ঢাকা, ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

কুষ্টিয়ায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্তে ধীরগতির অভিযোগ

এ.জে. সুজন, কুষ্টিয়া থেকে
১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

গত বছরের ১৭ই নভেম্বর খুলনা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ১৬ জন খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা ভার্সিটি ও কলেজে থাকাকালীন কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আল-ওয়াজিউর রহমানকে প্রধান করে যশোর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শিহাব হোসেনসহ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খুলনা বিভাগীয় অফিস কর্তৃক তাদের এ দায়িত্ব দেয়।
জানা গেছে, অভিযুক্তদের শুনানির জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমানকে। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও তদন্তের বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। মে মাসের মাঝামাঝিতে তদন্তের কাজ শুরু করেন এই কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ দোসরদের পুনরায় সুসংগঠিত করে দেশকে আবার অস্থিতিশীল করে তুলতে এ ধরনের তদন্ত চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডার ওই ১৬ জন কর্মকর্তা অল্পদিনের মধ্যেই শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বদলি বাণিজ্য ছিল তাদের অন্যতম ব্যবসা। 
অভিযুক্তরা হলেন- আশরাফুজ্জামান সোহাগ (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তালা, কলারোয়া) খুলনা বিএল কলেজের হল শাখার ছাত্রলীগ নেতা। মো. রবিউল ইসলাম রবি (ওসএসএসডি ঝিনাইদহ সদর) খুলনা খান জাহান আলী থানার সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের ভাতিজা হিসেবে পরিচিত। মো. আক্তারুজ্জামান (খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওসেসলএসডি ডুমুরিয়া) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। মো. কাওসার আলী (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চিতলমারি)। খাদ্য বিভাগে গুঞ্জন রয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস ও ভুয়া ঠিকানায় চাকরিপ্রাপ্ত। অনিন্দ্য কুমার দাস (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দাকোপ) বিএল কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। বাদল কুমার বিশ্বাস (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বটিয়াঘাটা অতিরিক্ত দায়িত্বে সরকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক খুলনা)। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিল এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। রাশেদ আহম্মেদ আল রিপন (খুলনা মহানগরী খাদ্য নিয়ন্ত্রক)। আওয়ামী শাসন আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। ইসমাইল আদম (খাদ্য পরিদর্শক ও ওসএলএসডি) বর্তমান খুলনাতে কর্মরত আছে। খুলনা মহানগরী ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার ছিল। মোছা. সাবিনা ইয়াসমিন (খাদ্য পরিদর্শক ওসেল ওসএলএসডি বটিয়াঘাটা)। আওয়ামী শাসন আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। 
আরও উল্লেখ করা হয়, মনিরুজ্জামান মুন্না (খাদ্য পরিদর্শক ওসএলএসডি বসন্তপুর) আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ’র নিকট আত্মীয়। সুশান্ত মজুমদার (খাদ্য পরিদর্শক, ওসএলএসডি জগতি) মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। মোছা. মমতাজ বেগম (খাদ্য পরিদর্শক খুলনা মহানগরী) মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়োগপ্রাপ্ত। হুমায়ুন কবির (খাদ্য পরিদর্শক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। তরুণ বালা (খাদ্য পরিদর্শক ওসএলএসডি মাগুরা সদর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাই। পঙ্কজ কুমার প্রামাণিক (উপ- খাদ্য পরিদর্শক) আওয়ামী পরিবারের সন্তান। 
এদিকে, কুষ্টিয়ার সদর গোডাউনের সাবেক খাদ্য পরিদর্শক ও ওসএলএসডি ইসমাইল আদম কুষ্টিয়ায় থাকাকালীন সময়ে খুলনার সাবেক এমপি শেখ হেলাল এবং শেখ তন্ময়ের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে গোডাউন হাতের মুঠোয় রেখে ইচ্ছামতো মানহীন চাল সংগ্রহ করতো। প্রত্যেক মৌসুমে, মিল মালিকদের সঙ্গে সখ্যতা করে মিল থেকে নিম্নমানের চাল গোডাউনে সরবরাহ করতো। এ ছাড়াও গোডাউনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। কিন্তু তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। এ ছাড়া সে সাবেক ছাত্রলীগের একজন সশস্ত্র ক্যাডার। 
আরেকজন কুষ্টিয়া জগতি গোডাউনের সাবেক খাদ্য পরিদর্শক সুশান্ত মজুমদার। সেও আওয়ামী শাসন আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। বাগেরহাটে বাড়ি এই পরিদর্শক ছাত্র জীবনের সেই হেলালের সশস্ত্র ক্যাডার ছিল। কুষ্টিয়া থাকাকালীন সময়ে এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আল-ওয়াজিউর রহমান জানান, তদন্ত চলছে। তিন মাস আগে তদন্তের জন্য চিঠি আসলেও তিনি দুই আড়াই মাস খুবই অসুস্থ ছিলেন বলে তদন্তের কাজে হাত দিতে পারেননি। তদন্ত চলমান থাকায় এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status