত্র তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ৩-এর বাসিন্দাদের অবিলম্বে এলাকা ছাড়তে বলে। জানায়, সেখানে সামরিক অবকাঠামো রয়েছে। এর আশপাশে বসবাসকারী মানুষের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর আইআরআইবি-এর কার্যালয়ে ইসরাইলি হামলার দৃশ্য লাইভ সম্প্রচারে ধরা পড়ে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর সংবাদ পাঠিকা সাহার এমামি বলেন, ‘আপনারা যে শব্দ শুনলেন তা হচ্ছে আইআরআইবি-তে জিয়োনিস্ট বাহিনীর স্পষ্ট আগ্রাসনের প্রমাণ।’
এরপর আরও বড় এক বিস্ফোরণে স্টুডিও কেঁপে ওঠে এবং এমামি সম্প্রচার বন্ধ করে চলে যান। কয়েক মিনিটের জন্য সম্প্রচার বন্ধ থাকার পর খবরের বুলেটিন প্রচার শুরু হয়। এরপর আইআরআইবি প্রধান পেইমান জেবেলি রক্তমাখা কাগজ হাতে টিভিতে এসে বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’
ফার্স নিউজ জানিয়েছে, আইআরআইবির কর্মী মাসুমেহ আজিমি এই হামলায় নিহত হয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকাই হামলাটিকে ‘জঘন্য অপরাধ’ এবং ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছে, তারা একটি যোগাযোগ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে- যা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক কার্যক্রম চালাতে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ আইআরআইবি’কে ইরানি শাসনের ‘প্রচার ও উসকানি কেন্দ্র’ বলে অভিহিত করেছে। এছাড়া ইরানের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তেহরানের শাহিদ বাঘেরি জেলায় ইসরাইলি হামলায় তাদের একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তিনজন সেবাকর্মী নিহত হন। তারা এক বিবৃতিতে বলেন, এ ঘটনা কেবল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং মানবতা ও নৈতিকতার ওপর সরাসরি আঘাত।
তেহরানের এক বাসিন্দা জানান, ইসরাইলি বিমান হামলা এবং ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে আসা বিস্ফোরণের শব্দ ‘একটানা’ শোনা যাচ্ছে। তিনি ম্যাসেজে লিখেছেন, অনেকে তেহরান ছেড়েছে। কিছু দোকানপাট বন্ধ দেখা যাচ্ছে। তবে বেকারিগুলোতে ভিড় লেগে আছে, মানুষ আতঙ্কে খাদ্যপণ্য কিনছে। তেহরানে এখনকার অবস্থা বোঝাতে ‘ভয়’ আর ‘আতঙ্ক’ যথেষ্ট। তবুও আমি তেহরান ছাড়তে চাই না। আরেক বাসিন্দা জানান, তারা পরিবারের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও গয়নাগাটি নিয়ে শনিবার সকালেই তেহরান ছেড়েছেন। তার ভাষায়- আমি ঘর পরিষ্কার করে বের হওয়ার সময় ১৫ মিনিট কেঁদেছি। তারপর চলে এসেছি। দুই শিশু সন্তানের এক মা বলেন, তিনি বাড়িতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ভাষায়-আমার এখন আর শক্তি নেই সব ছেড়ে চলে যাওয়ার। আমি অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি। যদি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে আমার ইচ্ছা আমার সন্তানদের সঙ্গে এখানেই শেষ হোক।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, ইসরাইলি বাহিনী সোমবার পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফারাবি হাসপাতালে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় হাসপাতালের অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন রোগী আহত হয়েছেন।